লোকসভা ভোটের আগে নিজেদের ‘কোটা’র আসন ছাড়তে রাজি হয়নি বাম শরিকেরা। কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতাও হয়নি। ভোটে শেষ পর্যন্ত ভরাডুবির পরে এ বার সিপিএম বাম শরিক নেতৃত্বকে আর্জি জানাল, নিজেদের বিতর্ক দ্রুত নিষ্পত্তি করে কাজে নেমে পড়া হোক।
আলিমুদ্দিনে বুধবার আলাদা করে সিপিআই, ফব এবং আরএসপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন সিপিএমের দুই শীর্ষ নেতা বিমান বসু ও সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেই উঠে এসেছে ভোটের সময়ে বামেদের সংগঠনে ত্রুটির প্রসঙ্গ। সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, মঞ্জুকুমার মজুমদার, ফব-র নরেন চট্টোপাধ্যায়, হাফিজ আলম সৈরানি এবং আরএসপি-র ক্ষিতি গোস্বামী, মনোজ ভট্টাচার্যেরা সূর্যবাবুদের জানিয়েছেন, বহু ক্ষেত্রেই বাম সংগঠন ছিল মূলত প্রার্থী-কেন্দ্রিক। প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে যাওয়া ছাড়া বাকি কাজে সংগঠনকে সে ভাবে দেখা যায়নি। বিজেপি, তৃণমূল বা কংগ্রেস দিল্লি বা কলকাতার কোনও ‘মুখ’ সামনে রেখে ভোটে লড়েছে। বামেদের যে হেতু তেমন কিছু ছিল না, তাই সাংগঠনিক ব্যর্থতা আরও বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে আজ, বৃহস্পতিবার দিল্লি রওনা দিচ্ছেন সিপিএম নেতারা। তার আগে শরিক নেতাদের মুখোমুখি বসে তাঁরা বুঝে নিতে চেয়েছেন, সামনে কী করণীয়। কংগ্রেস-প্রশ্নে শরিক নেতৃত্বের চূড়ান্ত অবস্থানও জানতে চেয়েছেন তাঁরা। বিজেপির উত্থানের মোকাবিলা করতে গেলে এখন থেকেই কংগ্রেসের সঙ্গে যৌথ ভাবে আন্দোলনের রাস্তায় নামা ছাড়া আর ‘পছন্দ-অপছন্দের’ প্রশ্ন নেই বলে সিপিএমের বড় অংশের মত। সিপিআইয়েরও এই বিষয়ে বিশেষ আপত্তি নেই। আরএসপি-র মতে, ভোটের সময়ের জন্য অপেক্ষা না করে কংগ্রেস-প্রশ্নে চূড়ান্ত হেস্তনেস্ত সেরে ফেলা হোক। ফব-র রাজ্য সম্মেলনে অবশ্য কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও সমঝোতার বিরুদ্ধে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল। ভোটে ধরাশায়ী হয়ে এই বিষয়ে এখন ফের ভাবতে হচ্ছে তাদের। বিশেষত, বামফ্রন্টের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কংগ্রেস-বিরোধিতা দেখাতে বহরমপুরে একক ভাবে প্রার্থী দিয়ে আরএসপি যেখানে নির্দল প্রার্থীরও পিছনে থেকেছে!
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘শুধু ভোটের সময়ে আসন সমঝোতার চেষ্টার ফল যে ভাল হচ্ছে না, তা দেখাই যাচ্ছে। তাই কংগ্রেস-প্রশ্নে কী করণীয়, এখন থেকেই ঠিক করে নেওয়া ভাল। তার বাইরে, বাম দলগুলির নিজস্ব আন্দোলনের কর্মসূচিও বাড়াতে হবে।’’
তবে রাস্তায় নামতে চাইলেও ভোটে এমন বিপর্যয়ের পরে স্থানীয় কর্মসূচিতে কর্মী-সমর্থকদের বার করা এখন বাম নেতৃত্বের কাছে বড় চিন্তার বিষয়। সূত্রের খবর, আগামী ১৪ জুন চার বাম দল একসঙ্গে বৈঠকে বসতে পারে। সেই সময়ে ভোট-পরবর্তী বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রদেশ কংগ্রেসও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy