Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দু’লক্ষ পার
Coronavirus in West Bengal

করোনায় মৃত্যুহার কমানোই এখন নিশানা করছে রাজ্য সরকার

মৃত্যুর হার কী ভাবে কমানো যায়, কোভিড নিয়ন্ত্রণে সেটিই এখন স্বাস্থ্য দফতরের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সংক্রমণের ভয়ে অনেকে হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন, এটাও সত্যি। ছবি: পিটিআই।

সংক্রমণের ভয়ে অনেকে হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন, এটাও সত্যি। ছবি: পিটিআই।

সৌরভ দত্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২০ ০৪:১৯
Share: Save:

এখনও দেশের অন্য প্রান্তের তুলনায় সংক্রমণের বৃদ্ধিতে রাশ ধরে রাখতে পেরেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। তা অবশ্যই স্বস্তির। কিন্তু অস্বস্তি হল করোনায় আক্রান্তের মৃত্যুহার। বুধবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, মোট আক্রান্তের নিরিখে বঙ্গে মৃত্যুহার ৫.৩০ শতাংশ। ঘটনা হল, যে সকল রাজ্যে সংক্রমণের মাত্রা অনেক বেশি, সেখানেও মৃত্যুহার তুলনামূলক ভাবে কম, কেবল গুজরাত ছাড়া। এই পরিস্থিতিতে মৃত্যুর হার কী ভাবে কমানো যায়, কোভিড নিয়ন্ত্রণে সেটিই এখন স্বাস্থ্য দফতরের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রসঙ্গত, বারাসত হাসপাতালের মেডিসিনের সিস্টার-ইন-চার্জ গত ১ জুন মারা গিয়েছেন। নমুনা পরীক্ষার ফলে করোনার প্রমাণ মিলেছে।

স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘এখন সংক্রমণের সংখ্যা বাড়বে। তাতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমাদের এখন প্রধান লক্ষ্য মৃত্যুর সংখ্যা কমানো।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘মৃত্যু ঠেকাতে কোথায় কী ধরনের প্রোটোকল মেনে চিকিৎসা চলছে, সে সব বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এম আর বাঙুর আগের থেকে অনেক উন্নতি করেছে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজও একটা জায়গায় চলে এলে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।’’

করোনা বুলেটিন থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে রাজ্যে মোট ৬৯টি কোভিড হাসপাতাল তৈরি করা হয়েছে। তাতে কোভিড শয্যার সংখ্যা ৮৭৮৫টি। আইসিইউ ৯২০। সংক্রমণের বাড়বাড়ন্তের কথা মাথায় রেখে আরও হাসপাতাল তৈরির পাশাপাশি আইসিইউয়ের সংখ্যাবৃদ্ধি এবং অক্সিজেন সরবরাহের পরিকাঠামোর উপরে জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর।

আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু নার্সের, বদলি হলেন একাধিক সিএমওএইচ

আরও পড়ুন: পুরনো ভাড়াতেই আজ থেকে বেসরকারি বাস নামাচ্ছেন মালিকরা

স্বাস্থ্যভবনের চিন্তার পিছনে রয়েছে কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা ও হুগলি জেলার করোনা পরিসংখ্যান। বিশেষত কলকাতা। বুধবার পর্যন্ত কলকাতায় মোট
করোনা পজ়িটিভের সংখ্যা হল ২৩৯৪, মোট মৃত ১৭৭। কলকাতার যা মৃত্যুহার (৭.৩৯), তা ঘটনাচক্রে এ দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মহারাষ্ট্র (৩.৪০), গুজরাত (৬.১৯), উত্তরপ্রদেশ (২.৬৫), মধ্যপ্রদেশ (৪.৩২) এবং রাজস্থানের (২.১৬) থেকেও বেশি।

স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ আধিকারিকের মতে, কলকাতায় মৃত্যুর হার বেশি হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ, অনেক আক্রান্তই দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছচ্ছেন। তাঁর কথায়, ‘‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একেবারে শেষ মুহূর্তে রোগীদের হাসপাতালে আনা হয়েছে। আরও আগে যাতে রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি করানো যায় সেই চেষ্টা চলছে। হাসপাতালগুলিতে পরিষেবার যাতে ঘাটতি না হয় তা অগ্রাধিকারে রয়েছে।’’

অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথের ডিরেক্টর-প্রফেসর মধুমিতা দোবে জানান, শুধু মৃত্যুর হার দেখলে হবে না, কোন বয়সের রোগীদের মৃত্যু হচ্ছে, তাঁদের মধ্যে কত জনের কো-মর্বিডিটি ছিল, সে সবও দেখা জরুরি। মৃত্যুর হার কমানোর প্রশ্নে তাঁর পরামর্শ হল, করোনা হলেই সমাজে দাগিয়ে দেওয়ার কারণে উপসর্গ গোপন করার প্রবণতা থেকে মানুষ এখনও বেরোতে পারেনি। সংক্রমণের ভয়ে অনেকে হাসপাতালে যেতে ভয় পাচ্ছেন, এটাও সত্যি। করোনা সংক্রমণ মানেই যে মৃত্যু নয়, সেটা বোঝাতে হবে। তার জন্য করোনা রোধে স্থানীয় বাসিন্দাদের যুক্ত করার সময় এসেছে। নবীনদের দায়িত্ব, প্রবীণদের সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে রাখা। মধুমিতাদেবীর কথায়, ‘‘একেবারে শুরুতে পরীক্ষার মাধ্যমে আক্রান্তদের চিহ্নিত করে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। হাসপাতালে ভর্তির প্রক্রিয়া আরও সহজ করা জরুরি।’’

পরিযায়ী শ্রমিকদের লকডাউনের প্রথম পর্যায়ে পাঠিয়ে দিলে এ ভাবে রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে সংক্রমণ হানা দিত না বলে মনে করেন স্বাস্থ্য ভবনের শীর্ষ কর্তারাও। তবে স্বাস্থ্য দফতরের এক পদস্থ কর্তার কথায়, ‘‘মহারাষ্ট্র এখন যে জায়গায় রয়েছে, সেখান থেকে রাজ্যে সংক্রমণের বৃদ্ধিকে এক মাস পিছিয়ে রাখতে পেরেছি। এটা আমাদের অ্যাডভান্টেজ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE