ছবি পিটিআই।
সেপ্টেম্বরের গোড়ায় পরিবারের সকলে মন্দারমণি ঘুরতে গিয়েছিলেন। কলকাতায় ফেরার পরে প্রথমে মা এবং পরের দিন জ্বরে আক্রান্ত হন মেয়ে। মঙ্গলবার জ্বর এসেছে বাবারও। কিন্তু জ্বর আসার তিন দিনের মাথায় করোনা পরীক্ষা করেনি পরিবার। এ দিন মেয়ের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে পাড়ার চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন উদ্বিগ্ন মা।
কলকাতার কলোনি এলাকায় বসবাসকারী এক পরিচিতের জ্বর আসার পরে প্রেসক্রিপশন করে দেন পঞ্চসায়রে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক-কর্তা। কয়েক দিন পরে ওই চিকিৎসক-কর্তা জানতে পারেন, ওই কলোনির অন্য বাসিন্দারাও জ্বরে আক্রান্ত। কেউই পরীক্ষা করাননি। তিনি পরিচিতকে যে প্রেসক্রিপশন দিয়েছিলেন তাতে লেখা ওষুধ খেয়ে সকলে বাড়িতেই রয়েছেন!
শহর, শহরতলি, জেলার ক্লিনিক পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের মতে, দু’টি ছবির কোনওটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। শারীরিক সমস্যায় একান্ত বাধ্য না করলে জ্বরে আক্রান্তদের একটি বড় অংশ পারতপক্ষে চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন না। যার প্রেক্ষিতে নজরদারির অভাবে এ রাজ্যে একটি বড় অংশের আক্রান্তকে চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
আরও পড়ুন: চিহ্নিতকরণে দেরিতেই কি কমছে না আইসিইউ-শয্যা?
তাঁদের মতে, মূলত দু’টি কারণে করোনা পরীক্ষা করানোর ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, কোভিড ধরা পড়লে প্রতিবেশীরা কী ধরনের আচরণ করবেন সেই সংক্রান্ত ভীতি। আর একটি কারণ হল, মৃদু উপসর্গের জেরে শারীরিক সমস্যা সে ভাবে না হওয়ায় নমুনা পরীক্ষা করিয়ে কেউ স্বাস্থ্য দফতরের খাতায় নাম তুলতে চাইছেন না। পরীক্ষার খরচের কথা ভেবেও অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে ঠিকই। কিন্তু সেখানে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষার সময় অজান্তে আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার ভীতিও কাজ করছে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, সব মিলিয়ে দিনের শেষে সংক্রমণ রোধের কাজই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কলকাতা পুরসভার করোনা প্ল্যানিংয়ের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক মানস সোম জানান, কোভিডের মৃদু উপসর্গে কী ওষুধ কোন মাত্রায় খেতে হবে সে সব এখন সমাজমাধ্যমে সহজলভ্য। প্রেসক্রিপশন ছাড়াই পাড়ার ওষুধের দোকানে ওষুধ পেতেও অসুবিধা হচ্ছে না। এমন ওষুধ প্রতিদিন কত বিক্রি হচ্ছে তার হিসেব নিলেই ছবিটা স্পষ্ট হবে। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে চললে কোনও দিনই মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মেট্রোর পরে লোকাল ট্রেনও চালু হবে। জ্বরের রোগীদের চিহ্নিত করতে না পারলে সংক্রমণ ঠেকাবো কী করে!’’
আরও পড়ুন: ৫০ লক্ষে ভারত, তবু লকডাউনের গুণগান
চিকিৎসার পাশাপাশি নমুনা পরীক্ষার পরিকাঠামো যুক্ত বেসরকারি হাসপাতালের সিইও সুদীপ্ত মিত্র জানান, এই প্রবণতা এখন সার্বিক সমস্যা। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের বক্ষ রোগের চিকিৎসক কৌশিক চৌধুরী বলেন, ‘‘সাত-দশ দিনের জ্বর নিয়ে যাঁরা ঘরে বসে তাঁদেরই শারীরিক জটিলতা বেশি হচ্ছে।’’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কাজলকৃষ্ণ বণিক জানান, রাজ্যে প্রতিদিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা পঞ্চাশ হাজারের ঘরে আটকে থাকার বড় কারণ মানুষের টেস্ট নিয়ে অনীহা। প্রথম সেরো সার্ভের রিপোর্টে আইসিএমআর জানিয়েছে, আরটি-পিসিআরে নিশ্চিত প্রতি কেস পিছু ৮২-১৩০ জন সংক্রমিত ব্যক্তি রয়েছেন। কাজলকৃষ্ণবাবু বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষের মধ্যে টেস্ট না করানোর প্রবণতা বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আচমকা একদিন আক্রান্তের সংখ্যায় বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy