ছবি পিটিআই।
ওয়ার্ডের নার্সিং স্টেশনে যে স্যানিটাইজ়ার ফুরিয়ে গিয়েছে, ব্যস্ততার মধ্যে তা খেয়ালই করেননি কর্তব্যরত নার্স। ঘণ্টা দেড়েকের বিরতিতে অন্য ওয়ার্ডে ঘুরতে এসে তা নজরে পড়ে এক ইন্টার্নের। ‘কোথায় রয়েছে স্যানিটাইজ়ার?’ জেনে নিয়ে নিজেই বোতলে ঢেলে দিলেন ওই ইন্টার্ন। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে খবর এসেছিল, ক্যান্টিনের বাইরে পাঁচ-সাত জন গল্প করছেন। তৎক্ষণাৎ বেরিয়ে জটলা না করার কথা তাঁদের বুঝিয়ে এলেন দলের এক জন। ট্রলি-দাদার মাস্কটা নাক থেকে নেমে যে গলায় ঝুলছে, তা নজরে পড়েছিল এক জনের। স্টেথো ঝুলিয়ে ওয়ার্ড থেকে ওয়ার্ডে ছুটে যাওয়ার ফাঁকেই ট্রলি-দাদাকে ছোট্ট উপদেশ, “ওটা নাকে দেওয়ার জন্য।” জরুরি বিভাগে রোগীর চাপ সামলাতে গিয়ে বন্ধু বা দাদা-দিদিদের প্রতি বার হাত ধুতে ভুল হলে বা রোগী এবং তাঁদের সঙ্গীরা দূরত্ব-বিধি না মানলে সেটাও মনে করাচ্ছেন ওঁরা— এসএসকেএম হাসপাতালের ‘কোভিড ক্রুসেডার্স’।
এই দলের বয়স সপ্তাহ দুয়েক। সদস্য ন’জনের প্রত্যেকেই ইন্টার্ন। প্রথম পর্বের লকডাউনের মধ্যেই অন্তরীপ হালদার, অদ্রিতা রায়, সোমদত্তা শতপথি, সৌরভ সরকার, লোপামুদ্রা বসু, রাফে উমর, অপরূপ মুখোপাধ্যায়, আকাশ শুক্ল, রাঘব মাহেশ্বরী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, এমন পরিস্থিতিতে কিছু একটা করতে হবে। কিন্তু কী? স্যরেরা পরামর্শ দিয়েছিলেন, নিজেদের কাজের ফাঁকে স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতালে আসা রোগী ও তাঁর পরিজনদের পাশে থাকতে। তার পর থেকে সেই কাজই করে চলেছেন ওই ন’জন। বহির্বিভাগে আসা রোগী ও তাঁর সঙ্গীর মাস্ক আছে কি না, দূরত্ব-বিধি না-মেনে ঘেঁষাঘেঁষি করে কেউ দাঁড়িয়ে বা রোগীর শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা হল কি না― সে সবই দেখতে অবসর পেলেই ঘুরে যাচ্ছেন দলের কোনও না কোনও সদস্য। কেউ আবার বিভিন্ন ওয়ার্ডে গিয়ে বন্ধু বা সিনিয়রদের সঙ্গে দেখা করার ফাঁকে সামান্য ভুল দেখলেও মনে করিয়ে দিচ্ছেন নিয়মের কথা। একই ভাবে নার্স এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের সঙ্গেও থাকছেন ওঁরা।
এই কাজকে নজরদারি বলতে চান না অন্তরীপ-লোপামুদ্রারা। চিকিৎসক বাবা-মায়ের সন্তান, জোকার বাসিন্দা অন্তরীপের কয়েক সপ্তাহ ধরে ঠিকানা হস্টেল। মেডিসিনের এই ইন্টার্নের উত্তর, “বিশ্ব জুড়ে এত আক্রান্ত, এত মৃত্যু সকলকে আতঙ্কিত করছে। আমাদেরও হতাশা আসছে। সেটা বাড়তে দিলে পুরো স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়বে। তাই নিজের পরিধির মধ্যেও ‘আমরা একসঙ্গে’ এই বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি। বেলেঘাটা আইডি-তে টানা সাত দিন ডিউটির পরে আরও ১৪ দিনের কোয়রান্টিন পর্বে থাকছেন বন্ধুরা। ভিডিয়ো কল করে কথা বলছি, যাতে ওঁদের মন না ভাঙে।”
আরও পড়ুন: স্মৃতিতে মন্বন্তর, করোনার ত্রাণে দান বৃদ্ধ-বৃদ্ধার
সার্জারির ইন্টার্ন লোপামুদ্রার আবার অভিজ্ঞতা, “আগের তুলনায় মানুষ সচেতন হচ্ছেন। প্রায় সবাই মাস্ক পরে আসছেন, দূরে দূরে দাঁড়াচ্ছেন। কারও মাস্ক না থাকলে হাসপাতাল দিচ্ছে।” পিপিই-র ‘ডনিং-ডফিং’ (বিশেষ সুরক্ষা পোশাক পরা ও খোলার বিধি) ঠিক মতো হচ্ছে কি না, তা-ও দেখছেন ওঁরা।
এসএসকেএমের শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্রনারায়ণ সরকারের কথায়, “স্বাস্থ্যকর্মীদের কোভিড সচেতনতা বাড়াতে ও ডাক্তারদের এই চিকিৎসার আপডেট দিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সপ্তাহে তিন দিন প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। কিন্তু বাস্তবে সে সব আমরা ঠিক মতো মনে রাখছি কি না, সেটা আরও জরুরি। এমন দুর্দিনে কারও ভুলভ্রান্তি না ধরে একজোট হয়ে সেই কাজই করছেন ওই ইন্টার্নরা।”
আরও পড়ুন: নোটবন্দিতেও চালু ছিল বিনিময় প্রথা, লকডাউনে সে সব বাতিল বাঁকুড়ায়
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy