Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

‘যত দিন শরীর চলবে, কাগজ দেবই’

১৯৮৬ সাল থেকে বড়জোড়া, হাটআশুড়িয়া, দেজুড়ি গ্রামের প্রায় ৩০০ বাড়িতে কাগজ দিয়ে আসছেন তারাপদবাবু।

সংবাদপত্র নিয়ে তারাপদ কর। নিজস্ব চিত্র।

সংবাদপত্র নিয়ে তারাপদ কর। নিজস্ব চিত্র।

তারাশঙ্কর গুপ্ত
বড়জোড়া শেষ আপডেট: ২৯ মার্চ ২০২০ ০৫:১৬
Share: Save:

এক দিনও কাজে ছুটি নেন না যিনি, তাঁর দেরি হচ্ছে দেখে চিন্তায় পড়েছিলেন সুজয় ঘোষাল। বাঁকুড়ার হাটআশুড়িয়ার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুজয়বাবু বলছিলেন, ‘‘১৯৯৭ সালের ডিসেম্বরে এক দিন তারাপদর আসতে দেরি হচ্ছিল। চিন্তায় পড়ি। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ সাইকেলের আওয়াজ পেয়ে ঘরের বাইরে বেরিয়ে দেখি, ও এসেছে।’’ পরের কথাগুলো এখনও কানে ভাসে সুজয়বাবুর। তাঁর স্মৃতিচারণ, ‘‘কী হয়েছে জিজ্ঞাসা করায় তারাপদ বলল, ‘ভোরে আমার বড় ছেলে মারা গিয়েছে। শ্মশানে দাহ করে আসতে একটু দেরি হয়ে গেল।’’’

উত্তমকুমার অভিনীত বাংলা ছবি ‘অগ্নীশ্বর’ (১৯৭৫) মনে পড়িয়ে দেওয়ার মতো সুজয়বাবুর এই স্মৃতি যাঁকে ঘিরে, তিনি তারাপদ কর। ঝড়, বৃষ্টি, হরতাল—যা-ই হোক, গত পঁয়ত্রিশ বছর সাতসকালে খবরের কাগজ নিয়ে বাঁকুড়ার বড়জোড়ায় পাঠকের দুয়ারে রোজ হাজির হন ষাট ছুঁইছুঁই তারাপদ। এলাকার অনেকের কাছেই যিনি ‘তারাকাকু’।

করোনাভাইরাসের পিছু পিছু আসা গুজব তাঁকে দু’দিন থামিয়ে রেখেছিল। কাগজ বিলি করে উঠতে পারেননি। তবে জানাচ্ছেন, ঘন ঘন বাজছিল মোবাইল। পুরনো পাঠকেরা বারবার জানতে চাইছিলেন, হলটা কী? শনিবার থেকে আবার সাইকেল নিয়ে বড়জোড়ার পথে কাগজ বিলি করতে নেমে পড়েছেন তিনি। বৃদ্ধের কথায়, ‘‘তিনশো পরিবার আমার জন্য অপেক্ষা করে থাকে। যত দিন শরীর চলবে, কাগজ বিলি করা থামানোর কোনও প্রশ্ন নেই।’’

১৯৮৬ সাল থেকে বড়জোড়া, হাটআশুড়িয়া, দেজুড়ি গ্রামের প্রায় ৩০০ বাড়িতে কাগজ দিয়ে আসছেন তারাপদবাবু। হাটআশুড়িয়ার পাঠক আশিস গুপ্ত বলেন, ‘‘তারাকাকু পরিবারের সদস্যের মতো। বাবার আমল থেকে বাড়িতে কাগজ দেন।’’ এলাকাবাসী জানাচ্ছেন, ভরা গ্রীষ্মে কোনও বাড়িতে সরবত বানানো থাকে তারাপদবাবুর জন্য। কারও বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে তাঁর নিমন্ত্রণ থাকবেই।

নিজের পেশায় দায়বদ্ধ, কর্তব্যে অবিচল এমন মানুষের দেরি দেখে গত দু’দিন চিন্তায় পড়েছিলেন অনেকে। সংবাদপত্র বণ্টনের ‘এজেন্ট’ তপনকুমার দাসের সংস্থা থেকে কাগজ নেন তারাপদবাবু। তপনবাবুর ছেলে প্রশান্তকুমার দাস বলছিলেন, ‘‘করোনার আতঙ্ক আর গুজবের জেরে দু’দিন কাগজ বিলিতে সমস্যা হচ্ছিল। এ দিকে, অনেকে কাগজ চাইছিলেন। শনিবার থেকে আবার কাজকর্ম ছন্দে ফিরেছে। তারাকাকু ফের কাগজ দিতে বেরিয়েছেন।’’

স্ত্রী আর ছোট ছেলেকে নিয়ে এক চিলতে বাড়িতে সংসার তারাপদবাবুর। এক সময় সাইকেল সারানোর দোকান ছিল। তপনবাবুর সূত্রে কাগজ বিলির কাজে আসা। বৃদ্ধ জানান, বড় ছেলে চঞ্চল যখন থ্যালাসেমিয়ায় মারা যায়, তখন সে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে বাবন ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর। একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক। বাবনের কথায়, ‘‘আমার কাছে বাবা-ই আদর্শ। কর্তব্যবোধ ওঁর থেকেই শিখেছি।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Tarapada Kar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE