Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

করোনা: ফেরার রাস্তাও বন্ধ, হস্টেলেই আটকে অনেকে

ফেরার পথে।—ছবি পিটিআই।

ফেরার পথে।—ছবি পিটিআই।

মধুমিতা দত্ত ও আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২০ ০৫:২১
Share: Save:

করোনা মোকাবিলায় মুখ্যমন্ত্রী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করার পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হস্টেল ফাঁকা হতে শুরু করেছে ঠিকই। কিন্তু বাড়ি ফেরার রাস্তা বন্ধ থাকায় অনেকে, বিশেষত বিদেশি পড়ুয়ারা হস্টেলে থেকে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কলকাতা বা আশেপাশে ‘লোকাল গার্জিয়ান’ বা আত্মীয়স্বজনের কাছেও চলে যাচ্ছেন কেউ কেউ।

সীমান্ত বন্ধ। বিমানও বাংলাদেশে যাচ্ছে না। আতান্তরে পড়েছেন বাংলাদেশি পড়ুয়ারা। ঢাকার তবসুম খান বাংলা নিয়ে পড়েন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। মঙ্গলবার হস্টেলে বসে তিনি বললেন, ‘‘বাড়ি যেতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু যাওয়ার পথ নেই। প্রথমে ভেবেছিলাম, হস্টেলেই থাকব। কিন্তু হস্টেল ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। লোকাল গার্জিয়ানের কাছে থাকতেও কিছু অসুবিধা আছে।’’ খুবই চিন্তিত তবসুম। লেডি ব্রেবোর্নের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার বলেন, ‘‘এই অভূতপূর্ব পরিস্থিতি বিশ্ব জুড়ে। আমরা তার বাইরে নই। ক্লাসে না-এলেও মেয়েরা পড়াশোনা চালিয়ে যাক। শিক্ষিকাদের সব রকম সাহায্য ওরা পাবে।’’ ঢাকার কাছেই রাজবাড়ি জেলার স্বস্তিকা দাশগুপ্ত এই কলেজে পড়ছেন মাইক্রোবায়োলজি নিয়ে। তিনি যাচ্ছেন স্থানীয় অভিভাবকের কাছে। হিমাচল প্রদেশের ছাত্রী অপর্ণা দাশগুপ্ত ব্রেবোর্নে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়েন। এত দিন ছুটি থাকায় এ বার বাড়ি চলে যেতে চাইছেন তিনি।

মৌলানা আজাদ কলেজে পদার্থবিদ্যার ছাত্র মজিদ কাইউম লোন কিন্তু বাড়ি যেতে চান না। কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার শেষ প্রান্তে তাঁর বাড়ি। মজিদ জানান, জম্মু পর্যন্ত চলে যেতে পারেন, কিন্তু তার পরে রাস্তা খুবই খারাপ। ইন্টারনেট সংযোগও খুব ভাল নয়। অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্ত জানান, হস্টেলে ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। শুধু মজিদ রয়েছেন। কলেজের মধ্যে তাঁর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন অব স্টুডেন্টস রজত রায় জানান, তাঁদের হস্টেল থেকে ৮০% আবাসিকই চলে গিয়েছেন। কিন্তু রয়ে গিয়েছেন অনেক বাংলাদেশি। ফিল্ম স্টাডিজ়ের পড়ুয়া মহম্মদ সিফাত হাসান জানান, সীমান্ত বন্ধ থাকায় হস্টেলে ১৫ বাংলাদেশি রয়ে গিয়েছেন। আছেন সোমালিয়া, লেসোথো, নাইজেরিয়ার বেশ কিছু পড়ুয়াও। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলবাসী সাত বাংলাদেশি পড়ুয়া বাড়ি যেতে পারেননি। রেজিস্ট্রার আমজাদ হোসেন জানান, হস্টেল ফাঁকা। বাংলাদেশি পড়ুয়াদের আলাদা করে কোথাও রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।

শিবপুর আইআইইএসটিতে ছুটি ৩১ মার্চ পর্যন্ত। ছাত্র সেনেটের সম্পাদক সোনুকুমার শর্মা জানান, অন্তত দেড় হাজার আবাসিক হস্টেলে রয়েছেন। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সোনুও শিলিগুড়ির বাড়িতে ফিরছেন না। তাঁর যুক্তি, ক্যাম্পাসেই হস্টেল। ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার মিলছে। সর্দি-কাশি হলে আইডি হাসপাতালে পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে। ভাগলপুরের আমন কুমার ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন। ক্যাম্পাসে থেকে গিয়েছেন তিনি। একই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ভুবনেশ্বরের গডউইন খালকো, পাটনার শোয়েব আনোয়ার। তাঁদের বক্তব্য, বাড়ি যাওয়া-আসার পথে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কা অনেক বেশি।

বাংলাদেশের ছয় পড়ুয়া এ দিন বিশ্বভারতীর হস্টেল ছাড়েন। আজ, বুধবার পেট্রাপোল দিয়ে তাঁদের বাংলাদেশে ফেরার কথা। বিশ্বভারতীর ফরেন স্টুডেন্ট সেল সূত্রের খবর, শর্তসাপেক্ষে বিদেশি পড়ুয়াদের যেতে দেওয়া হচ্ছে। অঙ্গীকারপত্রে লেখা থাকছে: তাঁরা স্বেচ্ছায় বাড়ি ফিরছেন। যাত্রাপথে কোনও সমস্যা হলে বিশ্বভারতী দায়ী নয়। কোনও কারণে নিজেদের দেশে পৌঁছতে না-পারলেও তাঁরা ফের পঠনপাঠন শুরুর আগে হস্টেলে ফিরতে পারবেন না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Students Jadavpur University IIEST
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE