Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

মারা গিয়েছেন বাবা, মেডিক্যালের হেল্পলাইন রোজই বলে ‘রোগী সুস্থ’!

সপ্তাহের শুরুতে কোভিড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অপেক্ষার ঘেরাটোপে রোগীদের কী ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেই ছবি সামনে এসেছিল। চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে হাওড়ার বাসিন্দার অভিজ্ঞতা তাতে ভিন্ন মাত্রা দিল।

মৃতের স্ত্রী ও পুত্র। মঙ্গলবার কলকাতা মেডিক্যালে। ছবি: সুমন বল্লভ

মৃতের স্ত্রী ও পুত্র। মঙ্গলবার কলকাতা মেডিক্যালে। ছবি: সুমন বল্লভ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২০ ০৪:৫৯
Share: Save:

গ্রিন বিল্ডিংয়ে ৪০৪ নম্বর শয্যার রোগী কেমন আছেন? কোভিড হাসপাতাল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের হেল্পলাইনে ফোন করে দিনে দু’বার এভাবেই ৬৮ বছরের বৃদ্ধ বাবার খোঁজ নিতেন ছেলে। প্রতিবারই জবাব আসত, ‘রোগী সুস্থ’। ‘অল্প শ্বাসকষ্ট ছাড়া তেমন সমস্যা নেই’। ভর্তির দিন চারেক পরে মঙ্গলবার বাবার সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য চিকিৎসাধীন ওয়ার্ডে ফোন দিতে গিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ছেলে। কারণ, ৪০৪ নম্বর বেডে বাবা নেই। সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কার্যালয়ে বাবার খোঁজ নিতে গিয়ে ছেলে জানতে পারেন, ভর্তির দিন সন্ধ্যাতেই হাওড়ার সলপের বাসিন্দা অজয় মান্না মারা গিয়েছেন!

সপ্তাহের শুরুতে কোভিড হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অপেক্ষার ঘেরাটোপে রোগীদের কী ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেই ছবি সামনে এসেছিল। চব্বিশ ঘণ্টার ব্যবধানে হাওড়ার বাসিন্দার অভিজ্ঞতা তাতে ভিন্ন মাত্রা দিল।

গত এক বছর ধরে ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগছিলেন অজয়বাবু। চ্যাটার্জিহাটে এসএসকেএমের রেসপিরেটরি মেডিসিনের এক চিকিৎসককে দেখাতেন তিনি। বৃদ্ধের ছেলে রবীন জানান, ওই চিকিৎসকের পরামর্শে বৃহস্পতিবার ক্যানসার ব্লকে ভর্তি করানোর জন্য বাবাকে নিয়ে তিনি এসএসকেএম গিয়েছিলেন। কিন্তু রোগীকে ভর্তি করানোর আগে এম আর বাঙুর অথবা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়। দুপুর ১টা নাগাদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্রিন বিল্ডিংয়ে রোগীকে ভর্তি করানো হয়। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে খবর, বৃদ্ধের রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা কম ছিল। সে জন্য করোনা সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রিন ব্লিডিংয়ে ভর্তি করানো হয়েছিল।

আরও পড়ুন: লকডাউনে বিয়ে, এক মাসের মধ্যেই করোনায় মৃ্ত্যু চন্দননগরের শিক্ষিকার

ভর্তির পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রবীনকে একটি হেল্পলাইন নম্বর দিয়েছিলেন। প্রতিদিন সেই নম্বরে ফোন করে দিনে দু’বার বাবার খবর নিতেন তিনি। রবীন জানান, কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে কি না, তা তিনি সোমবার হেল্পলাইনে জানতে চেয়েছিলেন। যার প্রেক্ষিতে এ দিন হাসপাতালে এসে তাঁকে খোঁজ নিতে বলা হয়। এর পরেই হাসপাতালে এসে বাবার মৃত্যুসংবাদ পান ছেলে! রবীনের কথায়, ‘‘বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য ওয়ার্ড বয়ের হাতে একটা ফোন পাঠিয়েছিলাম। ওয়ার্ড বয় বলল, বাবা ৪০৪ নম্বর বেডে নেই। বাবা কোথায় জানতে চাইলে অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার বললেন, ভর্তির দিন সন্ধ্যাতেই বাবা মারা গিয়েছেন!’’ পিতৃহারা ছেলের প্রশ্ন, এত দিন কার সুস্থতার খবর হেল্পলাইন নম্বরের কর্মীরা দিতেন?

উপাধ্যক্ষ তথা সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানান, রোগীর মৃত্যু সংবাদ দেওয়ার জন্য পরিজনেরা যে ফোন নম্বর দিয়েছিলেন তাতে যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু নম্বরটি ভুল ছিল। এর পর নিয়মানুযায়ী বিষয়টি হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে জানানো হয়। যার প্রেক্ষিতে বউবাজার থানার মাধ্যমে ডোমজুড় থানায় খবর দেওয়া হয়েছে। তার তথ্যপ্রমাণও রয়েছে। হেল্পলাইন নম্বরের ভূমিকা প্রসঙ্গে উপাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘শয্যা নম্বর ধরে রোগীর খবর নিয়ে ভুল হতে পারে। নাম, বয়স ঠিকমতো বলা হয়েছিল কি না, তা দেখতে হবে।’’ মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার প্রসঙ্গে ছেলের বক্তব্য, ‘‘ডোমজুড় থানা থেকে খবর পেলে হাসপাতালে এসে বাবার সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন দিতে যাব কেন?’’

মেডিক্যাল কলেজে একের পর এক অস্বস্তিকর ঘটনার প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য দফতর পদক্ষেপ করতে চলেছে সোমবার রাতে সেই ইঙ্গিত মিলেছিল। এ দিন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন বলে খবর। সেই প্রসঙ্গে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা মন্ত্রী নির্মল মাজি জানান, জরুরি বিভাগে শ্বাসকষ্ট-সহ গুরুতর অসুস্থ রোগীদের যাতে কোনও ভাবে অপেক্ষা করতে না-হয়, তা নিশ্চিত করতে একটি ক্যুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান বলেন, ‘‘বিভিন্ন নার্সিংহোম, হাসপাতাল রোগী কোভিড নাকি নন-কোভিড তা না দেখেই মেডিক্যাল কলেজে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে একজন রোগীকে স্থিতিশীল না করে পাঠানোয় কোভিড হাসপাতালে পৌঁছে রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে যাচ্ছে।’’ বিষয়টি এ দিন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদেরও জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE