রোগটা এত দিন ছড়ি ঘোরাচ্ছিল মূলত কলকাতা, শহরতলি, আশপাশের জেলাতেই। এ বার সে দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য এলাকায় থাবা বাড়াচ্ছে। এবং সমানে প্রাণ কাড়ছে সেই সব অঞ্চলেও।
শনিবার দুর্গাপুরে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে এক গৃহবধূর। রবিবার জানা গেল, সে-দিনই পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালের এক কলেজছাত্রী ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মৌ শাসমল (১৯) নামে ওই ছাত্রীকে বৃহস্পতিবার ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল।
ডেঙ্গি পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় থাবা বাড়ানোয় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ওই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা। দাসপুরের কাশিয়াড়া গ্রামে প্রায় ২০ জন জ্বরে আক্রান্ত। তাঁদের অনেকের মধ্যেই ডেঙ্গির লক্ষণ রয়েছে। স্থানীয় শিলারাজনগর গ্রামেও জ্বরের প্রকোপ বাড়ছে। অন্তত ৪৫ জন জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তড়িঘড়ি মেডিক্যাল ক্যাম্প খোলা হয়েছে সেখানে। এক জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে।
রাজ্যে এ বার ডেঙ্গিতে সব থেকে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে সল্টলেক বা বিধাননগর পুরসভা এলাকায়। মৃত্যুর নিরিখে তার পরেই স্থান দক্ষিণ দমদম পুরসভার। কিন্তু ওই দুই এলাকায় রোগের দাপট কমার কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সল্টলেক এবং ই এম বাইপাসের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গি রোগীদের বড় অংশই ওই দুই এলাকার বাসিন্দা। কিন্তু রোগ প্রতিরোধের তৎপরতা তেমন নেই। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ সত্ত্বেও রোগ মোকাবিলায় সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে না সেখানে।
সেই টালবাহানার প্রমাণ মিলছে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে। সল্টলেকে এক-একটি এলাকায় কারও ডেঙ্গি ধরা পড়লেই দেখা যাচ্ছে, এক সপ্তাহের মধ্যে সংখ্যাটা বেড়ে ২০-২৫ হয়ে যাচ্ছে। তাই কোনও এলাকায় কারও ডেঙ্গি হলে পড়শিরাও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। যেমন জি-ডি ব্লকের বাসিন্দা, প্রাক্তন ফুটবল কোচ প্রদীপ (পিকে) বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। সেই খবর রটে যেতেই জি-ডি ও ই-ই ব্লক এবং করণাময়ীতে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রাতর্ভ্রমণকারীর সংখ্যাও কমে গিয়েছে জি-ডি ব্লকের পার্কে।
বিধাননগর পুরসভার ৪১টি ওয়ার্ডে ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা ১০০ ছাড়িয়েছে বলে জানাচ্ছে পুর-প্রশাসনই। দক্ষিণ দমদমে সরকারি মতে ডেঙ্গি-আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৪। বেসরকারি মতে ২৫০। কিন্তু ওই দুই পুরসভার এই পরিসংখ্যান অসম্পূর্ণ বলেই অভিযোগ বাসিন্দাদের। তাঁরা জানান, যে-সব বাসিন্দা কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগেরই কোনও তথ্য নেই পুরসভার কাছে।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, মশা মারার অভিযান বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি চালানোর লোক নেই। সল্টলেকের বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘পুরকর্মীরা সারা দিন কতটা কী কাজ করছেন, তার উপরে নজরদারি বাড়াক প্রশাসন। তা হলেই বাসিন্দাদের অভিযোগের প্রমাণ মিলবে।’’ তবে বাসিন্দারাও যে যথেষ্ট সচেতন নন, তা স্বীকার করেন তিনি।
লোকাভাবের কথা মেনে নিয়েছেন বিধাননগর পুরসভার মেয়র-পারিষদ প্রণয় রায়। তিনি বলেন, ‘‘আরও কর্মী থাকলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সুবিধা হতো। আমাদের ক্ষমতা সীমিত। তার মধ্যেও কাজ হচ্ছে।’’
পুরসভা সূত্রের খবর, সংক্রমণে অতিষ্ঠ ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৭ নম্বর ওয়ার্ড এবং ইস্টার্ন ড্রেনেজ চ্যানেল সংলগ্ন ওয়ার্ডগুলির বাসিন্দারা। একই পরিস্থিতি রাজারহাট অঞ্চলে ৬, ৮, ১০, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের। রবিবার চিকিৎসকদের নিয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন মেয়র-পারিষদ (স্বাস্থ্য)। প্রান্তিক এলাকায় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে চলছে ফিভার ক্লিনিক।
মেয়র-পারিষদ প্রণয়বাবু বলেন, ‘‘আগে এক ভাবে জ্বর সংক্রমণের তথ্য পাচ্ছিলাম। কয়েক মাসেই তার বদল ঘটেছে। যে-সব জায়গায় সংক্রমণ হচ্ছে, সেগুলিকে চিহ্নিত করে বিশেষ অভিযান চালানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy