একসঙ্গে: খড়্গপুরের কংগ্রেস প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের (বাঁ দিকে) হয়ে প্রচারে সোমেন মিত্রের সঙ্গে সূর্যকান্ত মিশ্র। বৃহস্পতিবার।ছবি: দেবরাজ ঘোষ।
লোকসভা নির্বাচনে তাঁরা ‘ভুল’ করেছিলেন। প্রকাশ্যে সেই ভুল কবুল করে নিয়েই সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র জানালেন, এ বারের বিধানসভা উপনির্বাচন বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতার পরীক্ষা। একই মঞ্চ থেকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বললেন, অগণতান্ত্রিক ও সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে মানুষকে ভবিষ্যতের বিকল্প সন্ধান দেওয়ার লক্ষ্যেই বামেদের হাত ধরা।
আসন সমঝোতা করে সাড়ে তিন বছর আগে বিধানসভা নির্বাচনেও বাম ও কংগ্রেস লড়েছে। কিন্তু সে বারের সমঝোতা ছিল অসম্পূর্ণ এবং নানা শর্তে বাঁধা। লোকসভায় জোট ভেস্তে গিয়ে দু’পক্ষেরই ভরাডুবির পরে এ বার তিন বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে সমঝোতা হয়েছে তুলনায় অনেকটাই মসৃণ। আর এই গোটা সমঝোতা-পর্বের মধ্যে এই প্রথম বার জনসভার মঞ্চে একসঙ্গে দেখা গেল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ও প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতিকে। চার দেওয়ালের মধ্যে তাঁরা মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু খড়গপুরের কংগ্রেস প্রার্থী চিত্তরঞ্জন মণ্ডলের সমর্থনে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার সভাই প্রথম বার দু’দলের দুই শীর্ষ নেতাকে সামনে রেখে যৌথ লড়াইয়ের বার্তা আরও স্পষ্ট করার চেষ্টা করল।
সূর্যবাবু, সোমেনবাবুর সঙ্গেই মঞ্চে ছিলেন এআইসিসি-র তরফে বাংলার ভারপ্রাপ্ত নেতা গৌরব গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেস সমম্বয় কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ ভট্টাচার্য, তেলঙ্গানার কংগ্রেস সাংসদ রেবন্ত রেড্ডি। খড়গপুর কেন্দ্রের জন্য কংগ্রেস ও সিপিএমের সাংগঠনিক ভারপ্রাপ্ত দুই নেতা শুভঙ্কর সরকার ও তাপস সিংহের পাশাপাশি ছিলেন ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়, সিপিআইয়ের শ্রীকুমার মুখোপাধ্যায়েরাও।
সূর্যবাবু বলেন, ‘‘বিজেপি ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব ভোটকে এক জায়গায় আনতে চাই। এটা একটা পরীক্ষা। লোকসভা নির্বাচনে ভুল হয়েছিল। লোকসভা ভোটের পর্যালোচনা থেকে আমরা এই সিদ্ধান্তে এসেছি।’’ বামেদের দিক থেকে যে ভোট বিজেপি এবং তৃণমূলের বাক্সে গিয়েছে, সেই সমর্থন ফিরে পাওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন সূর্যবাবু। আর সোমেনবাবুর বক্তব্য, ‘‘উপনির্বাচনে সরকার ভাঙা-গড়া হবে না। কিন্তু রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে মানুষ কী ভাবছেন, সেটা খানিকটা বোঝা যাবে। গণতন্ত্র রক্ষা ও সাম্প্রদায়িকতাকে পরাস্ত করতে ভবিষ্যতের লক্ষ্যে আমরা বামেদের সঙ্গে একসঙ্গে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ গৌরবও বলেন, ‘‘তৃণমূল ও বিজেপি, কেউ কারও বিকল্প নয়।’’
খড়গপুর সদর কেন্দ্রে টানা ৯ বারের বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেসের জ্ঞানসিংহ সোহনপাল (চাচা)। সূর্যবাবু, সোমেনবাবু, প্রদীপবাবুদের অভিযোগ, তৃণমূলের ভোট বিজেপিতে গিয়েছিল বলেই ২০১৬ সালে দিলীপ ঘোষ এখান থেকে বিধায়ক হতে পেরেছিলেন চাচাকে হারিয়ে। খড়়গপুরেই ঘাঁটি গেড়ে থাকা দিলীপবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘আমি জিতেছিলাম নিজের জোরে! কেউ সাহায্য করেনি।’’ আর তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ সরকারের মতে, ‘‘সে বারের প্রার্থী সকলের পছন্দ ছিল না বলে কিছু ভোট বিজেপিতে গিয়েছিল।’’
পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের অনুমতি থাকা সত্ত্বেও তাঁদের সভা চলাকালীন স্লোগান দিতে দিতে যে ভাবে তৃণমূলের মিছিল মঞ্চের পাশ দিয়ে গিয়েছে, তা নিয়ে কমিশনের সিইও আরিজ আফতাবকে অভিযোগ জানিয়েছেন প্রদীপবাবু। জেলার রিটার্নিং অফিসারের কাছেও লিখিত অভিযোগ পাঠানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy