Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
টিকিট হাতেই, আটকে নুররা
Coronavirus

ঘরে ফিরতে চাই, আর্তি শ্রমিকদের

তাতে ফলও মিলেছে। উদ্বিগ্ন শ্রমিকদের বিষয়টি এরমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম মুর।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
চাঁচল শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২০ ০৪:৪২
Share: Save:

‘‘আমাদের কাছে টাকা নেই। খাবারও ফুরিয়ে গিয়েছে। কাজও নেই। লকডাউনের জেরে কোম্পানি বন্ধ। বন্ধ অন্যান্য কাজও। কিন্তু ফেরার উপায় নেই! বন্ধ ট্রেন, উড়ান’’— সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই বার্তা দিয়েছেন ভিন্‌ রাজ্যে থাকা মালদহের চাঁচল মহকুমার শ্রমিকেরা। তাঁরা যাতে বাড়ি ফিরতে পারেন সে জন্য আপাতত ভরসা সোশ্যাল মিডিয়া। তাতে ভিডিয়ো পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানাচ্ছেন ভিন্‌ রাজ্যে ঘরে আটকে থাকা শ্রমিকদের অনেকেই।

তাতে ফলও মিলেছে। উদ্বিগ্ন শ্রমিকদের বিষয়টি এরমধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ তথা জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম মুর।

মৌসম মঙ্গলবার বলেন, ‘‘বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছি। ওঁদের এই মুহূর্তে ফেরানো সম্ভব নয়। তবে রাজ্যের তরফে বিষয়টি দেখা হচ্ছে। যে সমস্ত রাজ্যে ওই শ্রমিকেরা আটকে রয়েছেন সেই রাজ্যের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ওঁদের যাতে খাদ্য সঙ্কট না হয় আপাতত সেটাই দেখার।’’

সূত্রের খবর, করোনা পরিস্থিতির জেরে এর মধ্যে জেলায় ফিরেছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। কাজ বন্ধ হওয়ার পরে অনেকেই ফেরার জন্য টিকিট কেটে রেখেছিলেন। কিন্তু প্রথমে ট্রেন বন্ধ, তার পর লকডাউন। ফলে রাজস্থান, দিল্লি, মুম্বইয়ে আটকে পড়েছেন চাঁচল, হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়ার বহু শ্রমিক। মঙ্গলবার থেকে লকডাউনের মেয়াদ আরও তিন সপ্তাহ বেড়ে যাওয়ায় নতুন করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তাঁরা। কী ভাবে, কবে বাড়ি ফিরবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার পাশাপাশি করোনার জেরে পরিবারের লোকজনদের নিয়েও উদ্বেগে তাঁদের দিন কাটছে। একই রকম উদ্বেগে ভিন্‌ রাজ্যে থাকা শ্রমিকদের পরিবারের লোকজনও।

তবে ওই শ্রমিকদের সোশ্যাল মিডিয়ায় আকুতি দেখে সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন তৃণমূল নেতাদের একাংশের পাশাপাশি বাসিন্দারাও। শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে সাহায্যের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারও শুরু হয়েছে।

হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূল নেতা বুলবুল খান বলেন, ‘‘ওই শ্রমিকদের কিছু টাকা পাঠানো হয়েছে। ওঁদের কী ভাবে সাহায্য করা যায় দেখছি।’’ মোথাবাড়ির তৃণমূল নেতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘‘ওঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করছি। যাতে ওঁদের অন্তত না খেয়ে মরতে না হয়।’’

হরিশ্চন্দ্রপুরের বাগমারা ও আশপাশের এলাকা থেকে রাজস্থানের জয়পুরে গিয়েছিলেন শতাধিক শ্রমিক। তাঁরা সেখানে একটি পোশাক তৈরির কোম্পানিতে কাজ করতেন। কিন্তু সেই সংস্থা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাগমারার শ্রমিক রাজেশ আলি এ দিন জয়পুর থেকে বলেন, ‘‘কোম্পানি বন্ধ হতেই বাড়ি ফেরার টিকিট কাটি। কিন্তু ট্রেন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। প্রত্যেকেই ঘরবন্দি। খাবারও নেই। টাকা নেই। এ ভাবে থাকলে তো সবাই মরে যাব।’’

চাঁচলের গৌড়িয়ার শ্রমিক নুর আহমেদ, সাবের আলিরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ, ‘‘হয় বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুন বা খাবারের বন্দোবস্ত করুন।’’

স্বামী নেই। একমাত্র ছেলে বাবুল শেখ আটকে রয়েছেন দিল্লিতে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ঘুম নেই ছবি বেওয়ার। তিনি বলেন, ‘‘ওর আয়েই দু’মুঠো খাবার জুটত। কিন্তু ছেলে ফোন করে বলেছে, কাজ বন্ধ, টাকা নেই। কবে ফিরবে তাও বলতে পারছে না। কি যে করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE