Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

শহরে এক দিনে আক্রান্ত ১১৬, বদলাচ্ছে কন্টেনমেন্ট নীতি

সাধারণ মানুষ যাতে ভীত হয়ে না-পড়েন, সেটাই স্বাস্থ্য দফতরের লক্ষ্য। সেই জন্য কন্টেনমেন্ট এলাকার পরিধিও কমানো হচ্ছে।

এর আগে মহানগরে এক দিনে শতাধিক বাসিন্দার আক্রান্ত হওয়ার নজির নেই। ছবি: পিটিআই।

এর আগে মহানগরে এক দিনে শতাধিক বাসিন্দার আক্রান্ত হওয়ার নজির নেই। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২০ ০৪:৩৩
Share: Save:

সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়বে। এই বাস্তব মেনে নিয়ে সাধারণ মানুষের ভয় কাটাতে কন্টেনমেন্ট নীতিতে বদল আনার পরিকল্পনা করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার এই বিষয়ে একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিয়োর’ বা এসওপি তৈরি করা হয়েছে।

প্রতিদিনই দ্রুত বদলে যাচ্ছে করোনা-আক্রান্তের রেকর্ড। গত রবিবার ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ৩৭১। সেটাই ছিল বঙ্গে এ-পর্যন্ত এক দিনে সর্বাধিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান। মঙ্গলবার এক দিনে সংক্রমিতের সংখ্যা প্রায় চারশো! গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৯৬ জন আক্রান্ত হওয়ায় এ দিনই ছ’হাজারের গণ্ডি অতিক্রম করেছে রাজ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা। ৩৯৬ জন নতুন আক্রান্তের মধ্যে কলকাতায় ১১৬ জন আছেন। এর আগে মহানগরে এক দিনে শতাধিক বাসিন্দার আক্রান্ত হওয়ার নজির নেই। দ্বিতীয় উত্তর ২৪ পরগনা (৭৪)। তার পরে আছে হাওড়া (৪৯), হুগলি (৩৮), কোচবিহার (৩১)।

স্বাস্থ্য ভবনের খবর, কলকাতার ১১৬ জনের মধ্যে অন্তত ১৮ জন হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটের বাসিন্দা। ওই ১৮ জনের মধ্যে সাত জন মহিলা এবং ১১ জন পুরুষ রয়েছেন। পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের অন্তত ৩৫ জনের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে।

কন্টেনমেন্ট এলাকা-বিধি

আবাসন
• যে ফ্ল্যাটের বাসিন্দা করোনা-আক্রান্ত, শুধু সেই ফ্ল্যাট কন্টেনমেন্ট এলাকা হবে
• একাধিক ফ্ল্যাটের বাসিন্দা আক্রান্ত হলে সেই বহুতল কন্টেনমেন্ট এলাকা
• একাধিক বহুতলের (টাওয়ার) বাসিন্দা আক্রান্ত হলে আবাসনটি কন্টেনমেন্ট এলাকা
গ্রামাঞ্চল
• যে বাড়ির বাসিন্দা আক্রান্ত, সেই বাড়ি ও তার পাশের বাড়ি কন্টেনমেন্ট এলাকা
তথ্য সূত্র: স্বাস্থ্য দফতর

স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানান, পরিযায়ী শ্রমিকেরা ফেরার পরে সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। আনলক ওয়ানের পরেও সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থায় সাধারণ মানুষ যাতে ভীত হয়ে না-পড়েন, সেটাই স্বাস্থ্য দফতরের লক্ষ্য। সেই জন্য কন্টেনমেন্ট এলাকার পরিধিও কমানো হচ্ছে। ওই এলাকা বড় হলে অনেক বাসিন্দাকেই অকারণে আটকে থাকতে হয়। সেটা বাঞ্ছনীয় নয়।

আরও পড়ুন: কোভিড পরীক্ষা বাড়াতে কিছু রাজ্যে ‘ট্রু-ন্যাট’ পাঠাচ্ছে কেন্দ্র

আরও পড়ুন: ঘরবন্দি থেকে করোনা-জয় পরিবারের

ওই স্বাস্থ্যকর্তা জানান, এক বা দু’জন আক্রান্ত হলে গোটা পাড়াকে কন্টেনমেন্ট করে লাভ হচ্ছে না। তাতে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। নতুন রূপরেখায় একটি আবাসনের কোনও ফ্ল্যাটের এক জন বাসিন্দা আক্রান্ত হলে শুধু সেই ফ্ল্যাটকে কন্টেনমেন্ট করা হবে। একটি টাওয়ারে একাধিক ফ্ল্যাটে আক্রান্তের হদিস মিললে কন্টেনমেন্ট এলাকা হবে সংশ্লিষ্ট টাওয়ারটিই। একের বেশি টাওয়ারে আক্রান্ত মিললে পুরো কমপ্লেক্সই হবে কন্টেনমেন্ট জ়োন। বাড়ির ক্ষেত্রে আশপাশের পাঁচ-ছ’টি বাড়ি মিলিয়ে হবে কন্টেনমেন্ট এলাকা। বস্তি বা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাতেও এই নীতি। কোথাও একই শৌচাগার অনেকে ব্যবহার করছেন কি না, খেয়াল রাখা হচ্ছে। বয়স্ক হলে এবং কো-মর্বিডিটি থাকলে বস্তি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাকে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে পাঠানো হবে। কন্টেনমেন্ট এলাকার মেয়াদ ১৪ দিন।

স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, করোনা-ভীতি দূর করতে কন্টেনমেন্ট এলাকা রক্ষণাবেক্ষণের ভার স্থানীয় বাসিন্দাদেরই দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। এখন পুলিশ যে-দায়িত্ব পালন করছে, তা পালন করবেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এই বিষয়ে ব্যাপক প্রচার চালানো হবে। ওই স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘এখন অনেক গ্রামে আক্রান্তের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা দেখার ভারও নিচ্ছেন গ্রামবাসীরা।’’

সেই কর্মকাণ্ডকেই এ বার সার্বিক রূপ দিতে চাইছে রাজ্য। স্বাস্থ্য দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘করোনা রোগীদের নিয়ে অহেতুক আতঙ্ক দূর করতে হলে এই রোগ যে সকলেরই হতে পারে, সেই বোধ গড়ে তোলা দরকার।’’ তবে কোনও কোনও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের বক্তব্য, স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে এই সব দায়িত্ব দিয়ে স্বাস্থ্য দফতর আসলে নিজেদের ভার লাঘব করতে চাইছে না তো!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE