Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ভিক্ষে করে দিন কাটে মৃতের স্ত্রীর

২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর, সে দিনটা মনে পড়লে জলে ভরে আসে কল্পনা বাগের চোখ। নুরল্যপাড়ার ইট বের করা ঘরের দরজায় বসে অকারণে হেসে ফেলে ছোট ছেলেটা।

স্বামী সনৎ বাগের ছবি হাতে কল্পনা। পাশে ছেলে। —নিজস্ব চিত্র।

স্বামী সনৎ বাগের ছবি হাতে কল্পনা। পাশে ছেলে। —নিজস্ব চিত্র।

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৮ ০২:৪৯
Share: Save:

মাত্র দেড় হাজার টাকা প্রয়োজন ছিল। সামনেই মেয়ের বিয়ে। ব্যাঙ্কে জমানো নিজের টাকা তুলতে গিয়ে প্রাণ গিয়েছিল উলুবেড়িয়ার বাসুদেবপুরের সনৎ বাগের। সৌজন্যে নোটবন্দি। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে মানুষটাকে হারিয়ে এখন দিশাহারা তাঁর স্ত্রী। দুই প্রতিবন্ধী ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে অথৈ জলে।

২০১৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর, সে দিনটা মনে পড়লে জলে ভরে আসে কল্পনা বাগের চোখ। নুরল্যপাড়ার ইট বের করা ঘরের দরজায় বসে অকারণে হেসে ফেলে ছোট ছেলেটা। বোধবুদ্ধি তার তেমন কাজ করে না। আজও বুঝে উঠতে পারে না সে কী ক্ষতি হয়েছে তার।

কল্পনা জানান, মেয়ের বিয়ের পাকা দেখার জন্য টাকা দরকার ছিল। সে জন্য পরপর দু’দিন ব্যাঙ্কের লাইন দিয়েছিলেন সনৎবাবু। টাকা পাননি। ৩০ ডিসেম্বর ভোরে লাইন দিয়েছিলেন ব্যাঙ্কে। সেই লাইনেই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।

নোটবন্দির পর দু-দু’টো বছর কেটে গিয়েছে। অভাবের গ্রাসে জর্জরিত কল্পনা বাগের সংসার। কল্পনা পরিচারিকার কাজ করেন। তাতেও সংসার চলে না। বাধ্য হয়ে মাঝে মাধ্যেই ভিক্ষা করতে হয় তাঁকে।

পাঁচ মেয়ে, দুই ছেলে নিয়ে ছিল সংসার। ছেলে দু’টিই মানসিক প্রতিবন্ধী। তারা বাড়িতেই থাকে। তিন মেয়ের আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। যে মেয়ের পাকা দেখার জন্য টাকা তুলতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছিল সনৎবাবুর, বিয়ে হয়ে গিয়েছে তাঁরও। এখন এক মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে থাকেন কল্পনা। বলেন, ‘‘স্বামী দিনমজুরি করে সংসারের চালাতেন। চলে গেলেন। আমি কী পেলাম?’’

স্বামীর মৃত্যুর পর কল্পনাকে নিয়ে গিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে ধর্না দিয়েছিল তৃণমূল। মিলেছিল পাশে থাকার অনেক প্রতিশ্রুতি। রাজ্য সরকার থেকে দু’লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে গীতাঞ্জলি প্রকল্পে একটি ঘর করে দেওয়া হয়েছে। সাহায্য বলতে ওইটুকুই। তার পর আর কেউ খোঁজ নেয়নি। এক মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়েই সে টাকা প্রায় শেষ। কল্পনা বলেন, ‘‘মেয়ে আর আমি পরের বাড়িতে কাজ করে মাসে হাজার টাকা পাই। তাতে চারটে পেট চলে না। তাই বাধ্য হয়ে ভিক্ষা করতে হয়।’’

হাওড়া গ্রামীণ জেলা তৃণমূলের সভাপতি পুলক রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকারের ভুল নীতির জন্য একটি প্রাণ গেল। রাজ্য সরকার তার সাধ্য মতো ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ওই পরিবারে যে গ্রামে থাকেন সেই পঞ্চায়েত বিজেপির দখলে। তারা কিছু সাহায্য করেনি।

হাওড়া গ্রামীণ জেলা বিজেপির সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘নোটবন্দির জেরে মানুষের অচ্ছে দিন এসেছে বলেই বাসুদেবপুরের মানুষ পঞ্চায়েতে বিজেপিকে এনেছে। কী ভাবে ওঁদের পাশে থাকা যায় তার জন্য ভাবনা-চিন্তা করব।’’

এ সব রাজনীতিতে অবশ্য কল্পনার কিছু এসে যায় না। তাঁর একটাই কথা, ‘‘স্থায়ী রোজগারের ব্যবস্থা যদি হয় তা হলে ছেলে দু’টোকে নিয়ে বাঁচতে পারতাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Economy Banking Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE