Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

মৃত মেয়ের অঙ্গদান সফল করতে পাড়ি ১৭২ কিলোমিটার!

অসমের বারপেটা জেলার কলবাড়ি গ্রামের মধুস্মিতা বায়েন (১৩) ভুগছিল মস্তিষ্কের জটিল রোগে। তার বাবা দিলীপ বায়েন মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সিআইএসএফ কর্মী।

মৃত কিশোরীর বাবা, মা। ছবি: বিশ্বনাথ মশান

মৃত কিশোরীর বাবা, মা। ছবি: বিশ্বনাথ মশান

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:৩৪
Share: Save:

দূরত্ব প্রায় ১৭২ কিলোমিটার। দুর্গাপুরের বিধাননগরের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে কলকাতার এসএসকেএম— পাড়ি দিতে সময় লাগল দু’ঘণ্টারও কম সময়। রবিবার ‘গ্রিন করিডর’ করে অঙ্গ আনা হল এই পথে। দুর্গাপুরের ওই হাসপাতালে মৃত এক কিশোরীর এসএসকেএম হাসপাতালে দু’টি কিডনি ও লিভার তিন জনের দেহে প্রতিস্থাপনের কাজও শুরু হল রাতেই।

অসমের বারপেটা জেলার কলবাড়ি গ্রামের মধুস্মিতা বায়েন (১৩) ভুগছিল মস্তিষ্কের জটিল রোগে। তার বাবা দিলীপ বায়েন মেজিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সিআইএসএফ কর্মী। ১১ নভেম্বর দুর্গাপুরের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মধুস্মিতাকে। ১৭ নভেম্বর বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চার জন এবং ওই বেসরকারি হাসপাতালের দু’জন চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে ‘ব্রেন ডেথ’-এর বিষয়ে নিশ্চিত হন। সহকর্মী ও ডাক্তারদের প্রস্তাবে মেয়ের অঙ্গদানে সম্মত হন দিলীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী অর্চনাদেবী। ছাড়পত্র পেতেই শুরু হয় তোড়জোড়।

কাজটা সহজ ছিল না। কারণ, জাতীয় সড়কে যেখানে গ্রিন করিডর করতে হত, তা পড়ে মোট চার জেলার অধীনে। পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমান, হুগলি ও হাওড়া— চার জেলার পুলিশের মধ্যে দ্রুত সমন্বয় তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। বিকেলে এসএসকেএম থেকে পৌঁছয় চিকিৎসক দল। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে দুর্গাপুর থেকে অঙ্গ নিয়ে রওনা দেয় অ্যাম্বুল্যান্স। তা এসএসকেএমে পৌঁছয় রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে।

আরও পড়ুন: ১ ঘণ্টা ৫৫ মিনিটে ১৭২ কিমি! প্রতিস্থাপনের জন্য অঙ্গ পৌঁছল এসএসকেএমে

আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট জানায়, বুদবুদ পর্যন্ত এলাকায় ২ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে যান নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা, দশটি মোবাইল টিম ও শ’দুয়েক পুলিশকর্মী মোতায়েন ছিল। পূর্ব বর্ধমানে প্রয়োজন অনুযায়ী নানা মোড় সাময়িক বন্ধ করে দেয় পুলিশ। হুগলিতেও নানা এলাকায় পুলিশি ‘কর্ডন’-এর পাশাপাশি কিছু জায়গায় সাময়িক ‘নো-এন্ট্রি’ করা হয়। ফাঁকা রাখা হয় ডানকুনি টোলপ্লাজার ‘ভিআইপি লেন’। হুগলি পার করে হাওড়ায় ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের তিন কিলোমিটার অংশ ‘গ্রিন করিডর’ করা হয়। বন্ধ করা হয় জাতীয় সড়কের সংযোগকারী রাস্তাগুলিও।

(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)

পুলিশ-প্রশাসনের দ্রুত সমন্বয়ে নির্বিঘ্নে কলকাতায় অঙ্গ পৌঁছনোকে স্বাগত জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। অঙ্গদান আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন যুক্ত চিকিৎসক ব্রজ রায় বলেন, ‘‘অঙ্গ সংগ্রহের পরে ঠিক ভাবে সংরক্ষণ করা হলে আট ঘণ্টা পর্যন্ত প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। গ্রিন করিডরের মাধ্যমে পুলিশ-প্রশাসন সেই ব্যবস্থা করে।’’

এসএসকেএম সূত্রে জানা যায়, দু’টি কিডনির গ্রহীতা দমদমের বাসিন্দা, বছর কুড়ির অভিষেক মিশ্র ও নদিয়ার বছর তেইশের মিঠুন দালাল। লিভার প্রতিস্থাপন হবে ব্যারাকপুরের বাসিন্দা সঞ্জিত বালার শরীরে। কিশোরীর বাবা-মা বলেন, ‘‘মেয়ে আর ফিরবে না। কিন্তু পৃথিবীতে আমার মেয়ের অস্তিত্বটুকু রইল, এটুকুই আমাদের কাছে সান্ত্বনা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Organ Transplant Green Corridor SSKM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE