Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

গুজবে নাকাল ডাক্তারের পরিবার

পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’’

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৬:১০
Share: Save:

করোনা নিয়ে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় গুজব ছড়িয়ে আতঙ্ক তৈরি করার অভিযোগ উঠছে বারবার। ইতিমধ্যে পূর্ব বর্ধমানের মেমারিতে গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে। এ বার ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ছড়িয়ে পড়া গুজবের জেরে ব্যতিব্যস্ত হওয়ার অভিযোগ করলেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক। গুজবের কারণে ভিন্‌ জেলায় থাকা তাঁর পরিবারকে কার্যত একঘরে করে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ শ্রীদীপ মণ্ডল নামে ওই চিকিৎসকের। বিষয়টি নিয়ে পুলিশে অভিযোগও করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘ঘটনার কথা শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি। প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’’ জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়, গুজব না ছড়ানোর জন্য বারবার প্রচার করা হচ্ছে। তা সত্ত্বেও যারা এই ধরনের কাজ করবে, চিহ্নিত করে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কমিউনিটি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শ্রীদীপবাবু প্রায় তিন বছর ধরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত। তাঁর বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার হাসনাবাদের বাদামতলা এলাকায়। তাঁর বাবা হিমাংশুশেখর মণ্ডলও পেশায় চিকিৎসক। শ্রীদীপবাবু জানান, মাস দু’য়েক আগে শেষ বার তিনি বাড়ি গিয়েছিলেন। তার ‌পর থেকে বর্ধমানেই রয়েছেন। এখন প্রতিদিন দু'বেলা তিনি হাসপাতালের ‘ফ্লু ক্লিনিকে’ চিকিৎসা করছেন৷ কিন্তু দিন তিনেক আগে হঠাৎই ‘সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে’ একটি ‘পোস্ট’ ছড়িয়ে পড়ে। সেটিতে দাবি করা হয়, ‘হাসনাবাদ বাদামতলা হিমাংশু ডাক্তারের ছেলে (কানাডা থেকে বাড়ি ফিরেছে) করোনা ধরা পড়েছে। পুলিশ তুলে নিয়ে গিয়েছে’। এই খবর এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার আর্জিও জানানো হয় ‘পোস্ট’টিতে।

শ্রীদীপবাবু অভিযোগ করেন, এর পরেই হাসনাবাদে তাঁর বাবা হিমাংশুবাবু ও মা অনিতাদেবীর উপরে কার্যত বাড়ি থেকে বেরনোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন স্থানীয় কিছু লোকজন। বাজারহাট করতে দেওয়া হচ্ছে না। তাঁকে ফোন করেও বিরক্ত করছেন অনেকে। হিমাংশবাবু বলেন, ‘‘বারবার অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে আমাদের। দোকানে জিনিস কিনতে গেলে টাকা নেওয়া, জিনিস দেওয়াতেই আপত্তি জানানো হয়েছে।’’ শ্রীদীপবাবুও বলেন, ‘‘আমি কানাডা যাইনি, করোনা আক্রান্তও নই। বরং ছুটি বাতিল করে চিকিৎসা করছি। কিন্তু এমন গুজবের জেরে আতঙ্কে রয়েছি।’’ তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে হাসনাবাদ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। তিনি নিজেও এ নিয়ে তাঁর আতঙ্কের কথা লিখিত ভাবে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের কাছে জানিয়েছেন। তাঁর দাবি, যারা এই ধরনের গুজব ছড়িয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা নিক।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল বলেন, ‘‘বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। যাঁরা অক্লান্ত ভাবে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা করে চলেছেন, তাঁদের নিয়ে এই ধরনের গুজব একেবারে কাম্য নয়। প্রশাসনকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার অনুরোধ করব।’’ বর্ধমান শহরের প্রবীণ চিকিৎসক বলেন গীষ্পতি চক্রবর্তীও বলেন, ‘‘এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত অনভিপ্রেত। প্রশাসন কড়া হাতে নিয়ন্ত্রণ করুক।’’

জেলা পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগের আশ্বাস, বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE