Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ত্রাণে খরচ কত, বিভ্রান্তি ধরলেন অসীম

নবান্নে প্রথম দফার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ত্রাণের হিসেব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী সে দিন জানিয়েছিলেন, পরবর্তী বৈঠকে ত্রাণের বিলি-বণ্টন নিয়ে বিস্তারিত হিসেব দেবেন তিনি। সেইমতোই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা দ্বিতীয় দফার সর্বদল বৈঠকে সেই তথ্য চাইলেন বিরোধী নেতারা।

মঙ্গলবার নবান্নে সর্বদল বৈঠকে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।

মঙ্গলবার নবান্নে সর্বদল বৈঠকে সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৬
Share: Save:

নবান্নে প্রথম দফার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া ত্রাণের হিসেব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী সে দিন জানিয়েছিলেন, পরবর্তী বৈঠকে ত্রাণের বিলি-বণ্টন নিয়ে বিস্তারিত হিসেব দেবেন তিনি। সেইমতোই মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা দ্বিতীয় দফার সর্বদল বৈঠকে সেই তথ্য চাইলেন বিরোধী নেতারা। কিন্তু সরকারের দেওয়া তথ্যে এ বারও সন্তুষ্ট নন বিরোধীরা। রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তের নেতৃত্বে বাম নেতারা বৈঠকে সে কথা জানিয়েও এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।

বিরোধীদের দাবি, বন্যার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে এ দিনও সরকার যে সব তথ্য দিয়েছে, তা অসম্পূর্ণ এবং অসঙ্গতিতে ভরা। ফলে, সন্তোষ জানানোর কোনও সুযোগই নেই। নবান্নে বৈঠক শেষে বেরিয়ে অসীমবাবু বলেন, ‘‘আমাদের কোনও প্রশ্নেরই উত্তর পাইনি। যা-ই জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, তাতেই উত্তর এসেছে, তথ্য অসম্পূর্ণ রয়েছে।’’ নবান্ন থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে বামেদের ধর্না-অবস্থানের মঞ্চে গিয়েও সবর্দল বৈঠক নিষ্ফলা হওয়ার কথাই এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন অসীমবাবুরা।

গত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তাঁর সরকার বন্যাত্রাণে ৯৯২ কোটি টাকা খরচ করে ফেলেছে। কোথায় কী ভাবে এত টাকা খরচ হল, গত ৮ অগস্টের বৈঠকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। আর এ দিনের বৈঠকের পরে এক প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীমবাবু বলেন, ‘‘সরকার জানিয়েছে, বন্যাত্রাণে তারা ৯৯২ কোটি টাকা খরচ করেছে। অথচ প্রধানমন্ত্রীর কাছে মুখ্যমন্ত্রী যে হিসেব দিয়েছেন, তাতে দেখা যাচ্ছে ৬৬০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। ওই অঙ্কের পরিমাণ কমল কী করে, তার কোনও উত্তর দিতে পারেনি সরকার।’’ একই সঙ্গে অসীমবাবু প্রশ্ন তোলেন, বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন এবং পুনর্গঠনের কাজে রাজ্য কেন্দ্রের কাছে ২১ হাজার কোটি টাকা দাবি করেছে। এর কোনও ক্ষেত্রওয়াড়ি হিসেব সরকার দিতে পারেনি। তা ছাড়া, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিলে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি থাকেই না। অসীমবাবুর কথায়, ‘‘তাই বিষয়টি একেবারেই বোধগম্য হয়নি!’’ সরকারি সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকের শেষ লগ্নে মুখ্যমন্ত্রী এমন কথাও বলেছেন যে, তথ্য তাঁরা দিতেই পারেন। কিন্তু দিলেই তো বিরোধীরা আবার মঞ্চে গিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করবে!

বিরোধীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য পাল্টা বলেছেন, ‘‘ওঁদের বক্তব্য মূলত ত্রাণ সংক্রান্ত না হয়ে তথ্য সংক্রান্তই ছিল। কিন্তু আমরা জানি, বন্যাক্লিষ্ট মানুষের পাশে দাঁড়ানোই বড় কথা।’’ পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ২১ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসেবনিকেশ দিয়ে এসেছেন। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে। এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা থেকে বিডিও, এসডিও, ডিএম এবং এসপি-রা যেমন যেমন তথ্য পাঠিয়েছেন, তেমন ভাবেই রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে।

সর্বদল বৈঠকে এ দিন কংগ্রেস ছাড়া বাকি সব বিরোধী দলই যোগ দিয়েছিল। বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি ছাড়াও ছিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এবং বিজেপি-ও। সরকারের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সব দলই। এসইউসি-র তরুণ নস্করের অভিযোগ, ‘‘ত্রাণ বণ্টনের ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্ব করছে সরকার।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ জানান, দলবাজির আশঙ্কা ঠেকাতেই তাঁরা চেয়েছিলেন ত্রাণ বণ্টনে সর্বদল কমিটি গড়ে দিক সরকার। কিন্তু বাস্তবে সেই কাজ হয়নি। প্রাক্তন সেচমন্ত্রী, আরএসপি-র সুভাষ নস্করের কথায়, ‘‘আমরা খালি হাতে এসেছিলাম, খালি হাতেই ফিরে যাচ্ছি!’’ খালি হাতে ফেরার বৈঠকে খাবারের প্যাকেটও হাতে তোলেননি সুভাষবাবুরা!

নবান্নের বৈঠকে এ দিন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র ছিলেন না। তবে বন্যাদুর্গত মানুষের কাছে যাওয়ার সময় হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে সূর্যবাবু ও অন্য বাম নেতাদের গাড়ির উপরে হামলার ঘটনার কথা বৈঠকে তুলেছিল বামেরা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে দিল্লির বিমানবন্দর থেকেই তিনি পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন। আবার মুখ্যমন্ত্রী এ-ও বলেন, এমনটা মাঝেমধ্যে হয়েই থাকে! পার্থবাবুকে এই নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘যাঁকে প্রশ্ন করছেন, তাঁর উপরে অনেক বারই হামলা হয়েছে। কিন্তু তখন এত কান্নাকাটি করিনি!’’ পরে অবশ্য তিনি জানান, বিরোধী দলনেতা যাতে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যেতে পারেন, পুলিশকে সেই পরিস্থিতি তৈরি করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীই। যদিও অসীমবাবুর প্রশ্ন, ‘‘দোষীদের শাস্তি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর পেলাম কই?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE