Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অলচিকির স্রষ্টাকে স্মরণ করে সাহিত্য সমগ্র প্রকাশের দাবি

১১১তম জন্মদিবসে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমগ্র সাহিত্য-সম্ভার সরকারি উদ্যোগে প্রকাশের দাবি উঠল।

রাইপুরের সবুজবাজারে রঘুনাথ মুর্মু স্মরণ।—নিজস্ব চিত্র

রাইপুরের সবুজবাজারে রঘুনাথ মুর্মু স্মরণ।—নিজস্ব চিত্র

সমীর দত্ত
বোরো শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০১৬ ০১:০৬
Share: Save:

১১১তম জন্মদিবসে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সমগ্র সাহিত্য-সম্ভার সরকারি উদ্যোগে প্রকাশের দাবি উঠল।

বৃহস্পতিবার বোরো থানার কুটনি গ্রামের কমিউনিটি হলে বিশিষ্টজনেরা প্রশ্ন তুললেন, ‘‘রঘুনাথ অলচিকি হরফের স্রষ্টা। যার সরকারি স্বীকৃতিও জুটেছে। তারপরে কেটে গিয়েছে ৩৭ বছর। এত দিনেও তাঁর সমগ্র সাহিত্য কীর্তি প্রকাশিত হল না কেন?’’ তাঁর নাটকে ব্যঙ্গের হূল তীব্র। আজীবন ছিলেন সমাজ সংস্কারকের পক্ষে। সে সব নিয়ে গবেষণা হবে না কেন, সভায় ঘুরল সে প্রশ্নও।

ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলার এক গ্রামে ১৯০৫ সালের ৫ মে রঘুনাথের জন্ম। ১৯৮২ সালের ১ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃত্যু হয়। এ দিন সভামঞ্চে উপস্থিত বক্তারা আক্ষেপ করেন, রঘুনাথ শুধু একটি লিপির জনক ছিলেন না। শিক্ষক, দার্শনিক, সমাজসেবী, নাট্যকার-কবিও ছিলেন। এমন ব্যক্তিত্বের বিশাল সাহিত্যকীর্তি আজও প্রকাশের অপেক্ষায়!

এ দিন জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অবশ্য পণ্ডিত মুর্মুর জন্মজয়ন্তী সাড়ম্বরে পালিত হয়েছে। কোথাও আলোচনা সভা, কোথাও নাটক আবার কোথাও রক্তদান শিবিরের আয়োজন ছিল। আদিবাসী অধিকার রক্ষা মঞ্চ (পশ্চিমবঙ্গ) এবং পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী অধিকার মঞ্চের উদ্যোগে এ দিন কুটনি গ্রামের কমিউনিটি হলের অনুষ্ঠানটি দুটি পর্বে হয়। প্রথম পর্বে ডিওয়াইএফের পরিচালনায় রক্তদান শিবির এবং রক্তদানের প্রয়োজন নিয়ে আলোচনা হয়। বক্তব্য রাখেন বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক সুরজিৎ সিংহ হাঁসদা। দ্বিতীয় পর্বে কবিপ্রণাম অনুষ্ঠান হয়।

সাধুরাম চাঁদ মুর্মু, পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মু ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিতে পুস্পার্ঘ দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের আলোচনা শুরু হয়। বাঁকুড়ার ‘সার সাগুন’ পত্রিকার সম্পাদক মলিন্দ হাঁসদা বলেন, ‘‘আমরা পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুকে অলচিকি স্রষ্ট্রার জনক হিসাবে দেখতে অভ্যস্ত। অথচ তাঁর বিশাল সাহিত্য সম্ভারের খোঁজ রাখি না।’’ জানান, পণ্ডিতের উদ্দেশ্য ছিল মাতৃভাষার মাধ্যমে সাঁওতালি সাহিত্যের বিকাশ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন সে কাজে ব্রতী হতে গেলে সবার আগে নির্দিষ্ট লিপির দরকার। দীর্ঘ দিন গবেষণার পরে তিনি এই লিপির সন্ধান দিতে পরেছিলেন।

সাঁওতালি সাহিত্যের গবেষক তথা শিক্ষক জলধর কর্মকার অবশ্য মত, ‘‘অলচিকি হরফে সাঁওতালি ভাষার প্রসার হলেও তা যথেষ্ট নয়।’’ এই লিপির মাধ্যমে আরও বেশি করে সাঁওতালি সাহিত্য চর্চা দরকার বলে মনে করেন তিনি।

সভার মতে, অলচিকি হরফের পাশাপাশি বাংলা হরফেও সাঁওতালি সাহিত্য রচনা হচ্ছে। বিশিষ্টদের মতে, পণ্ডিত মুর্মু মনে করতেন সাঁওতালি সাহিত্য অলচিকি হরফেই অপেক্ষাকৃত বেশি মূর্ত হয়। বাম আমলে মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ১৯৭৯ সালের নভেম্বরে পুরুলিয়ার হুড়া থানার কেন্দবনা গ্রামে রঘুনাথ মুর্মুকে সংবর্ধনা দেন।

সাঁওতালি বুদ্ধিজীবীদের মতে, সাঁওতালি ভাষা নিয়ে স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু, ব্যাপক চর্চা কি হচ্ছে? এঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘সাঁওতালির প্রসার ঘটাতে অলচিকিতেই ব্যাপক চর্চার প্রয়োজন রয়েছে। পাশাপাশি বাংলায় অনুবাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দুই ভাষার পাঠকরা উপকৃত হবেন।’’

সভায় উপস্থিত এক বক্তা পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর সাহিত্যকীর্তির অন্য দিকগুলি তুলে ধরেন। প্রথম জীবনে রঘুনাথ নাট্যকার হিসাবে বেশি পরিচিত ছিলেন। তাঁর নাটকে কুসংস্কার সম্পর্কে ব্যঙ্গ বর্ষিত হয়েছে। অন্যায়, অবিচারের প্রতি তিনি খড়্গহস্ত ছিলেন বরাবর। এ সব নিয়ে কেন গবেষণা হবে না, উঠল সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

birthday
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE