গ্রামের মাদ্রাসার তরফে একটা সময়ে এলাকায় প্রচার চলত চোলাইয়ের ব্যবসা বন্ধ করা নিয়ে, নেশা ছাড়া নিয়ে। তাতে কিছুটা কাজও হয়েছিল। বেশ কয়েকজন মদ ছাড়ার শপথ নেন। তাঁদের ডেকে মঞ্চে তুলে পুরস্কৃত করে মাদ্রাসা কমিটি। গ্রামের বাসিন্দারা আশার আলো দেখেন। মহিলারা ভেবেছিলেন, এরপরে হয় তো গ্রামের ঘরে ঘরে এই বার্তা পৌঁছে যাবে। মদের নেশায় দিনভর চুর হয়ে না থেকে বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা এ বার রোজগারে মন দেবেন।
শুরুর দিকটায় তা যে একেবারে হয়নি তা নয়। কিন্তু মাদ্রাসা কমিটির সদিচ্ছা এবং গ্রামের কিছু লোকের সাধু উদ্যোগে জল ঢেলে দিতে তৎপর হয় আরও কিছু লোক, বেআইনি চোলাইয়ের ব্যবসা থেকে যারা নানা ভাবে ফায়দা তোলে। তাদের প্ররোচনা আর প্রলোভনেই ধীরে ধীরে নেশা আরও ছড়াতে থাকে গ্রামের মানুষের মধ্যে। জমতে থাকে ক্ষোভ। ঘরে ঘরে ফের অশান্তির বাতাবরণ অতিষ্ঠ করে তোলে হাসনাবাদের গাঁড়াকপি এলাকার মহিলাদের। বাড়তে থাকে চুরি-ছিনতাই।
উত্তেজনা আরও বাড়ে বুধবার সকালে। যখন গ্রামের একটি ধর্মীয় স্থানে চোলাইয়ের কিছু প্যাকেট প়ড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় কিছু মানুষজন। লোক জড়ো হতে শুরু করে। সেখানে সব ধর্মের মানুষই ছিলেন।
এ দিন সকাল ৭টা নাগাদ লোকজন জড়ো হয়ে একের পর এক চোলাইয়ের ঠেকে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। প্রচুর দেশি-বিদেশি মদের বোতল ভাঙা হয়। চোলাইয়ের দোসর হিসাবে গ্রামে গজিয়ে উঠেছিল বেশ কিছু জুয়ার ঠেক। সেখানেও হামলা চালায় জনতা। গাঁজার আসরও ভেঙে দেওয়া গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। জনতার তাড়া খেয়ে বিদ্যাধরী সাঁতরে পালায় কিছু চোলাই কারবারি, জুয়ারি। হাতের সামনে পড়ে মারধর খায় কয়েকজন মদ্যপ। কয়েকজনকে ধরে ফেলে বেদম পেটায় জনতা। তিনজনকে ধরে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। তাদের গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম আলতাপ মণ্ডল, বিকাশ মণ্ডল ও নিমাই মণ্ডল।
গাঁড়াকপি এলাকাটির আশপাশে চারটি থানা। গ্রামের পথঘাট রীতিমতো বেহাল। যাতায়াত করতে সাধারণ নাগরিকেরা ভোগান্তি পোহান। অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে খবর দিলেও গ্রামে ঢুকতে চায় না পুলিশ। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই দুষ্কৃতীদের রমরমা বাড়ছে দিন দিন। বাড়ছে চোলাই-গাঁজা-জুয়ার আসরও।
বাজার কমিটির সম্পাদক নূর ইসলাম লস্কর বলেন, ‘‘মদ-গাঁজার ঠেকের জন্য এলাকায় দুষ্কর্ম বাড়ছে। মুদির দোকানের আড়ালেও মদ বিক্রি শুরু হয়েছে। মাদ্রাসার তরফে একটা চেষ্টা করা হয়েছিল নেশার প্রকোপ কমানোর জন্য। কিন্তু অসামাজিক লোক তা হতে দেয়নি। পুলিশকে জানিয়ে কাজ না হওয়ায় স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ।’’
লোকমান বিশ্বাস, আমিলা সর্দার, জারি বিবি, সমীর বাছাড়রা বলেন, ‘‘মাঝখানে ভেবেছিলাম, মদের নেশা বুঝি এ বার কমবে। মাদ্রাসা যে উদ্যোগ করেছিল, তাতে কিছুটা কাজ যে হয়নি তা নয়। কিন্তু পরিস্থিতি এখন যে কে সেই। গরিব মানুষ রোজগারের সামান্য টাকাগুলোও উড়িয়ে দিচ্ছে মদের আসরে। বাড়ি ফিরে শুর হচ্ছে অশান্তি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা লাটে ওঠার জোগাড়। পুলিশ-প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে সমস্যার পাকাপাকি সমাধান হওয়া মুশকিল।’’
ক’দিন আগেই মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে মদ্যপ স্বামীর উৎপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে স্বামীকে পিটিয়ে খুন করে আত্মসমর্পণ করেছেন স্ত্রী। ঘটনার পরে এলাকার মহিলারা একাধিক চোলাইয়ের ঠেকে ভাঙচুর চালান। সেই পথেই এ বার হাঁটল গাঁড়াকপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy