Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan

ভরা কোটাল, বাঁধ সারাইয়ের চেষ্টা

আমপানের দাপটে মাইলের পর পর মাইল বাঁধ ভেঙেছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়।

ছবি: পিটিআই।

ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০২০ ০২:৩৮
Share: Save:

ভাড়া করে আনা হয়েছে জেনারেটর। বাঁধের পাশে বাঁশ পুঁতে লাগানো হয়েছে আলো। জেনারেটর চলছে রাতভর। বাঁধ ছাপিয়ে ফের জল ঢুকতে পারে, এই আশঙ্কায় রাত জেগে বাঁধ পাহারা দিচ্ছেন হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি গ্রামের মানুষ। তাঁদের কথায়, ‘‘সামনেই ভরা কোটাল। আমাদের লড়াইটা এখন বাঁধ বাঁচানোর।’’

আমপানের দাপটে মাইলের পর পর মাইল বাঁধ ভেঙেছে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। ভেসেছে অসংখ্য গ্রাম। সেই বাঁধ মেরামতির চেষ্টা শুরু হয়েছে কোথাও কোথাও। জুন মাসের গোড়াতেই পূর্ণিমা। নদীতে জল বেড়ে নতুন করে বিপত্তি বাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা আছে। বহু জায়গায় নদীবাঁধ ধুয়ে গিয়ে সরু সুতোর আকারে দাঁড়িয়ে। সেখানেও মাটি ফেলতে না পারলে ভরা কোটালে ওই বাঁধ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে বলে স্থানীয় মানুষের আশঙ্কা। তার মধ্যে বুধবার সন্ধের পর থেকে ফের প্রাকৃতিক দুর্যোগে কাজে সমস্যা হচ্ছে বলে জানাচ্ছে প্রশাসন।

রূপমারি গ্রামে গিয়ে কথা হল সুদর্শন সর্দারের সঙ্গে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা একদম রাস্তার পাশে বাস করি। এক চিলতে বাড়ি। বাঁধ ছাপিয়ে রাস্তার সামনে যে ভাবে কোমর সমান জল চলে এসেছে, তা দেখে খুবই ভয়ে আছি। পূর্ণিমার কোটালে বড় বিপত্তি না ঘটে!’’

আরও পড়ুন: লকডাউন যৌক্তিক, কিন্তু ধাপে ধাপে তোলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

বিশপুর পঞ্চায়েতের দুর্গাপুর, ধরমবেড়িয়া গ্রামেও স্থানীয় বাসিন্দারা রাত জেগে ক’দিন বাঁধ পাহারা দিয়েছেন বলে জানালেন। সন্দেশখালি ২ ব্লকের ডাঁসা নদীর বাঁধ একাধিক জায়গায় ভেঙে সন্দেশখালি পঞ্চায়েতের ঢোলখালি-সহ একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সেখানে বাঁধ মেরামতির কাজ করছেন শতাধিক শ্রমিক। কাজ চলছে বাইনাড়াতেও। কংক্রিটের বাঁধ তৈরির দাবি আছে মানুষের।

আরও পড়ুন: বিধি মেনেই দরজা খুলতে চায় অধিকাংশ ধর্মস্থান

সন্দেশখালির রমা সর্দার, কমল মণ্ডলের কথায়, ‘‘প্লাস্টিক, ত্রিপল কিছুই পাইনি। এ দিকে, ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে। বাঁধ মেরামতির কাজ সময় মতো শেষ না হলে দুর্গতির শেষ থাকবে না।’’ বসিরহাট মহকুমা সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মহকুমায় প্রায় ৮৪৮ কিলোমিটার নদীবাঁধ আছে। দিন কয়েক আগে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা বসিরহাটে বৈঠক করেন। আলাপন পরে জানান, বসিরহাটে প্রায় ৫০০টি জায়গায় বাঁধ নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫টি জায়গায় ক্ষতির পরিমাণ বেশি। বাঁধ মেরামতিতে আপাতত প্রায় ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।

এ দিকে, দুই জেলাতেই বেশ কিছু ঠিকাদার জানাচ্ছেন, অনেক ক্ষেত্রে আগের কাজের টাকা পাননি। এই পরিস্থিতিতে বড় কাজ করার জন্য উপযুক্ত ঠিকাদারের অভাব দেখা দিয়েছে। তবে বহু জায়গায় গ্রামের মানুষ নিজেরাই এগিয়ে এসেছেন।

গ্রামের মহিলাদের দিয়ে একশো দিনের কাজে বাঁধ সারানো হচ্ছে ক্যানিংয়ে। কাজ চলছে গোসাবা, বাসন্তীতেও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতের তরফ থেকে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে গ্রামবাসীদের কাজে লাগিয়ে বাঁধে মাটি দিয়ে মেরামতির কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” ক্যানিং মহকুমায় প্রায় ৫১ কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেচ দফতরের হিসেব অনুযায়ী, গোসাবা ব্লকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিছু জায়গায় ঘূর্ণিঝড়ের পর দিনই মেরামত করে নদীর জল আটকানো গিয়েছে বলে দাবি সেচ দফতরের। রাঙাবেলিয়া, কালিদাসপুর ৮ ও ৯ নম্বর এবং পুঁইজালি এলাকায় নদীবাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। গোসাবা ব্লকের সেচ দফতরের আধিকারিক মিহির দাস বলেন, ‘‘আমাদের কর্মীরা কাজ করছেন। গ্রামবাসীরাও সহযোগিতা করছেন।’’ বাসন্তী ব্লকে প্রায় সাড়ে ১৬ কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত। অন্তত ১১টি জায়গায় বাঁধ একেবারে ভেঙে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই সমস্ত জায়গায় বাঁধ বেঁধে গ্রামে জল ঢোকা বন্ধ করা গিয়েছে বলে প্রশাসনের দাবি। ক্যানিং ১ ব্লকে প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার নদীবাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মেরামতির কাজ চালাচ্ছে সেচ দফতর।

জয়নগর ডিভিশনের সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র কিংশুক মণ্ডল বলেন, ‘‘সমস্ত জায়গাতেই নদীর জল আটকে দেওয়া গিয়েছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আগামী পূর্ণিমার আগে সব জায়গায় বাঁধের কাজ শেষ করাই এখন চ্যালেঞ্জ।’’

(তথ্য সহায়তা: নির্মল বসু, প্রসেনজিৎ সাহা ও নবেন্দু ঘোষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone Hingalganj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE