অর্চনাদেবীর ছবি দিয়ে ছাপানো সেই ক্যালেন্ডার। ছবি: কল্লোল প্রামাণিক।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, নজরুল ইসলামের পরে অর্চনা ঘোষ সরকার। নদিয়া জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ প্রকাশিত ক্যালেন্ডারে সংসদের সভাপতি অর্চনাদেবী তাঁর নিজের ছবি ছাপানোয় জেলায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
ক্যালেন্ডারের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, অর্চনাদেবী জাতীয় শিক্ষক হিসেবে রাষ্টপতির হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন। তাঁরই নির্দেশে সেই ক্যালেন্ডার পৌঁছে গিয়েছে জেলার সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেই ক্যালেন্ডার যাতে প্রত্যেক স্কুলের দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখা হয়, সে ব্যবস্থা পাকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন খোদ অর্চনাদেবীই!
ফি বছর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃক প্রকাশিত ক্যালেন্ডারে শোভা পায় মণীষীদের ছবি। বছর দু’য়েক আগে সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সেই ক্যালেন্ডারে দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ছবি ছাপানো হয়েছিল। এ বছর প্রশ্ন উঠছে, সরকারি টাকায় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি কি করে ক্যালেন্ডারে নিজের ছবি ছাপাতে পারেন? এ কাজে দোষের কিছু দেখছেন না অর্চনাদেবী। তিনি বলছেন, ‘‘এতে অন্যায়ের কী আছে? রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পুরস্কার নিচ্ছি। সেই ছবি দেখে অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা অনুপ্রাণিত হবেন। তাঁরা আমার মতো হওয়ার চেষ্টা করবেন।’’
কিন্তু অর্চনাদেবী ‘রোল মডেল’ হতে পারেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষকদের একাংশই। মাস সাতেক আগে কৃষ্ণনগরে মিশনারি পরিচালিত কুইন্স গার্লস হাই স্কুলে নিজের মেয়েকে শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ করতে প্রভাব খাটিয়েছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ করে ওই পদের অন্য এক আবেদনকারী কলকাতা হাইকোর্টে মামলাও দায়ের করেছেন। সে মামলা চলছে। সেই বিতর্কের রেশ না মিটতেই ফের ক্যালেন্ডার বিতর্কে জড়িয়ে গেলেন অর্চনাদেবী।
বিরোধীরা বলছেন, এ আর নতুন কী? নিজেকে জাহির করতে মুখ্যমন্ত্রীর দেখানো পথেই তো হেঁটেছেন অর্চনাদেবী! নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নদিয়া জেলার সম্পাদক চূড়ামণি দাস বর্মন বলেন, ‘‘মণীষীদের জায়গায় প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতির ছবি, এটা তৃণমূল জমানাতেই সম্ভব।’’
জেলা প্রাথমিক সংসদ প্রতি বছর শিক্ষাবর্ষের শুরুতে সারা বছরের ছুটির তালিকা দিয়ে ক্যালেন্ডার ছাপায়। রাজ্য সরকারের অনুদানেই তা ছাপানো হয়। প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সদস্যেরা আলোচনা করে ঠিক করেন, ক্যালেন্ডারে কোন বছর কোন মণীষীর ছবি ছাপানো হবে। সংসদের একটি সূত্রের দাবি, এ বছর অর্চনাদেবী ইচ্ছা প্রকাশ করেন, তাঁর নিজের ছবিই ছাপানো হবে ক্যালেন্ডারে। সংসদের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘উনি চাইছিলেন, ওনার রাষ্ট্রপতির থেকে পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি প্রচার করতে। তাই ক্যালেন্ডারে নিজের ছবি ছাপানোর জন্য রীতিমতো জেদ করেন। আমরা কী করতে পারি?’’ জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের এক আধিকারিক জানান, প্রায় তিন হাজার ক্যালেন্ডার ছাপানো হয়েছে।
জেলার এক অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক বলছেন, ‘‘এই ক্যালেন্ডার অফিসে টাঙিয়ে রাখতেই অস্বস্তি লাগছে। কিন্তু কিছু করার নেই। কে বিপদে পড়তে চায় বলুন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy