পুত্রহারা: ইসলামপুরের দাড়িভিট গ্রামে গুলিতে নিহত ছাত্র তাপস বর্মণের মা। ফাইল চিত্র।
রাজেশ সরকারের পরে তাপস বর্মণ (২১)। দাড়িভিট হাইস্কুলের সামনে সংঘর্ষে আহত আর এক তরুণের মৃত্যু হল শুক্রবার। ইতিমধ্যে রাজেশের বাবা গুলি চালানোর জন্য পুলিশকে দায়ী করে একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এখন প্রশ্ন— কী এমন পরিস্থিতি হয়েছিল যে পুলিশ গুলি চালায়? যদিও উত্তর দিনাজপুর জেলা পুলিশ থেকে শুরু করে নবান্ন পর্যন্ত রাজ্য প্রশাসনের সব স্তর থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সুমিত কুমার উল্টে দাবি করেন, দুষ্কৃতীরাই পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি-বোমা ছুড়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, বৃহস্পতিবারের ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, সে দিন এখানে একাধিক রাউন্ড গুলি চলেছে। ইসলামপুর থানায় এফআইআর করতে গিয়ে রাজেশের বাবা নীলকমল সরকার অভিযোগ করেন, স্কুলের কাছে হাজির ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, পাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশের গাড়ি থেকে গুলি করা হয়। সেই গুলিই লাগে তাঁর ছেলের গায়ে।
জেলা পুলিশ সুপার এই দাবির বিরোধিতা করে বলেছেন, ‘‘পুলিশ গুলি চালায়নি। তবু পুলিশের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ ওঠায় তদন্ত হচ্ছে।’’ তা হলে কে গুলি চালিয়েছে? তিনি বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের ওই আন্দোলনে প্রচুর বহিরাগত আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা, লাঠি নিয়ে হাজির ছিল। আন্দোলনকারীদের ঘেরাও থেকে এক অসুস্থ শিক্ষককে উদ্ধার করার চেষ্টা করলে পুলিশকে লক্ষ্য করে তারা ইট, বোমা ও গুলি ছোড়ে।’’ তাঁর দাবি, পরিমল অধিকারী নামে এক কনস্টেবলও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। জখম আরও ১৪ জন পুলিশ। হামলায় জড়িত সন্দেহে বহিরাগত ৭ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাঁদের মধ্যে কয়েক জন বিজেপির সমর্থক রয়েছেন বলেও পুলিশের দাবি। বহিরাগতরা অস্ত্র নিয়ে থাকলে পুলিশ ব্যবস্থা নেয়নি কেন, তার জবাব অবশ্য পুলিশ সুপার দেননি।
এ দিন ইসলামপুরে যান উত্তরবঙ্গের আইজি আনন্দ কুমার, ডিআইজি জয়ন্ত পাল। নিহতদের শরীর থেকে উদ্ধার হওয়া গুলি পুলিশের কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও দাবি জেলা পুলিশের। একই সঙ্গে তাদের বক্তব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি নেওয়ার সময়ে সব হিসেব দিয়ে থানা বা পুলিশ লাইনের নির্দিষ্ট খাতায় সই করতে হয়। গুলি চালাতে গেলে মহকুমাশাসক বা প্রশাসনিক কর্তাদের অনুমতিও প্রয়োজন। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোলমালের ভিডিয়ো ফুটেজও সংগ্রহ করছে পুলিশ।
নবান্নে এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনও লিখিত রিপোর্ট জমা না পড়লেও প্রশাসনিক কর্তাদের কেউ কেউ মনে করছেন, পুলিশের বন্দুকে যে গুলি থাকে, ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত গুলির সঙ্গে তার ফারাক রয়েছে। ইসলামপুরের পরিস্থিতি নিয়ে এ দিন ডিজি বীরেন্দ্র, নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ এবং স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য বৈঠক করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy