Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

ভিড়ে ঠাসা বাস, আনলকিং-এর প্রথম দিনেই বিধিনিষেধ শিকেয়

ধাপে ধাপে লকডাউন তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার থেকে গণপরিবহণের সংখ্যাও বাড়ল শহরের রাস্তায়।

শিকেয় দূরত্ববিধি। প্রথম দিনেই জমজমাট বাগড়ি মার্কেট।—নিজস্ব চিত্র।

শিকেয় দূরত্ববিধি। প্রথম দিনেই জমজমাট বাগড়ি মার্কেট।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ২১:৫৩
Share: Save:

দূরত্ব বিধি শিকেয় উঠল প্রথম দিনেই। লকডাউন শিথিল হতেই যেন সংক্রমণ নিয়ে যাবতীয় ভাবনাই উধাও। কলকাতা এবং শহরতলির প্রায় সমস্ত রাস্তায় নিমেষে ফিরল যানজট। ২০ জনের বেশি যাত্রী বাসে না-তোলার বিধি যেন কেউ জানেনই না! ঠাসা ভিড় নিয়ে শহরের পথে ছুটল বাস। দোকান-বাজার হোক বা পাড়ায় ঢোকা-বেরনোর মূল রাস্তা, সর্বত্র জমজমাট সমাগম দেখা গেল সোমবার সকাল থেকেই।

ধাপে ধাপে লকডাউন তুলে নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার থেকে গণপরিবহণের সংখ্যাও বাড়ল শহরের রাস্তায়। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বিধি সম্পর্কে যে নির্দেশিকা এখনও জারি রয়েছে এবং আগামী বেশ কিছু দিন থাকবে, আনলকের প্রথম দিন থেকেই সে সব সাঙ্ঘাতিক ভাবে অগ্রাহ্য করা শুরু হয়ে গেল।

সরকারি বাস নিয়ন্ত্রিত সংখ্যায় আগেই নেমেছিল রাস্তায়। এ দিন বেসরকারি বাসও পথে নেমেছে। ফলে অনেকে আশা করেছিলেন ভোগান্তি কিছুটা কমবে। যখন শুধু সরকারি বাস চলছিল, তখন যে ভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছিল বাসের জন্য, বেসরকারি বাস নামার পরে সে পরিস্থিতি কিছুটা বদলাবে বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু এ দিন যাত্রীর সংখ্যা আচমকা এতটাই বেড়ে গিয়েছে রাস্তায় যে, ভিড় সামলাতে হিমশিম খেয়েছে বাসগুলি।

আরও পড়ুন: এখনও নিয়ন্ত্রণে আসেনি হাওড়া, সঙ্গে চিন্তা বাড়াচ্ছে বীরভূমের কোভিড পরিস্থিতি

বাসে উঠলেও দূরত্ব বিধি মেনে চলতে হবে, গায়ে গায়ে বসা যাবে না, একসঙ্গে ২০ জনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না— এমন একাধিক বিধিনিষেধ জারি করে রেখেছে প্রশাসন। কিন্তু এ দিন উত্তর থেকে দক্ষিণ, সর্বত্রই সে সব বিধিনিষেধকে পাত্তা না দেওয়ার ছবি দেখা গিয়েছে। ডানলপ হোক বা গড়িয়া, উল্টোডাঙা হোক বা মিন্টো পার্ক, অনেক বাসেই ঠাসাঠাসি ভিড় দেখা গিয়েছে। সব আসনেই যাত্রী শুধু নয়, ভিড়ে ঠাসা বাসে গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে যাত্রীরা যাচ্ছেন, এমন ছবিও শহরের নানা প্রান্তেই দেখা গিয়েছে এ দিন।

পুলিশ কোথাও সক্রিয় ছিল না, এমন নয়। বিভিন্ন এলাকাতেই বাস টার্মিনাসে নজরদারি চালাতে দেখা গিয়েছে পুলিশকে। টার্মিনাস ছেড়ে বেরনোর পরে রাস্তায় অপেক্ষমান যাত্রীদের কখনও কখনও বাস কন্ডাক্টররা অনুরোধ করেছেন, ভিড় না বাড়াতে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সে সবে কাজ হয়নি। বাসে ভিড় দেখেও ভিড় আরও বাড়িয়েছেন অনেকেই।

আরও পড়ুন: কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বরের পথে হেঁটেই বন্ধ শহরের অধিকাংশ মন্দির

শুধু গণপরিবহণে নয়, বাজার-দোকান বা রাস্তাঘাটেও একই ছবি দেখা গিয়েছে এ দিন। উত্তর কলকাতার বাগমারি বা শহরতলির টবিন রোড হোক বা দক্ষিণে টালিগঞ্জ থেকে বেহালার নানা এলাকা, রাস্তাঘাটে এক লাফে ভিড় বেড়ে গিয়েছে সোমবার। মুদিখানা থেকে মিষ্টির দোকান, শাক-সব্জির পসরা থেকে মাছ-মাংসের দোকান, সর্বত্র এ দিন আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনের মতোই ভিড় দেখা গিয়েছে। ন্যূনতম দূরত্ব বজায় না রেখে গায়ে গায়ে দাঁড়িয়েই জিনিসপত্রের দরদাম করতে দেখা গিয়েছে লোকজনকে। রাস্তাঘাটে মাস্ক ছাড়াই বেরিয়ে পড়তে দেখা গিয়েছে অনেককে।

কন্টেনমেন্ট জোন ছাড়া অন্যান্য এলাকায় লকডাউন আর থাকছে না এবং ধাপে ধাপে নানা বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে বলে কেন্দ্র জানিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব বিধি ভুলে অবাধে সমাগম করার পরিস্থিতি এখনও তৈরি যে হয়নি, সে কথাও প্রশাসনের তরফে বার বারই জানানো হচ্ছে। কিন্তু ৭১ দিনের লকডাউন অতিক্রান্ত হওয়ার পরে আনলকিং-এর প্রথম দিনেই সেই ব্যক্তিগত স্তরের সতর্কতার কথা যেন ভুলে গেলেন বিরাট সংখ্যক মানুষ। ফলে প্রশাসনের উদ্বেগও ফের বাড়ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE