Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভিড়টা যেন ভোটে যায়, গাড়িতেই বোঝালেন বুদ্ধ

ধুলোর ঝড়ের মধ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে গাড়ি থেকে নামানোর ঝুঁকি নেননি চিকিৎসক এবং সিপিএম নেতারা। প্রায় চল্লিশ মিনিট গাড়িতে বসেই সমাবেশ শুনেছেন বুদ্ধবাবু।

পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

পাম অ্যাভিনিউয়ের বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:০৫
Share: Save:

সাদা বুলেটপ্রুফ অ্যাম্বাসাডরের বাঁ দিকের আসনে তিনি। ডান দিকে স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য। মাঝে পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার!

মনের জোরই শেষ পর্যন্ত চমক দেখাল! নাকে অক্সিজেনের সরু চ্যানেল লাগিয়েই ব্রিগেড ময়দানে উপস্থিত হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

তবে ধুলোর ঝড়ের মধ্যে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে গাড়ি থেকে নামানোর ঝুঁকি নেননি চিকিৎসক এবং সিপিএম নেতারা। প্রায় চল্লিশ মিনিট গাড়িতে বসেই সমাবেশ শুনেছেন বুদ্ধবাবু। আর তার ফাঁকেই দলের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সঙ্গে আলোচনা সেরেছেন ব্রিগেডের ভিড় নিয়ে। বোঝাতে চেয়েছেন, কষ্ট করে এত মানুষ সভায় এসেছেন। এঁরা সবাই যাতে বামেদের হয়ে ভোটটা দেন, সেটাই দেখতে হবে। যে কারণে বুদ্ধবাবু মাঠ ছাড়ার পরেই বক্তৃতা করতে উঠে ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘আমাদের ভোট দিতে দেবে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন। আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই, বাধা দিতে এলে কিন্তু প্রতিরোধ হবে।’’

প্রায় সওয়া তিন বছর আগে সিপিএমের শেষ ব্রিগেড সমাবেশে সভাপতি ছিলেন বুদ্ধবাবু। এ বার তাঁর উপস্থিতির পথে প্রধান অন্তরায় ছিল শারীরিক অসুবিধা। তবু অল্প সময়ের জন্য হলেও তিনি ব্রিগেডে যাওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন। রবিবার সমাবেশের সকালে সংবাদপত্রে সেই খবর দেখে আরও উৎসাহিত হয়ে বুদ্ধবাবুর বাড়িতে যোগাযোগ শুরু করেন সিপিএম নেতাদের কেউ কেউ। আবার পুলিশ-প্রশাসনও প্রস্তুত ছিল। স্নান সেরে বুদ্ধবাবু মনস্থ করেন, তিনি ব্রিগেডের জন্য বেরোবেনই।

আরও পড়ুন: বামকে মদত কার, তরজায় দুই শাসক

সচরাচর কলকাতার মধ্যে বুদ্ধবাবুর কনভয়ে থাকত না পাইলট কার। কিন্তু প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় এ দিন দেখা যায়, সামনে পুলিশ পাইলট ভিড়ের মধ্যে রাস্তা করে দিয়ে ব্রিগেড ময়দানে নিয়ে আসছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে। কনভয়ের সঙ্গে ছিল অ্যাম্বুল্যান্সও। মঞ্চের সিঁড়ির সামনে তাঁর গাড়ি পৌঁছতেই শুরু হয়ে যায় হুড়োহুড়ি। নেমে আসেন সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী-সহ সিপিএমের নেতারা। বুদ্ধবাবুর কাছে তাঁরা জানতে চান, তিনি নেমে এক বার মঞ্চে উঠবেন কি না। কিন্তু ধুলোর জন্যই ভরসা পাননি বুদ্ধবাবু। মঞ্চের নীচে উপস্থিত চিকিৎসক তথা সিপিএম নেতা ফুয়াদ হালিমও বাইরে না বেরোনোর পক্ষে সওয়াল করেন।

আরও পড়ুন: তাতালেন দেবলীনা, ভিড়ে লড়াইয়ের মেজাজ

সমাবেশের সভাপতি বিমান বসুর প্রারম্ভিক বক্তৃতা ছাড়া মাঠে বসে সিপিএমের কারও বক্তৃতা অবশ্য শোনা হয়নি বুদ্ধবাবুর। তিনি উপস্থিত থাকাকালীন বক্তৃতা চলছিল শরিক নেতা দেবব্রত বিশ্বাস, সুধাকর রেড্ডি, ক্ষিতি গোস্বামীদের। তার মধ্যেই মঞ্চ থেকে নেমে এসে গাড়িতে বসে পলিটব্যুরোর প্রাক্তন সতীর্থের সঙ্গে কথা বলেন ইয়েচুরি। তিনি বক্তৃতা করতে ফিরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধবাবুও বাড়ির পথ ধরেন।

শারীরিক জটিলতার মধ্যেও বুদ্ধবাবু ব্রিগেডে আসায় খুশি বাম নেতা ও কর্মী-সমর্থকেরা। তবে সমাবেশ শেষে সিপিএমের এক রাজ্য নেতার আক্ষেপ, ‘‘একটা কর্ডলেস মাইকের ব্যবস্থা যদি রাখা যেত! অন্তত দু’মিনিট গাড়িতে বসেই দু’টো কথা বলে যেতে পারতেন বুদ্ধদা!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE