Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বীণা ফিরে এলে খাওয়াবেন কী, চিন্তায় পড়েছেন দাদারা

খাস রাজধানীর বুকে খুদে তিন বোনের মৃত্যুর কারণ অনাহার না বিষক্রিয়া, তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। তবে ওই শিশুদের পরিবারের অসহনীয় দারিদ্র নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। শিশুদের মায়ের বাড়ি ফেরার পথেও কাঁটা সেই দারিদ্রই।    

অপেক্ষা: বীণার (ইনসেটে) ছবি হাতে পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

অপেক্ষা: বীণার (ইনসেটে) ছবি হাতে পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
সাঁকরাইল শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ০৪:২২
Share: Save:

খাস রাজধানীর বুকে খুদে তিন বোনের মৃত্যুর কারণ অনাহার না বিষক্রিয়া, তা নিয়ে বিতর্ক বেধেছে। তবে ওই শিশুদের পরিবারের অসহনীয় দারিদ্র নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। শিশুদের মায়ের বাড়ি ফেরার পথেও কাঁটা সেই দারিদ্রই।

মানসী, পারুল ও শিখা যথাক্রমে ৮, ৪ ও ২ বছরের তিন শিশুকন্যার মা বীণা ওরফে বেণু সিংহের বাপের বাড়ি ঝাড়গ্রাম জেলার সাঁকরাইল ব্লকের উপর কাটমুণ্ডিতে। জল-কাদা থইথই কাঁচা রাস্তা ভেঙে শনিবার পৌঁছতে হল গ্রামে। পাশাপাশি তিনটি ঘুপচি মাটির বাড়িতে থাকেন বীণার তিন দাদা। বীণার বাবা প্রয়াত সহন সিংহের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর দুই ছেলে কাজল ও রতন এবং এক মেয়ে রেণু। বীণা ওরফে বেণু সহনের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর মেয়ে। বীণার সহোদর দাদার নাম পুলিন। ভাই-বোনদের মধ্যে সব থেকে ছোট বীণা।

বীণার দাদারা আদিবাসী মুণ্ডা সম্প্রদায়ের লোক। তবে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাননি। সামনের কাঁচা রাস্তাও চলার অযোগ্য। তিন দাদাই চান দিল্লি থেকে গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসুন বীণা। তাঁর মনোরোগের চিকিৎসা হোক। কিন্তু সংশয় একটাই— বোন এলে থাকবে কোথায়, খাবেই বা কী!

কাজল, রতন, পুলিনরা জানালেন, ভরসা বলতে দেড় বিঘে পৈতৃক জমি। কিন্তু সেখানে চাষ করে তিনটি পরিবারের খিদে মেটে না। খেতমজুরিও করতে হয়। কাজল, পুলিনরা ভাঙা ঘর দেখিয়ে বললেন, ‘‘বোনকে আমরা রাখতে চাই। সরকার বোনের জন্য ঘর, উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিলে ভাল হয়।’’

এ দিন ঝাড়গ্রামের সাংসদ উমা সরেন কাজলদের সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন। কাজলকে দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে বোনের সঙ্গে দেখা করানো ও বীণাকে ফেরানোর ব্যাপারে সব রকম সাহায্যের আশ্বাসও দিয়েছেন সাংসদ।

পুলিন জানালেন, অভাবের জন্যই ছোট বোনের বিয়েতে জাঁকজমক করতে পারেননি। ছবি পর্যন্ত তোলা হয়নি। আরেক বোন রেণুর বিয়ে হয়েছে কাছেই তেলকন্দ গ্রামে। তবে এলাকার অনেক মেয়ের উত্তরপ্রদেশে ভাল বিয়ে হয়েছে। তাই ঘটকের মাধ্যমে মথুরার বাসিন্দা মঙ্গল সিংহের সঙ্গে বীণার বিয়ের সম্বন্ধ আসায় আর না করেননি দাদারা। বছর দশেক আগে বিয়ে দিয়েছিলেন। পুলিন বললেন, ‘‘দিল্লিতে গিয়ে দু’বছর ভগ্নীপতি মঙ্গলের খাবারের দোকান সামলেছি। তখনও অস্বাভাবিক কিছু দেখিনি।’’

২০১২ সালে দুর্গাপুজোর সময় শেষবার এক মেয়েকে নিয়ে মঙ্গল ও বীণা উপর কাটমুণ্ডিতে এসে দিন কুড়ি ছিলেন। পড়শি বৃদ্ধা উত্তমী সিংহ জানালেন, কুচো মাছের চচ্চড়ি, মিহি করে শাকভাজা আর কষা মুরগির মাংস খেতে বীণা ভালবাসে। উত্তমীদেবীর কথায়, ‘‘গ্রামের স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণির পরে আর পড়েনি বীণা। লেখাপড়া জানা থাকলে হয়তো মেয়েটা দূরদেশে কাউকে নিজের সমস্যাটা বলতে পারত।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE