Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

ছ’মাস পরেও টাটকা আমপানের আঘাত

ছ’মাস আগে, ২০ মে সকালে সমুদ্র লাগোয়া সাগরের এই অংশেই আছড়ে পড়ে আমপান। ছ’মাস পেরিয়ে আমপানের সেই ‘জিরো পয়েন্টে’ গিয়ে দেখা গেল, ভয়াবহ ক্ষতে কার্যত প্রলেপ পড়েনি এখনও।

ধ্বংসের চিহ্ন। এখনও। সাগরের জিরো পয়েন্টে। ছবি: দিলীপ নস্কর

ধ্বংসের চিহ্ন। এখনও। সাগরের জিরো পয়েন্টে। ছবি: দিলীপ নস্কর

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২০ ০৩:৪৮
Share: Save:

সমুদ্রের পাড়ে ভাঙা ঘরটুকু ছ’মাসে সারিয়ে উঠতে পারেননি রণজিৎ পাড়ুই।

ছেলেমেয়েদের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে নিজে একখণ্ড ত্রিপল টাঙিয়ে পাশেই মাথা গোঁজার আস্তানা বানিয়ে ‘সম্পত্তি’ আগলাচ্ছেন। বললেন, ‘‘রাক্ষুসে আমপান সব শেষ করে দিয়েছে!’’

ছ’মাস আগে, ২০ মে সকালে সমুদ্র লাগোয়া সাগরের এই অংশেই আছড়ে পড়ে আমপান। ছ’মাস পেরিয়ে আমপানের সেই ‘জিরো পয়েন্টে’ গিয়ে দেখা গেল, ভয়াবহ ক্ষতে কার্যত প্রলেপ পড়েনি এখনও। ছন্নছাড়া অবস্থা সাগরের ধবলাট পঞ্চায়েতের শিবপুর গ্রামের। বহু মানুষই অন্যত্র সরে গিয়েছেন।

রণজিৎ জানান, ঘর সারানোর ক্ষতিপূরণের টাকা পেতে পঞ্চায়েতের দোরে দোরে ঘুরেছেন। হাতে পেয়েছেন মাত্র ৫ হাজার টাকা। তা দিয়ে আর কী হয়! রণজিতের মতো কেউ কেউ দাঁতে দাঁত চেপে রাত কাটাচ্ছেন পৈত্রিক ভিটের ধ্বংসস্তূপ আগলে। প্রতিবেশী সামন্ত কালসা, তরুণ কালসা, বিশ্বনাথ কালসারাও জানালেন, বাড়িঘর ঝড়ে উড়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ কিছুই পাননি।

দুই ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অংশ এখনও আমপানের ক্ষতি পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি। কংক্রিটের বাঁধের দাবি তো আয়লার পর থেকেই উঠছে। সেই কাজ এখনও অনেক জায়গাতেই বাকি। যাঁরা চাষ করতেন, তাঁরা অনেকেই জানাচ্ছেন, নোনা জল ঢুকে জমির উর্বরতা শেষ। মাছ চাষের পুকুরও সংস্কার করার টাকা নেই অনেকের। অসংখ্য পানের বরজ নষ্ট হয়েছিল আমপানের দাপটে। অনেক চাষিই এখনও মাথা তুলতে পারেননি।

এলাকায় বিকল্প কাজ না মেলায় ভিনরাজ্যে পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে। হিঙ্গলগঞ্জের রতন বৈদ্য বলেন, ‘‘করোনার মধ্যে আটকে পড়েছিলাম ভিনরাজ্যে। খাওয়া জুটছিল না। ভেবেছিলাম, দেশের বাড়িতে এসে দু’মুঠো খাবার ঠিক মিলবে। কোথায় কী! আবার ফিরতে হচ্ছে তামিলনাড়ুতে।’’

কিন্তু একশো দিনের কাজ যে দিচ্ছে সরকার? রতন বলেন, ‘‘তাতে ক’টা টাকাই বা পাব? অন্য রাজ্যে কাজ করলে সারা মাসে পনেরো-বিশ হাজার টাকা রোজগার।’’ আমপানের পরে ক্ষতিপূরণ-দুর্নীতির অভিযোগে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। শাসক দল তো বটেই, বিরোধীরাও যেখানে যেখানে ক্ষমতায়, সেখানে গরিব মানুষের ক্ষতিপূরণের টাকা গায়েব হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। আমপানের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির দুর্নীতিতে অভিযুক্ত দলীয় নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বলেছিলেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু সেই আশ্বাস বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর হয়নি। হাওড়ার সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির দলীয় সভাপতি এবং জগৎবল্লভপুরের পতিহাল পঞ্চায়েতের দলীয় উপপ্রধানকে পদ থেকে সরানোর কথা বলা হয়েছিল। তাঁরা এখনও স্বপদে রয়ে গিয়েছেন। দলীয় নির্দেশ না-মেনে এখনও পদে রয়ে গিয়েছেন হুগলির চণ্ডীতলা-২ ব্লকের গরলগাছার প্রধান। বহু ক্ষেত্রে ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্তদের কাছ থেকে এখনও টাকা ফেরেনি বলে অভিযোগ। হুগলিতে প্রায় ৮০ হাজার গাছ ঝড়ে উপড়ে গিয়েছিল। সেগুলি কোথায় গেল, হিসেব মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE