মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে সভা জাঙ্গিপাড়ায়। ছবি দীপঙ্কর দে
কেউ মারা গেলে ওঁদের ডাক পড়ে। ওঁরা পৌঁছে যান মৃতের বাড়িতে বা হাসপাতালে, শ্মশানে। মৃতদেহ থেকে তুলে নেন চোখজোড়া। সেই কর্নিয়া বসানো হয় দৃষ্টিহীন মানুষের চোখে।
এই কাজে ছেদ ফেলেছে করোনাভাইরাস। এর সংক্রমণের ভয়ে কর্ণিয়া সংগ্রহ কার্যত বন্ধ। ফলে বহু দৃষ্টিহীন মানুষ কর্নিয়ার অপেক্ষায় দিন গুণছেন।
কলকাতার রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি (আরআইও) সূত্রের খবর, বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে প্রতি মাসে শ’খানেক কর্নিয়া আসে। তার অর্ধেক উপযুক্ত থাকে। গোটা চল্লিশ কর্নিয়া দৃষ্টিহীনের চোখে প্রতিস্থাপিত হয়। তাঁরা দৃষ্টি ফিরে পান। অর্থাৎ গত পাঁচ মাসে প্রায় দু’শো জন সেই সুযোগ পেলেন না কর্নিয়া সংগৃহীত না হওয়ায়।
আরআইও-র অধিকর্তা অসীম ঘোষের বক্তব্য, ‘‘কর্নিয়াজনিত কারণে দৃষ্টিহীন বহু মানুষ অপেক্ষায় আছেন। কর্নিয়া এলেই আমরা তাঁদের চোখে প্রতিস্থাপন করব।’’ তিনি জানান, সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী মৃত্যু সংশাপত্রে ‘নন-কোভিড’ লেখা থাকলেই তাঁর কর্নিয়া নিতে তাঁরা প্রস্তুত। মরনোত্তর চক্ষুদান নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে বুধবার আয়োজিত ওয়েবিনারে এ নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই ব্যবস্থা অবশ্য খুব সহজ নয় বলে সংশ্লিষ্ট অনেকেরই অভিমত। তাঁদের বক্তব্য, এই মূহুর্তে সংগৃহীত কর্নিয়া আরইও-তে পৌঁছনোও সমস্যার।
মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে সচেতনতা ছড়াতে ২৫ অগস্ট থেকে ৯ সেপ্টেম্বর ‘অন্ধত্ব দূরীকরণ পক্ষ’ পালিত হয়। গত কয়েক বছর ধরে রাজ্যে কর্নিয়া সংগ্রহে এক নম্বরে শ্রীরামপুর সেবাকেন্দ্র ও চক্ষুব্যাঙ্ক। বিশেষ এই পক্ষে তারা নানা কর্মসূচি নেয়। করোনা-কালে তা হয়নি। সংগঠনের সদস্যরা জানান, ২০১৯ সালে তাঁরা ৬৩২টি কর্নিয়া সংগ্রহ করেছিলেন। তার আগের বছর ৬০৪টি। এ বার সংগৃহীত হয়েছে ১৫৬টি। লকডাউনের সময় থেকেই ওই কাজ বন্ধ। সংগঠনের সদস্য সিদাম সাহা, বরুণ গঙ্গোপাধ্যায়রা বলছেন, ‘‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই সবাই মিলে ফের ঝাঁপিয়ে পড়ব।’’
একই বক্তব্য ‘রাজবলহাট কালচারাল সার্কেল’ ও ‘সেবায়ন’-এর সদস্যদের। তাঁরাও শেষ কর্নিয়া সংগ্রহ করেছেন মার্চে। অন্ধত্ব দূরীকরণ পক্ষপালনে তাঁরা ছোট ছোট বৈঠক করছেন। জনা দশেকের সাইকেল-মিছিল হয়েছে। মরণোত্তর চক্ষুদান নিয়ে অঙ্কন প্রতিযোগিতা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে। উদ্যোক্তাদের তরফে সুরজিৎ শীল বলেন, ‘‘করোনা সব ভেস্তে দিল। এখন স্যোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করব। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কর্নিয়া সংগ্রহ তো হবেই, যত বেশি সম্ভব পথসভা, মিছিল করব।’’
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ভারতে ৩০ লক্ষাধিক মানুষ কর্নিয়াজনিত কারণে দৃষ্টিহীন। দেশে বছরে ৮০ লক্ষেরও বেশি মানুষ মারা যান। অথচ ৪০-৪৫ হাজারের বেশি কর্নিয়া মেলে না। বহু জায়গায় সে ভাবে সচেতনতাই গড়ে ওঠেনি। অজ্ঞতা, কুসংস্কারের কারণে অনেকে প্রিয়জনের চোখ দিতে চান না। করোনায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।
অসীমবাবু বলেন, ‘‘মৃতের পরিবার চক্ষুদানে ইচ্ছুক হলে দ্রুত করোনা পরীক্ষা করা হোক। নেগেটিভ হলে চিকিৎসক মৃত্যু-সংশাপত্রে তা লিখে দিন। সেই কর্নিয়া সংগ্রহ করা হোক। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এটা করা সম্ভব। এই ব্যবস্থা করা গেলে দৃষ্টিহীনের চোখে আলো ফেরানো যাবে। তাঁরা অপেক্ষায় আছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy