Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Cyclone Amphan in West Bengal

উঠোনে ভাসে পুতুল, ঘরকন্না, ঠাঁই সড়কে

এগারো দিন কেটেছে। আগল পড়েনি বিদ্যাধরীর নদী বাঁধে। ভাঙা বাড়িতে জলের ঝাপটা লাগছে।

তছনছ। —নিজস্ব চিত্র

তছনছ। —নিজস্ব চিত্র

প্রদীপ্তকান্তি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০২০ ০৫:৪৮
Share: Save:

টালিবিহীন চালে ঝুলছে গুটিকয়েক বাঁশ। কোনও রকমে জেগে আছে কয়েকটা আধভাঙা দেওয়াল। ঘাড় কাত করে মাটিতে মুখ গুঁজেছে দরমার বেড়া। জামাকাপড়ের ঠাঁই ভাঙা বাঁশের ডাইঁয়ে। তাতে হেলান দিয়ে চাটাই। যা এখন সর্বক্ষণের সঙ্গী। জল বাড়লে চাটাই বগলদাবা করে দৌড়ে উঁচু জায়গায় আস্তানা নিতে হয়। সাড়ে সাত মাসের তিস্তাকে কাঁখে নিয়ে মিনাঁখার মোহনপুরের বাসন্তী সর্দার বলেন, ‘‘একটু পরেই কোমর সমান জল হবে। দিনে তাও বোঝা যায়। রাতে সে সুযোগ নেই। তাই চাটাই নিয়ে রাস্তায় থাকি।’’ সবেমাত্র জোয়ার শুরু হয়েছে তখন। পিচ রাস্তার জলে ভাসছে মাথা ও জামাকাপড়হীন একটি পুতুল— আঙুল দিয়ে দেখাল দুই বালিকা।

এগারো দিন কেটেছে। আগল পড়েনি বিদ্যাধরীর নদী বাঁধে। ভাঙা বাড়িতে জলের ঝাপটা লাগছে। দিনের আলোয় জল-কাদা মাখামাখি করে মাথা গোঁজার ঠাঁইয়ের হাল হকিকত দেখতে আসেন বাসন্তীরা। কাদা-জলে বাড়িতে ঢুকতে পারছেন না বাসন্তী ও প্রতিবেশীরা। মোহনপুরের অনেক বাসিন্দাই ‘কমিউনিটি কিচেন’ থেকে ভাত, আলু-পটলের তরকারির লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে। কাছের ‘বড় স্কুল’ বাড়িতে ঠাঁই হয়নি তাঁদের। কেন?

একুশ শতকের ভারতে দাঁড়িয়ে স্নাতক যুবক চতুস সর্দার বললেন, ‘‘আমরা আদিবাসী। এসটি (তফসিলি জনজাতি)। তাই আমাদের দূরে ঠেলে রাখা হয়। কিছুই পাচ্ছি না। খাবারেও সরকারের সাহায্য পাচ্ছি না। বাড়িও হয় না। ভাঙা ঘরেই থাকতে হয়। এ দিকে কেউ আসে না।’’ প্রায় একই অভিযোগ মোহনপুরের হরিণহুলার বাসিন্দা রেণুকার। বিডিও শেখ কামরুল ইসলামের দাবি, ‘‘ওই এলাকার সব মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। খাবার পাননি, এমন কেউ বলেননি।’’

আরও পড়ুন: দাঙ্গাহাঙ্গামা নিয়ে অমিতকে পাল্টা বিঁধলেন অভিষেক

হরিণহুলা ছেড়ে হেঁটে এগোতেই পিচ রাস্তা। খটখটে শুকনো রাস্তা। কিন্তু কোনও গাড়ি নেই। মোহনপুরের ভিতরের বিভিন্ন অংশ এখনও জলে ভাসছে। সেখানকার অনেকে বাঁশ-ত্রিপল নিয়ে রাস্তার পাশে আস্তানা গেড়েছেন। প্রশাসনিক উদ্যোগেই খাবারের ব্যবস্থা হয়েছে মল্লিকঘেরির পাশে প্রাথমিক স্কুলে। প্রভাবশালীরা বলছেন, সেখানে গিয়েই খেতে হবে, অন্যত্র রান্না করা চলবে না। কিন্তু সেই স্কুলে যেতে কোমর জল ভাঙতে হবে। সকলেই জলে ক্লান্ত। মধ্যম মোহনপুরের বাসিন্দারা তাই নিজেরাই খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁদের কথায়, ‘‘বলছে সকালে গিয়ে নাম লিখিয়ে পরে খাবার আনতে। কোলের বাচ্চা নিয়ে দু’বার করে জল ভাঙা সম্ভব! বাচ্চারা কী করবে?’’ বিডিও জানাচ্ছেন, কোথাও নিজেরা রান্না করে খেতে চাইলে, প্রশাসন সব রকম সাহায্য করবে। তাঁর কথায়, ‘‘আমাকে জানালে সব পৌঁছে দেব। কেউ না-খেয়ে থাকবে না।’’ ওই স্কুলের পাশেই সাইক্লোন সেন্টার। জনসংখ্যার নিরিখে যথেষ্ট নয়। বাছড়া এমসিএইচ হাইস্কুলের কাছে ওই ধরনের সেন্টারের দাবি করছে মোহনপুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE