প্রস্তুতি: সাগরে পাঠানো হচ্ছে উদ্ধার ও ত্রাণের সামগ্রী। নিজস্ব চিত্র
বাড়ি ফেরার জন্য সকাল সকাল বকখালি হোটেল থেকে বাক্সপত্তর নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন কিছু পর্যটক। কিন্তু পুলিশ তাঁদের পরামর্শ দিল, এই পরিস্থিতিতে এত দূরের পথে যাত্রা না করাই ভাল। হোটেলেই থেকে যান। অগত্যা সকলে আবার ফিরে গেলেন হোটেলের ঘরে।
কলকাতা থেকে এসেছেন বিজন গুপ্ত। বললেন, ‘‘এই পরিস্থিতিতে থেকে যেতে হচ্ছে। বেশ ভয় ভয়ই লাগছে। দেখা যাক, কী অভিজ্ঞতা অপেক্ষা করে আছে!’’ বকখালির এক হোটেল মালিক তপন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অতিথিদের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয়, তা খেয়াল রাখা হচ্ছে।’’
সুন্দরবনে ঘুরতে আসা পর্যটকদের শনি-রবিবার ঘোরার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পর্যটকদের লঞ্চ, ভুটভুটি করে সুন্দরবন ভ্রমণে যেতে বারণ করা হয়েছে। অনেক পর্যটক আটকে পড়েছেন। ট্যুর অপারেটরদের পক্ষ থেকে পর্যটকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে পরে তাঁদের সুন্দরবন ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কোনও কোনও ট্যুর অপারেটর। তবে অনেকে প্যাকেজ বাতিল করে পর্যটকদের টাকা ফেরতও দিচ্ছেন।
শনিবার সকাল থেকেই বকখালি সমুদ্র সৈকত ছিল সুনসান। পুলিশ টহল দিচ্ছে। আটকে পড়া পর্যটকেরা হোটেলেই রয়েছেন। সারা আকাশ মেঘে ঢাকা। ঝিরঝিরে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল সকাল থেকে। দিন গড়াতে বৃষ্টির পরিমাণ বেড়েছে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। সারা বকখালি এলাকা বন্ধের চেহারা নিয়েছে। পথেঘাটে মানুষজন নেই বললেই চলে। গাড়ি সামান্য। গুটি কয়েক সরকারি বাস পথে দেখা গিয়েছে। বেসরকারি বাস বন্ধ।
মৌসুনি দ্বীপ, জি প্লট, আই প্লট, কে প্লট— পাথরপ্রতিমার বিভিন্ন দ্বীপ এলাকার কিছু নদী বাঁধ ঝোড়ো হাওয়া ও জোয়ারের দাপটে ভেঙে গিয়েছে। একই অবস্থা নামখানা ব্লকের বেশ কিছু নদী বাঁধেরও।
কাকদ্বীপের লট ৮ জেটি ঘাটেও সকাল থেকে ভেসেল চলাচল বন্ধ ছিল। কেন্দ্রীয় বির্পযয় মোকাবিলা দল হাজির হয় ওই ঘাটে। বড় ট্রাকে করে আনা সরঞ্জামগুলি তাঁরা ভেসেলে তোলেন। ভেসেলটি সাগরের কচুবেড়িয়ার দিকে রওনা দেয়। ঘাটে ছিলেন সুন্দরবন জেলা পুলিশ সুপার বৈভব তিওয়ারি। তিনি জানান, কাকদ্বীপ মহকুমার সাগর, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ ব্লকের মধ্যে সাগরের ১১ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। নামখানা ব্লকে সংখ্যাটা প্রায় সাড়ে ৫ হাজার। এখনও পর্যন্ত পাথরপ্রতিমার সাড়ে ৮ হাজার ও কাকদ্বীপের ৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। লাগাতার উদ্ধারের কাজ চলছে। উপকূলবর্তী এলাকা থেকে সমস্ত মানুষকে ত্রাণ শিবিরে আনা হচ্ছে বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে। সেখানে শুকনো খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে।
সমুদ্রে মৎস্যজীবীদের যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সেচ দফতর, পূর্ত দফতর, বন দফতর, জল সরবরাহ দফতর— সমস্ত দফতরকেই উদ্ধার কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ দিন কাকদ্বীপে যান জেলাশাসক পি উলগাথান। তিনি সরেজমিন খতিয়ে দেখেন বিভিন্ন ত্রাণ শিবির। সঙ্গে ছিলেন কাকদ্বীপ মহকুমাশাসক শৌভিক চট্টোপাধ্যায় ও পুলিশ অফিসার অনিল রায়।
প্রতিটা ঘাটে স্পিড বোট ও লাইফ জ্যাকেট মজুত রাখা হয়েছে। বেলা ২টোর পর থেকে তুমুল বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে প্রবল হাওয়া।
ক্যানিংয়ে রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। ঝড়খালিতে ধান জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাইকে প্রচার চলছে। যাঁরা কাঁচা বাড়িতে রয়েছেন, তাঁদের ত্রাণ শিবিরে নিয়ে আসা হচ্ছে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে বেশ কয়েকটি ঘাটে খেয়া পারাপার বন্ধ। মৎস্যজীবীরা বেরোননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy