Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

মানালি ঘুরতে গিয়ে খাদে গাড়ি উল্টে মৃত্যু গাইঘাটার যুবকের

নতুন বাড়ির কাজ শেষ, এখন রঙের প্রলেপ পড়ছে। কথা ছিল, পুজো মিটলেই বিয়ে হবে। সেইমতো কথাবার্তাও চলছিল। তার আগেই সব শেষ। পুজোর ছুটিতে মানালি বেড়াতে গিয়ে রবিবার পাহাড়ের খাদে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ডেওপুলের যুবক বিশ্বজিৎ দাসের (২৭)।

মর্মান্তিক: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বিশ্বজিতের (ইনসেটে) মা রেখাদেবী ও বাবা দীনবন্ধু। সোমবার, গাইঘাটায়। নিজস্ব চিত্র

মর্মান্তিক: কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বিশ্বজিতের (ইনসেটে) মা রেখাদেবী ও বাবা দীনবন্ধু। সোমবার, গাইঘাটায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

নতুন বাড়ির কাজ শেষ, এখন রঙের প্রলেপ পড়ছে। কথা ছিল, পুজো মিটলেই বিয়ে হবে। সেইমতো কথাবার্তাও চলছিল। তার আগেই সব শেষ। পুজোর ছুটিতে মানালি বেড়াতে গিয়ে রবিবার পাহাড়ের খাদে গাড়ি উল্টে মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার ডেওপুলের যুবক বিশ্বজিৎ দাসের (২৭)। ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বিশ্বজিতের আরও ন’জন বন্ধু। মধ্যমগ্রাম ও বারাসতের বাসিন্দা ওই আহতেরাও মানালির একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তবে তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলেই পরিবার সূত্রে খবর। সোমবার সকালেই বিশ্বজিতের দেহ আনতে তাঁর পরিবার এবং আহতদের পরিজনেরা মানালি রওনা হয়ে গিয়েছেন।

স্থানীয় সূত্রে খবর, পুজোর ছুটিতে গত ১৬ তারিখ মানালি রওনা দেয় ১০ বন্ধুর দলটি। তাঁদের কারও কারও পরিবারও ছিল সঙ্গে। রবিবার সকালে মানালি থেকে রোটাং পাস যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় অপেক্ষাকৃত কম জখম মধ্যমগ্রামের নন্দনকাননের বাসিন্দা প্রশান্ত দাসই বাড়িতে ফোন করে খবরটি দেন। প্রশান্ত জানিয়েছেন, রোটাং পাসের পথে হঠাৎই চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় গাড়ি উল্টে খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যান বিশ্বজিৎ। স্থানীয় মানুষ ও পুলিশই আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। আহতদের মধ্যে রয়েছেন নন্দনকাননেরই বাসিন্দা শুভঙ্কর রায়, হিমানীশ দাস, তাঁর স্ত্রী শম্পা দাস, বুবাই দাস, মিঠুন বিশ্বাস, সুমন দাস, টুকটুকি দাস এবং বারাসতের ন’পাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ সেলিম।

সোমবার সকালেই বিমানে চণ্ডীগড় পৌঁছে মানালির উদ্দেশে রওনা দেন মৃত ও আহতদের আত্মীয়েরা। মানালির পথেই শুভঙ্করের বাবা বিপ্লব রায় বলেন, ‘‘ছেলের খুব ঘোরার নেশা। পুজোর ছুটিতে তাই বন্ধুবান্ধব মিলে গিয়েছিল। মঙ্গলবার মানালি থেকে রওনা দিয়ে লক্ষ্মী পুজোর দিন ফেরার কথা ছিল ওদের। কী যে হয়ে গেল!’’

বিপ্লববাবু জানান, মৃত বিশ্বজিৎ সম্পর্কে তাঁর শ্যালক। এ দিকে রবিবার মৃত্যুর খবর পাওয়ামাত্র শোকের ছায়া নেমে আসে গাইঘাটার দাস পরিবারে। বিশ্বজিতের বাবা দীনবন্ধু পেশায় চাষি। মেয়ে টুম্পার বিয়ে হয়েছে মধ্যমগ্রামে। একমাত্র ছেলে বিশ্বজিৎ হাওড়ায় একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন। তিনি কাজ পাওয়ার পর থেকেই পরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরছিল। ছুটিতে ষষ্ঠীর দিন বাড়ি ফিরেছিলেন বিশ্বজিৎ। সপ্তমীর দিনই বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মানালি বেড়াতে যান। মামা বিনয় দাস বলেন, ‘‘বাড়ি তৈরি করছিল। সামনেই বিয়ে। সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল।’’

এ দিন বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, নতুন বাড়িতে রঙের কাজ এখনও শেষ হয়নি। বাবা দীনবন্ধু ও মা রেখাদেবী শোকে বাকরুদ্ধ। পরিবার সূত্রে জানা গেল, রবিবার দুপুরে দীনবন্ধুর মোবাইলে ফোন আসে মানালি থানা থেকে। তিনি হিন্দি ঠিকমতো বুঝতে না পারলেও বিশ্বজিতের যে একটা বিপদ হয়েছে, তা টের পেয়েছিলেন। এর পরে এক প্রতিবেশী ফের ওই নম্বরে ফোন করে বিশ্বজিতের মৃত্যুর খবর পান। প্রতিবেশী তাপস বিশ্বাস বলেন, ‘‘আমাকেও মানালি যাওয়ার জন্য ধরেছিল বিশ্বজিৎ। যেতে পারিনি। এত প্রিয় বন্ধুকে এ ভাবে হারাতে হবে ভাবিনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Accident Manali Yputh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE