Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

করোনা যন্ত্রণা: মাকে বাইকে বেঁধে হাসপাতালে ছেলে

উপসর্গযুক্ত বৃদ্ধা মাকে বাইকে বসিয়ে নিজের সঙ্গে গামছায় বেঁধে ২০ কিলোমিটার দূরে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটিতে পৌঁছলেন ছেলে।

গামছায় মাকে বেঁধে হাসপাতালের পথে ছেলে। নিজস্ব চিত্র

গামছায় মাকে বেঁধে হাসপাতালের পথে ছেলে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০২০ ০৩:০৪
Share: Save:

পরিবারের দু’জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে বড়মায় ভর্তি। বাড়ির আর এক প্রবীণ সদস্যের তীব্র শ্বাসকষ্ট ও করোনার অন্য উপসর্গ দেখা দেওয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। চিকিৎসক তাঁকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন।

কিন্তু সেই রোগীকে নিয়ে যেতে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে পারল না কোলাঘাট ব্লক প্রশাসন। অগত্যা করোনা উপসর্গযুক্ত বৃদ্ধা মাকে বাইকে বসিয়ে নিজের সঙ্গে গামছায় বেঁধে ২০ কিলোমিটার দূরে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটিতে পৌঁছলেন ছেলে। সমাজ মাধ্যমে সেই সফরের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। এই ঘটনাকে সামনে রেখে সুর চড়িয়েছে বিজেপি-ও।

কোলাঘাট ব্লকের কোলা-২ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ওই বৃদ্ধার বড় ছেলে ও বউমা করোনায় আক্রান্ত হয়ে বড়মা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দিন কয়েক আগে বৃদ্ধারও করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ায় শুক্রবার সকালে মাকে কোলাঘাটের পাইকপাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান ছোট ছেলে। চিকিৎসক বৃদ্ধাকে পাঁশকুড়া সুপার স্পেশালিটিতে ‘রেফার’ করেন। দুর্ভোগের শুরু এর পরেই। মাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে মাখা খুঁড়েও অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করতে পারেননি ছোট ছেলে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক, বিডিও এমনকি কোলাঘাট বিট হাউস থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ।

আরও পড়ুন: রাজ্যে সংক্রমণের হার বেড়ে ১৩.৩%, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়াল ৩০ হাজার

শুক্রবার সকাল গড়িয়ে বিকেল, অ্যাম্বুল্যান্স মেলেনি। এ দিকে, অবস্থার অবনতি হতে থাকে বৃদ্ধার। উপায়ন্তর না দেখে নিজের বাইকে চাপিয়েই মাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ছোট ছেলে। বৃদ্ধার ছোট ছেলে বলছিলেন, ‘‘আর উপায় ছিল না। মাকে বাইকে বসিয়ে একটা গামছায় নিজের সঙ্গে বেঁধে নিই। তারপর বাইক চালিয়ে পাঁশকুড়া হাসপাতালে পৌঁছই।’’ তাঁর মতে, ‘‘করোনায় আক্রান্ত বা করোনার উপসর্গযুক্ত রোগীকে কেউ অ্যাম্বুল্যান্স নিতে রাজি হচ্ছে না। প্রশাসনকেই এর সমাধান করতে হবে।’’ সমস্যা স্বীকার করেই কোলাঘাটের বিডিও মদন মণ্ডল বলেন, ‘‘গত ১৪ জুন দুর্ঘটনায় আমাদের ব্লকের করোনা রোগী বহনকারী একটিমাত্র অ্যাম্বুল্যান্স নষ্ট হয়ে যায়। অ্যাম্বুল্যান্স চালকও মারা যান। আমরা নিশ্চয়-যান প্রকল্পের একটি অ্যাম্বুল্যান্স দিয়ে কোনওরকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছি। আরও কোনও অ্যাম্বুল্যান্স চালক কাজ করতে রাজি হচ্ছেন না। সে জন্যই ওই বৃদ্ধাকে অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়া যায়নি।’’

আরও পড়ুন: নন-কোভিডদের জন্য মেডিক্যালে পরিকাঠামো বৃদ্ধি

এই ঘটনা সামনে রেখে করোনা-কালে বেহাল স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সমাজ মাধ্যমে সরব হয়েছে বিজেপি। দলের কোলাঘাট মণ্ডল ৩-এর সভাপতি বিবেক চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একটা অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে পারছে না প্রশাসন। বোঝা যাচ্ছে, এরা করোনা নিয়ে রাজনীতিতেই ব্যস্ত। স্বাস্থ্য পরিষেবায় নজর নেই।’’ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনাটি জানি না। আর বিজেপি যে সব রাজ্যে ক্ষমতায় আছে, সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্দশা কারও অজানা নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE