ফ্ল্যাটটি ফের সিল করছে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
শহরের কয়েকটি হোটেলের বিরুদ্ধে তো দেহব্যবসায় মদত দেওয়ার অভিযোগ তো রয়েইছে। এবার শিলিগুড়ির কয়েকটি পাড়ায় ফ্ল্যাট ভাড়া করে দেহব্যবসা চালাতে একটি বড় মাপের অপরাধ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে পুলিশের সন্দেহ। মঙ্গলবার শিলিগুড়ির ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের হাকিমপাড়ার খেলাঘর মোড়ের অদূরের একটি ফ্ল্যাটে হানা দিয়ে কয়েকজনকে গ্রেফতারের পরে ওই সন্দেহ আরও জোরদার হয়েছে। শুধু তাই নয়, একশ্রেণির মাদকের কারবারি, চোরাচালানকারীরাও ওই চক্রে যুক্ত বলে পুলিশ বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, শহরে কোনও ধরনের বেআইনি কার্যকলাপ বরদাস্ত করা হবে না। ওই অপরাধ চক্রে যুক্ত সকলকে চিহ্নিত করে গ্রেফতার করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
তবে পুলিশ তদন্তে নেমে যে সব তথ্য পেয়েছে তা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে মানছেন তদন্তকারী অফিসারদের অনেকেই। যেমন, প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, শহর ও লাগোয়া এলাকার গরিব পরিবারের মেয়েদের কাজের টোপ দিয়ে ফুঁসলে দেহব্যবসার ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। কয়েকটি ক্ষেত্রে কলেজ পড়ুয়া ছাত্রীকে প্রেমের টোপ দিয়ে ওই ধরনের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়ে আপত্তিকর ছবি তুলিয়ে দেহব্যবসায় নামতে বাধ্য করা হয়েছে। আবার খদ্দের হিসেবে যাওয়া কলেজ ছাত্রকে ‘ব্ল্যাকমেল’ করে বাইক চুরি, ছিনতাইয়ের মতো পেশা বেছে নিতে বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অনুমান করছে পুলিশ। ‘নীল ছবি’ তৈরির একটি চক্রও একটি ফ্ল্যাটবাড়িতে সক্রিয় বলে অভিযোগ গিয়েছে পুলিশের কাছে।
শহরের কেন্দ্রস্থল হাকিমপাড়া ও লাগোয়া কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ইদানীং বেশ কয়েকটি বহুতলে সন্দেহজনক গতিবিধির লোকজন দেখা যাচ্ছে। যেমন খেলাঘর মোড়ের অদূরের বহুতলটির কথাই ধরা যাক। সেখানে নীচতলার ফ্ল্যাটটি জনৈক প্রোমোটারের হেফাজতে ছিল বলে পুলিশ জেনেছে। সেটি কী ভাবে, কার মারফতে দেহব্যবসা, মাদকের কারবার ও বাইক-গাড়ি চুরি চক্রের সন্দেহভাজন পান্ডা ভাড়া নিল তা নিয়ে ধন্দে পড়েছে পুলিশ। ওই বাড়ির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর সুজয় ঘটক দাবি করেছেন, আবাসিকদের কয়েকজন নীচতলার ফ্ল্যাটে কিছু ছেলেমেয়ের সন্দেহজনক গতিবিধির কথা বলেছিলেন। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘সেই অভিযোগ গুরুত্ব পেলে হয়তো ঘটনা এতদূর গড়াত না। যাই হোক আমরা ওয়ার্ড কমিটির পক্ষ থেকে পাড়ার প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের আবাসিকদের আরও সতর্ক থাকার অনুরোধ করব।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেহব্যবসার মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ধৃত এক যুবক জানিয়েছেন, তিনি মাটিগাড়া এলাকার বাসিন্দা। একজন দালালের মাধ্যমে তিনি ওই ফ্ল্যাটের সন্ধান পেয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, ফ্ল্যাটেই নেশার যাবতীয় আয়োজন ছিল। শুধু তাই নয়, পুলিশ ওই ফ্ল্যাট থেকে বাজেয়াপ্ত করা নথিপত্র, সামগ্রীর সূত্রে জানতে পেরেছে, শহরের অন্তত চারটি হোটেলে ওই চক্রটি দেহব্যবসা চালায়। আরও একাধিক অ্যাপার্টমেন্টেও ওই চক্র ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে রেখে দেহব্যবসা, চোরাকারবার, নেশার আসর চালাচ্ছে বলে আঁচ করছে পুলিশ।
কী ভাবে চক্রটি জাল ক্রমশ বিছিয়ে দেয় সেই ব্যাপারেও স্পষ্ট তথ্য পুলিশের হাতে গিয়েছে। যেমন, নামী বেসরকারি প্রসাধনী বিক্রেতা সংস্থার নাম ভাঙিয়ে প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করানোর টোপ দিয়ে প্রথমে তরুণীদের প্রলুব্ধ করা হয়। সুযোগ বুঝে তাদের মোটা টাকার টোপ দিয়ে দেহব্যবসায় যুক্ত করা হয়। পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই চক্রের সঙ্গে শহরের ব্যবসায়ীদের একাংশের যোগ রয়েছে। মোবাইলের মাধ্যমে মেয়েদের ছবি পাঠিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীর দরাদরির কিছু নমুনাও পুলিশের হাতে পৌঁছেছে। শহরের একশ্রেণির অসাধু প্রোমোটারের ভূমিকাও সন্দেহের ঊর্ধ্বে নয় বলে পুলিশের দাবি। শিলিগুড়ির এসিপি (পূর্ব) পিনাকী মজুমদার জানান, তাঁরা সব কিছু খতিয়ে দেখেই কড়া পদক্ষেপ করবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy