Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

তর্জমা-সহ পোস্টার, নজরে সংগঠিত ছক

আদালতেরই এক আইনজীবী বলছেন, পোস্টার সাঁটানোর মূল উদ্দেশ্যই হল প্রচার। পোস্টার দেখেই সিংহভাগ আইনজীবী তেতে যান। লিঙ্ক শেয়ারকারী দু’জনকে দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া শুরু হয়।

ফেসবুক লিঙ্ক শেয়ার করে সাসপেন্ড ব্যারাকপুরের এক আইনজীবী এবং তাঁর জুনিয়র। প্রতীকী ছবি।

ফেসবুক লিঙ্ক শেয়ার করে সাসপেন্ড ব্যারাকপুরের এক আইনজীবী এবং তাঁর জুনিয়র। প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০৪:৪৪
Share: Save:

শেয়ার করেছিলেন একটা উর্দু খবরের লিঙ্ক। তার পরে দু’দিন কেটে গিয়েছে। পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরে এসেছেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। আচমকা সেই লিঙ্কের বঙ্গানুবাদ-সহ পোস্টারে ছেয়ে গেল ব্যারাকপুর আদালত। তার জেরে ছ’মাস সাসপেন্ডও করা হল এক আইনজীবী এবং তাঁর জুনিয়রকে।

যে লিঙ্কটি শেয়ার করা হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ এবং ‘ভারতীয় পাইলট’ এই দুটি কথা। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে, ওই লিঙ্ক শেয়ার করা অনৈতিক বা বেআইনি হলে, আইনজীবীরা কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নিলেন না? কেন পুলিশি অভিযোগ বা অন্য কোনও অভিযোগ হল না? রাতারাতি কারা কী উদ্দেশ্যে বঙ্গানুবাদের পোস্টার সাঁটালেন?

ওই আদালতেরই এক আইনজীবী বলছেন, পোস্টার সাঁটানোর মূল উদ্দেশ্যই হল প্রচার। পোস্টার দেখেই সিংহভাগ আইনজীবী তেতে যান। লিঙ্ক শেয়ারকারী দু’জনকে দেশদ্রোহী বলে দাগিয়ে দেওয়া শুরু হয়।

এ ক্ষেত্রে ব্যারাকপুর বার অ্যাসোসিয়েশনের আরও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন আইনজীবী তথা কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ। শুধুমাত্র বিক্ষোভ বা মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে সাসপেনশনের মতো সাজা দেওয়া অমানবিক। তিনি বলেন, ‘‘ফেসবুক শেয়ারের ইতিবৃত্ত আরও তলিয়ে দেখা দরকার ছিল। যদি মনে হয়, কেউ অন্যায় করেছেন, তা হলে নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া যেত। তা না করে পেটে লাথি মারা কাঙ্খিত নয়।’’

ওই দুই আইনজীবীই বলছেন, তাঁরা শুধুমাত্র লিঙ্কটি শেয়ার করেছেন। বাংলা তর্জমা পরে করা হয়েছে। এবং সেটিরই স্ক্রিনশট নিয়ে পোস্টার তৈরি করা হয়েছে।

অভিযোগ, বাংলা তর্জমা এবং পোস্টার সাঁটানোর পিছনে রয়েছেন ওই আদালতেরই চার-পাঁচ জন আইনজীবী। তাঁদের পিছনে একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থক এক আইনজীবীরও উস্কানি ছিল। ভোটের বাজারে উগ্র জাতীয়তাবাদ আমদানি করে বিদ্বেষ ছড়ানোই ছিল লক্ষ্য।

প্রযুক্তিবিদেরা বলছেন, ফেসবুকে সড়গড় ব্যক্তি মাত্রেই জানেন, অন্য ভাষার লিঙ্ক এলেই গুগ্‌ল ট্রান্সলেটরে তার তর্জমা করা যায়। এবং যে কেউ তা করতে পারেন। পুলিশ বলছে, এই গুগ্‌ল ট্রান্সলেটরের তর্জমার জন্য নিরীহ পোস্ট থেকে অশান্তি ছড়াতে পারে। তার জন্য সকলেরই চোখ খোলা রাখা উচিত— যাঁরা শেয়ার করছেন, এবং যাঁরা তা দেখছেন।

অরুণাভবাবু বলছেন, ‘‘দেশের প্রধানমন্ত্রী যে ভাষায় এবং সুরে কথা বলছেন, তাতে কতিপয় লোক এমন পন্থা নেবে, তাতে আর আশ্চর্যের কী আছে? এ ভাবেই ‘রিলাকট্যান্ট ফান্ডামেন্টালিস্ট’ বা অজান্তে মৌলবাদী তৈরি হয়।’’

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (‌জোন ১) কে কান্নন বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার-অপব্যবহারের খুঁটিনাটি নিয়ে আমরা কর্মশালা করি। পরের কর্মশালায় বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে জানাব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Controversy Facebook Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE