Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফেলবে না রাখবে, সুশান্ত-সঙ্কটে কমিশন

গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গ ও উপদলীয় কার্যকলাপের অভিযোগে গড়বেতার প্রাক্তন বিধায়ক সুশান্তবাবুকে শো-কজ করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। কারণ দর্শানোর সেই চিঠির যে জবাব সুশান্তবাবু দিয়েছেন, জেলা নেতৃত্ব তাতে সন্তুষ্ট নন।

সুশান্ত ঘোষ।—ফাইল চিত্র।

সুশান্ত ঘোষ।—ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৯ ০৫:০১
Share: Save:

জেলা কমিটি চায় কড়া কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হোক। দলের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশের মত, সতর্ক করে দেওয়া হোক তাঁকে। প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষকে নিয়ে দলে এমন টানাপড়েনের জেরে রাজ্য স্তরে দুই সদস্যের কমিশন গড়ছে সিপিএম।

গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গ ও উপদলীয় কার্যকলাপের অভিযোগে গড়বেতার প্রাক্তন বিধায়ক সুশান্তবাবুকে শো-কজ করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম। কারণ দর্শানোর সেই চিঠির যে জবাব সুশান্তবাবু দিয়েছেন, জেলা নেতৃত্ব তাতে সন্তুষ্ট নন। চিঠির জবাব পাওয়ার পরে অভিযুক্ত নেতাকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করার সুপারিশ করেছে জেলা কমিটি। নিয়ম মেনে সেই সুপারিশ অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে আলিমুদ্দিনে। কিন্তু রাজ্য কমিটির কাছে সরাসরি অনুমোদনের জন্য ওই সুপারিশ পেশ করার আগে গোটা বিতর্ক ফের এক বার খতিয়ে দেখতে চায় দল। সেই ভার তাই দেওয়া হচ্ছে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির দুই সদস্য রামচন্দ্র ডোম ও আভাস রায়চৌধুরীকে নিয়ে গড়া কমিশনকে।

কমিউনিস্ট পার্টির শততম প্রতিষ্ঠা দিবস উদযাপনের দিনই আজ, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক। সাংগঠনিক ত্রুটি-বিচ্যুতির নিরিখে কিছু দায়িত্ব রদবদলের বিষয়ে ওই বৈঠকে আলোচনা হওয়ার কথা। দলীয় সূত্রের ইঙ্গিত, সুশান্তবাবুকে নিয়ে বিতর্কের বিষয়ে কমিশনকে ভার দেওয়ার সিদ্ধান্ত রাজ্য কমিটিতে জানিয়ে দেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কমিশনের কাছেই ফের ডাক পড়বে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য সুশান্তবাবুর।

আদালতের বাধানিষেধ থাকায় জেলায় গিয়ে রাজনৈতিক কাজকর্ম দীর্ঘ দিন বন্ধ বাম আমলের ডাকসাইটে নেতা সুশান্তবাবুর। লোকসভা ভোটের আগে পার্শ্ববর্তী জেলা বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে যদুভট্ট মঞ্চে একটি বৈঠক করেছিলেন সুশান্তবাবু। গড়বেতা-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকার সিপিএম কর্মীরা সেই বৈঠকে যোগ দেন। স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রাক্তন মন্ত্রীর এমন কাজে ক্ষুব্ধ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্ব তাঁকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেন। দলীয় সূত্রের খবর, তার পরেও সুশান্তবাবু ভুল স্বীকার করেননি। এখন তাঁরা তাই হেস্তনেস্ত চান!

কিন্তু দলের রাজ্য নেতৃত্বের বড় অংশের মত, দলের নিচু তলার কর্মীদের মধ্যে এখনও সুশান্তবাবুর গ্রহণযোগ্যতা আছে। বিশেষত, পরিবর্তনের পরে নানা আক্রমণের মুখে অনেকে যখন দল বদলেছেন, জেল খেটে এবং মামলার চাপ সয়েও তিনি তা করেননি। জেলা নেতৃত্বের বিরাগভাজন হওয়ায় তাঁকে আরও কোণঠাসা করে দেওয়া উচিত হবে না। একটি ওয়েব পোর্টালে নিজের কলমে তিনি যা লিখেছিলেন, তাঁর প্রেক্ষিতে সুশান্তবাবুকে ডেকে পাঠিয়ে কথা বলেছিল দল। এখন গোটা বিষয়টিই কমিশন আবার দেখতে চায়। এমনকি, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ভার যাঁদের হাতে, সেই দায়িত্বেও কিছু রদবদল হতে পারে বলে একটি সূত্রের দাবি।

যোগাযোগ করা হলে ‘দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে’ সুশান্তবাবু মুখ খোলেননি। তবে দলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘জেলার সুপারিশ রাজ্য স্তরে অনুমোদন বা জেলাকে আবার পুনর্বিবেচনা করতে বলা যায়। এখন রাজ্য পার্টি বিষয়টা নিজের হাতে রাখতে চাওয়ার অর্থ, সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ নয়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Susanta Ghosh CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE