Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
State News

গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে এগরাই মডেল, আরও বেশি কোয়রান্টিনে জোর মুখ্যমন্ত্রীর

কোনও আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা সকলকেই কোয়রান্টিনে রাখার উপরেও গুরুত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২০ ২১:২৬
Share: Save:

এগরা মডেল সফল ভাবে এখনও পর্যন্ত সংক্রমণ রুখতে পেরেছে পূর্ব মেদিনীপুরে। তাই সেই মডেল অনুসরণ করেই করোনার নতুন সংক্রমণ রোখার পরিকল্পনা করছে রাজ্য। শুক্রবার নবান্ন সভাঘরে প্রতিটি জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। কোনও আক্রান্তের সংস্পর্শে আসা সকলকেই কোয়রান্টিনে রাখার উপরেও গুরুত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এ দিন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ জানিয়েছেন, রাজ্যে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৬২। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন ২২ জন। রোগমুক্ত হয়েছেন ৪ জন। মৃতের সংখ্যা বাড়েনি, এখনও পর্যন্ত ১০ জন মারা গিয়েছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এখনও পর্যন্ত ৪ হাজার ২১২টি টেস্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৮১১।

এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়া-কলকাতা এবং উত্তর ২৪ পরগনার করোনা সংক্রমণ নিয়ে বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ওই তালিকায় যোগ করেন হুগলিকেও। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী হাওড়ার জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শিবপুর, মন্দিরবাজার, বাঁকড়াহাট, সাঁকরাইল, ধূলাগড় এবং মালিপাঁচঘড়া ও বেলুড় এলাকার কথা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেন। তিনি হাওড়ার জেলাশাসককে বলেন, ‘‘কেউ বাইরে বেরবেন না। দরকার হলে পুলিশ বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেবে। এইটা আমাদের সাত-দশদিন করতেই হবে। না হলে কিন্তু আমরা হাওড়ায় আটকাতে পারব না। এটা খুব খারাপ জায়গায় এসে গিয়েছে।” ঠিক একই ভাবে তিনি উত্তর ও মধ্য কলকাতার কয়েকটি ওয়ার্ডের কথা উল্লেখ করেন। এই জায়গাগুলোতে জমায়েত ঠেকাতে তিনি সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েনেরও নির্দেশ দেন।

মুখ্যমন্ত্রী এ দিন হাওড়া-কলকাতার সঙ্গেই উদ্বেগ প্রকাশ করেন উত্তর ২৪ পরগনা এবং হুগলি জেলা নিয়ে। এ দিনের বৈঠকে উত্তর ২৪ পরগনার সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্তের কথাও তিনি বলেন জেলাশাসককে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কড়া নজর রাখতে হবে, যাতে কোনও ভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেরিয়ে কেউ না ঢুকতে পারেন।”

হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাওয়ের কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, কোন কোন এলাকায় করোনা আক্রান্ত পাওয়া গিয়েছে? জেলাশাসকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হুগলিতে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ৯। তার মধ্যে চার জন রোগমুক্ত হয়েছেন। এখনও চিকিৎসাধীন ৫ জন। শেওড়াফুলি ছাড়াও রিষড়া, পাণ্ডুয়া, মাহেশ, ডানকুনি এবং কোন্নগরে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানান জেলাশাসক।

আরও পড়ুন: রাজারহাটে মৃত্যু কোভিড আক্রান্ত ক্যানসার রোগীর, আতঙ্ক হাসপাতালে

হুগলি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মুখ্যসচিব এগরার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘‘পূর্ব মেদিনীপুর খুব ভাল কাজ করেছে। ওরা সমস্ত কিছুই হাসপাতালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছে।” মার্চ মাসের শেষ দিকে নয়াবাদের এক করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধের রোগের উৎস খুঁজতে গিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরার একটি বিয়ে বাড়ির হদিশ পাওয়া যায়। সেখানে বিদেশ থেকে লোকজন এসেছিলেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর দ্রুত ওই বিয়েবাড়িতে যাঁরা উপস্থিত হয়েছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে যাঁদের বাড়ি এগরা বা আশপাশের এলাকায় তাঁদের একটা বড় অংশকেই হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেয়। আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে থেকে ৫ জনের লালারসের নমুনা পজিটিভ পাওয়া যায়। কিন্তু প্রথমেই সংস্পর্শে আসা সম্ভাব্য প্রায় সকলকেই আইসোলেশনে পাঠানোয় বাইরের কারও সংক্রমণ হয়নি। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করেই মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিব দু’জনেই আক্রান্তের সংস্পর্শে থাকা উপসর্গ থাকা এবং উপসর্গ না থাকা সমস্ত ব্যক্তিকে আইসোলেশনে পাঠানোর উপর জোর দেন।

আরও পড়ুন: কলকাতা-হাওড়ায় সশস্ত্র পুলিশকে রাস্তায় নামানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

উত্তর ২৪ পরগনার মতোই মুখ্যমন্ত্রী এ দিন আন্তরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত নিয়ে সাবধান করেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার ত্রিপুরারিকে। তবে এ দিন তিনি শিলিগুড়ির কমিশনারের কাজে ক্ষোভও প্রকাশ করেন। করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে গিয়ে এ দিন মুর্শিদাবাদের জেলাশাসককে জমায়েত সম্পর্কে সতর্ক করেন মুখ্যসচিব। রাজীব সিংহ মুখ্যমন্ত্রীকে বলেন, মুর্শিদাবাদে এখনও পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ জন। কিন্তু জেলায় লকডাউন ভেঙে জমায়েতের ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে মুখ্যসচিব এ দিন জানিয়েছেন, মালদহ এবং মুর্শিদাবাদ জেলায় রাজ্যের সবচেয়ে বেশি সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস (সারি) বা শ্বাসকষ্টের রোগী রয়েছেন। জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয় দ্রুত বাড়ি বাড়ি সারি রোগীদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁদের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সূত্রে খবর, সারি রোগীদের ক্ষেত্রে কোভিড আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই আগে থেকে তাঁদের চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রাখলে সংক্রমণ রোখা সম্ভব।

করোনা পর্যালোচনা বৈঠকের পর স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার ইঙ্গিত, ‘‘আক্রান্তের সমস্ত কন্ট্যাক্টকে আইসোলেশনে পাঠালে বাইরে সংক্রমণের সম্ভাবনা কমবে। অন্য দিকে, উপসর্গ থাকা বা না থাকা সমস্ত হাই রিস্ক কন্ট্যাক্টের কোভিড পরীক্ষা করলে সমষ্টি বা গোষ্ঠী সংক্রমণ রোখা সম্ভব হবে।” আপাতত এই দুই পদ্ধতিতেই কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই জোরদার করছে রাজ্য।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Mamata Banerjee Egra Model COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE