Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus In West Bengal

পাশে বৌমা, স্নাতক করোনা-যোদ্ধা

সম্প্রতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের চূড়ান্ত ফল বেরিয়েছে। সব সিমেস্টার ধরলে প্রান্তিকা পেয়েছেন ৬৩.৯%।

সফল: বৌমা প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে প্রান্তিকা। নিজস্ব চিত্র

সফল: বৌমা প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে প্রান্তিকা। নিজস্ব চিত্র

দয়াল সেনগুপ্ত 
খয়রাশোল শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৭
Share: Save:

করোনার সঙ্গে লড়েছেন। লড়েছেন সমাজে প্রচলিত ধারণার সঙ্গেও। পরিশ্রম আর ইচ্ছেশক্তি ছিল অস্ত্র। আটচল্লিশ বছর বয়সে স্নাতক হয়ে সেই লড়াইয়েও জয়ী হয়েছেন আশাকর্মী প্রান্তিকা চট্টোপাধ্যায়।

বীরভূমের খয়রাশোল ব্লকের পাঁচড়ার বাসিন্দা প্রান্তিকার সেই অর্থে ‘প্রয়োজন’ ছিল না স্নাতক হওয়ার। স্বামী অচিন্ত্য চট্টোপাধ্যায় গৃহশিক্ষক। ছেলে অনিন্দ্য বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। প্রান্তিকা নিজে পাঁচড়া পঞ্চায়েতের সদস্যও। কেবল মনের তাগিদেই আশাকর্মী হিসেবে করোনার সঙ্গে লড়তে লড়তে, ঘরসংসার এবং রাজনৈতিক পদ সামাল দিয়েও সময় বার করেছেন পড়াশোনার জন্য।

বাইরে থেকে কারা এলাকায় এলেন, কারা জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেই সমীক্ষা থেকে শুরু করে বহু কাজ করতে হয়েছে প্রান্তিকাকে। নিভৃতবাস কেন্দ্রের দেখভাল ও স্কুলে জীবাণুনাশ করানোর দায়িত্বও ছিল। তবু পড়ার লক্ষ্য ছিল স্থির। কী ছিল এমন লক্ষ্যের পিছনে? প্রান্তিকা জানান, ১৯৮৯-এ পাঁচড়া স্কুল থেকে তিনি মাধ্যমিক দিলেও অঙ্কে কৃতকার্য হতে পারেননি। সে বছরই বিয়ে হয়ে যায়। সংসার সামলাতে শিশুদের পড়াতেন। তাঁর কথায়, “নিজে অশিক্ষিত হয়ে পড়াচ্ছি! খারাপ লাগত। তাই ফের পড়াশোনা শুরুর ইচ্ছেটা ছিল। যদিও সংসার, সন্তান সব নিয়ে আর পেরে উঠিনি।”

আরও পড়ুন: বাগডোগরায় ডিএম, সিপি-র সঙ্গে কথা বললেন প্রধানমন্ত্রী

আরও পড়ুন: দীপাবলিতে বাজি বন্ধে রাজ্যের ভরসা ‘মানবিক’ জনতাই

২০০৮-এ প্রান্তিকা পাঁচড়া উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের অধীনে আশাকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেন। তখন পড়ার ইচ্ছেটা আরও জাগিয়ে দেন তাঁর বোনপো, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক কুন্তল মুখোপাধ্যায়। কাজ করতে করতেই ২০১২-য় মাধ্যমিক ও ২০১৬-য় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। স্নাতক হবেন তখনও ভাবেননি প্রান্তিকা। তা উস্কে দেন পুত্রবধূ প্রিয়াঙ্কা। তাঁরই কলেজ, খয়রাশোল শৈলজানন্দ ফাল্গুনী স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের কলা বিভাগে এক বছর পরে ভর্তি হন প্রান্তিকা।

সম্প্রতি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের চূড়ান্ত ফল বেরিয়েছে। সব সিমেস্টার ধরলে প্রান্তিকা পেয়েছেন ৬৩.৯%। চূড়ান্ত সিমেস্টারে ৬৯%। কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নির্মলকুমার সাহু বলছেন, ‘‘এত কিছু সামলে স্নাতক হওয়ার এই অধ্যবসায় তরুণ প্রজন্মকে তো বটেই, যাঁরা মাঝপথে পড়াশোনা ছেড়েছেন, তাঁদেরও অনুপ্রাণিত করবে।’’

প্রান্তিকা বলেন, ‘‘স্নাতক হতেই হবে, এই জেদ নিয়ে রোজ ভোর ৪টে থেকে ৬টা এবং রাত ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত পড়েছি কোনও কাজে ফাঁকি না দিয়েই।’’ ৩০ সেপ্টেম্বর এক সন্তানসম্ভবাকে খয়রাশোলের ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান তিনি। পর দিনই পরীক্ষা ছিল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার সহকর্মী এবং আমার এএনএম দিদি পাশে ছিলেন।’’ প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘‘শাশুড়ি হলেও উনি আমার বন্ধু। মা যে এখনও স্নাতক হতে চান, সেটা জেনেই খুব ভাল লেগেছিল। যতটা পারি উৎসাহ দিয়েছি।’’ আর বছর দেড়েকের শিশুপুত্রের ঠাকুমা প্রান্তিকা বলছেন, ‘‘ঠাকুমা হওয়ার পরও যে স্নাতক হতে পারলাম, এতেই দারুণ খুশি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE