Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

৭৩ দিনে প্রথম ৫ হাজার, পরের ৫ হাজার সংক্রমণ মাত্র ১৩ দিনে

দৈনিক নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধির সংখ্যায় দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য এখনও উদ্বেগজনক জায়গাতেই রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুন ২০২০ ২০:১৪
Share: Save:

দু’সপ্তাহ সময় লাগল না। পাঁচ হাজার থেকে এক লাফে ১০ হাজার ছাপিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গে মোট করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা।

শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন জানাচ্ছে, রাজ্যে এ পর্যন্ত ১০,২৪৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭৬। এক দিনে আক্রান্তের হিসেবে এটাই সর্বোচ্চ।

গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৯ জনের। এ পর্যন্ত রাজ্যে করোনা আক্রান্ত অবস্থায় মৃতের সংখ্যা ৪৫১। রাজ্য সরকারের হিসেবে এর মধ্যে কোমর্বিডিটির লক্ষণ ছিল ৩০৬ জনের, যা মোট মৃতের ৬৭.৮ শতাংশ।

রাজ্যে প্রথম করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে গত ১৮ মার্চ, লন্ডন ফেরত এক আমলা পুত্রের শরীরে। তার পর ৫৯ দিনে সংখ্যাটা ২৫০০ ছাড়ায়। ৭৩ দিনে ছাড়ায় ৫০০০-এর গণ্ডি। সেটা ছিল ৩০ মে। তার পরের ১৩ দিনে, আজ ১২ জুন পর্যন্ত, আরও ৫০০০ নতুন সংক্রমণ ধরা পড়ল রাজ্যে।

দৈনিক নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধির সংখ্যায় দেশের বেশ কয়েকটি রাজ্য এখনও উদ্বেগজনক জায়গাতেই রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে পশ্চিমবঙ্গও। রাজ্য ভিত্তিক মোট আক্রান্তের নিরিখে পশ্চিমবঙ্গ দেশে এখন সপ্তম স্থানে। মৃত্যুর নিরিখে চতুর্থ।

গত ১ এপ্রিল রাজ্যে নতুন আক্রান্তের সংখ্যার ৫ দিনের চলন্ত গড় ছিল ৮ (চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী তা এই এই লেখার শেষে আলাদা করে বলে দেওয়া হয়েছে)। ১ মে, ২০২০ দৈনিক নতুন আক্রান্তের চলন্ত গড় বেড়ে হয় ৪৫। আর ১ জুন তা এক লাফে চলে যায় ৩৩৯-এ। এখন এই দৈনিক বৃদ্ধির চলন্ত গড় দাঁড়িয়ে রয়েছে ৪১১-তে।

(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন। চলন্ত গড় কী এবং কেন তা লেখার শেষে আলাদা করে বলা হয়েছে।)

রাজ্যে সব থেকে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি কলকাতার। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, কলকাতায় মোট আক্রান্ত ৩৩৫৬ জন। মারা গিয়েছে ২৮৩ জন। কলকাতায় সুস্থ হয়ে ওঠার সংখ্যা ১৩২৩। আক্রান্তের হিসেবে এর পরেই স্থান হাওড়ার। এই জেলায় আক্রান্ত হয়েছেন ১৬২০ জন। যদিও মৃত্যুর হিসাবে হাওড়ার পরিস্থিতি কিছুটা হলেও সন্তোষজনক। মারা গিয়েছেন ৫৮ জন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী। কলকাতার পর মৃত্যুর নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের। আক্রান্তের নিরিখে এই জেলায় তিন নম্বরে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৪২৪। আক্রান্তে চতুর্থ স্থানে হুগলি। আক্রান্ত ৬৮২, মৃত ১৪। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৮৩ জন, মৃত ১২।

উত্তরবঙ্গেও বাড়ছে করোনা। উত্তরবঙ্গের আট জেলার মধ্যে কোচবিহারে ২৮৬ জন, দার্জিলিঙে ১৮৪, আলিপুরদুয়ারে ৪১, জলপাইগুড়িয়ে ১৬৫ জন, উত্তর দিনাজপুরে ২১৪, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৬৪, মালদহতে ২৫৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তবে সেই তুলনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেশি নয়। এই আট জেলায় এখনও পর্যন্ত ৪ জন মারা গিয়েছেন। আক্রান্তের সংখ্যা সব থেকে কম ঝাড়গ্রামে। সেখানে আক্রান্ত ১১ জন। পশ্চিমের জেলাগুলির মধ্যে সব থেকে বেশি আক্রান্ত বীরভূমে, ২৪২ জন। পুরুলিয়ায় ৮৪, বাঁকুড়ায় ১৭৬ জন কোভিড আক্রান্ত।

এই মুহূর্তে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যে ৪৫টি ল্যাবরেটরিতে কোভিড-১৯ টেস্ট হচ্ছে। আরও চারটি ল্যাবরেটরি অপেক্ষায় রয়েছে। এখন প্রতি দিন গড়ে প্রায় ৯ হাজারের উপরে করোনা টেস্ট হচ্ছে রাজ্যে। করোনা যুদ্ধ জয় করে বাড়ি ফেরার হারও ভাল। ডিসচার্জ রেট ৪১.০৫ শতাংশ।

রাজ্যে এই মুহূর্তে কোভিড-১৯ চিকিত্সা পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সব হাসপাতালেই। ৬৯ সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে আইসোলেশন শয্যা তৈরি করা হয়েছে। শুধু মাত্রা কোভিড-১৯ চিকিৎসা হচ্ছে ১৬টি হাসপাতালে। হাসপাতালগুলিতে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৯২০টি, ভেন্টিলেশন সুবিধা রয়েছে ৩৯২টি হাসপাতালে। এ ছাড়াও সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টার রয়েছে ৫৮২টি।

এই মুহূর্তে সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারে রয়েছেন ১৭০৩৬ জন। আগে ভর্তি থাকলেও, এখন ছাড়া পেয়ে গিয়েছেন ৭৭ হাজার ৯৪৭ জন। তবে এখনও বহু মানুষ হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন। সেই সংখ্যাটা দেড় লক্ষের উপরে। যাঁরা বাইরে থেকে এসেছেন, তাঁদের মধ্যে এক লক্ষের উপরে মানুষ কোয়রান্টিনে রয়েছেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

(চলন্ত গড় বা মুভিং অ্যাভারেজ কী: একটি নির্দিষ্ট দিনে পাঁচ দিনের চলন্ত গড় হল— সেই দিনের সংখ্যা, তার আগের দু’দিনের সংখ্যা এবং তার পরের দু’দিনের সংখ্যার গড়। উদাহরণ হিসেবে— দৈনিক নতুন করোনা সংক্রমণের লেখচিত্রে ১৮ মে-র তথ্য দেখা যেতে পারে। সে দিনের মুভিং অ্যাভারেজ ছিল ১২৮। কিন্তু সে দিন নতুন আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা ছিল ১৪৮। তার আগের দু’দিন ছিল ১১৫ এবং ১০১। পরের দুদিনের সংখ্যা ছিল ১৩৬ এবং ১৪২। ১৬ থেকে ২০ মে, এই পাঁচ দিনের গড় হল ১২৮, যা ১৮ মে-র চলন্ত গড়। ঠিক একই ভাবে ১৯ মে-র চলন্ত গড় হল ১৭ থেকে ২১ মে-র আক্রান্তের সংখ্যার গড়। পরিসংখ্যানবিদ্যায় দীর্ঘমেয়াদি গতিপথ সহজ ভাবে বোঝার জন্য এবং স্বল্পমেয়াদি বড় বিচ্যুতি এড়াতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

coronavirus Covid-19 Coronavirus in West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE