মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে ভাইফোঁটা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা হয়ে উঠছে না। তাই বিকল্প সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় উপস্থিত হতে পারেন সস্ত্রীক রাজ্যপাল।
তাঁর এই যাওয়া নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে গুঞ্জন চলছিল। তবে সবটাই রাজভবন-কেন্দ্রিক। মুখ্যমন্ত্রী বা নবান্নের তরফে তেমন কিছু জানা যায়নি। শেষ পর্যন্ত শুক্রবার উত্তরবঙ্গ সফর সেরে ফেরার পরে মমতার পক্ষ থেকে রাজ্যপালকে জানানো হয়, ভাইফোঁটার দিন সম্ভব হবে না। কালীপুজোর দিন ধনখড় এলে স্বাগত। সেই মতো রাজ্যপাল আজ, রবিবার সন্ধ্যায় সস্ত্রীক মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় উপস্থিত হবেন বলে রাজভবন থেকে জানানো হয়েছে। পর্যবেক্ষকদের মতে,
বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ।
শনিবার বারাসতে দু’টি কালীপুজোর উদ্বোধন করে ধনখড় বলেন, ‘‘ভাইফোঁটার দিনটা ভাই-বোনের জন্য বিশেষ দিন।
ওই দিন আমি স্ত্রীকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী চিঠি দিয়ে আমাকে কালীপুজোর দিন ওঁর বাড়ির পুজোয় আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। খুব খুশি হয়েছি আমরা। স্ত্রীকে নিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পুজোয় যাব।’’
মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরেই মুখ্যমন্ত্রী ভাইফোঁটার দিনটি তাঁর ‘বৃহত্তর পরিবার’-কে নিয়েই উদ্যাপন করেন। ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ দিবস হিসেবেও ভ্রাতৃদ্বিতীয়া পালন করেন তিনি। আর চিরাচরিত ভাবে ওই দিন তাঁর নিজস্ব কিছু কর্মসূচিও থাকে। সে কারণে ওই দিন রাজ্যপালের মতো অতিথিকে আপ্যায়ন করার যথেষ্ট অবকাশ তাঁর হবে না।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির কালীপ্রতিমা। নিজস্ব চিত্র
রাজভবন থেকেও এ দিন বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ‘‘ভারতীয় সংবিধান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথাই বলেছে। এ দেশে প্রত্যেককে সেই সম্প্রীতি, একতা অক্ষুণ্ণ রাখতে সচেষ্ট হতে হবে। রাজ্যপালও এই বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন।’’
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাজ্যপালের এই আগ্রহ প্রকাশ রাজনৈতিক ভাবে অর্থবহ। কারণ রাজ্যের দায়িত্ব নিয়ে আসার পর থেকেই একের পর এক ঘটনায় রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত বেড়েছে। এখন সেই তিক্ততা কার্যত দৃষ্টিকটু জায়গায় পৌঁছেছে। শুধু তাই নয়, রাজ্যপাল নজিরবিহীন ভাবে প্রায় নিয়মিতই প্রচারমাধ্যমের কাছে বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তাঁর উষ্মা, আপত্তির কথা বলছেন। সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে তাঁর পদমর্যাদায় এ সব কত দূর সঙ্গত, তা নিয়ে প্রশ্নও উঠছে।
অনেকের ধারণা, রাজ্যপাল হওয়ার তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর সংঘাত এতটা বেড়ে যাওয়া দিল্লিরও ‘মনঃপূত’ হচ্ছে না। এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে যাওয়ার জন্য রাজ্যপালের আগ্রহ প্রকাশ কিছুটা হলেও সেই ‘সংঘাত’ মোলায়েম করার চেষ্টা বলে পর্যবেক্ষকদের একাংশ মনে করছেন।
অন্য দিকে, রেড রোডে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুর্গাপুজোর কার্নিভালে তাঁকে ‘গুরুত্ব’ না দেওয়ার যে অভিযোগ রাজ্যপাল তুলেছেন, তাতেও বিতর্কের উপাদান যথেষ্ট। এ বার মুখ্যমন্ত্রীর নিজের বাড়িতে কালীপুজোয় রাজ্যপালকে আপ্যায়নের মধ্যে দিয়ে সেই বিতর্কে কিছুটা ইতি টানা যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে রাজ্যপালের এই ‘পুজো দেখতে যাওয়া’ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নবান্ন এবং রাজভবনের মধ্যে সম্পর্কের ‘শীতলতা’ কিছুটা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ দু’তরফেই থাকছে।
মমতার বাড়ির গলি অপরিসর। সেখানে রাজ্যপালের মতো ‘জ়েড’ নিরাপত্তার কনভয় কী ভাবে যাবে, তা নিয়ে প্রশাসনের ভাবনা ছিল।
তার উপর কালীপুজোয় মমতার বাড়িতে অবারিত দ্বার। সেখানে রাজ্যপালকে কী ভাবে নিরাপত্তা দেওয়া হবে, তা নিয়েও চিন্তা ছিল। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, ওই গলি দিয়ে নিয়মিত ‘জ়েড প্লাস’ মমতা এবং তাঁর ভাইপো ‘জ়েড প্লাস’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাতায়াত করেন। তাই ওই গলি দিয়ে রাজ্যপালের কনভয়ের যাতায়াতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। আর কালীপুজোয় মমতার পাশাপাশি ওই বাড়িতে অভিষেকও থাকবেন। তাই দুই জ়েড প্লাস ভিআইপি-র
জন্য এমনিতেই নিরাপত্তার বেষ্টনী থাকবে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি ও তার আশপাশে। প্রচুর সাদা পোশাকের পুলিশের পাশাপাশি সিসিটিভি নজরদারিও থাকবে। থাকবেন একাধিক ডিসি পদমর্যাদার অফিসারও। তবে জনসমাগমের কথা বিবেচনা করে রাজ্যপালের সম্পূর্ণ কনভয় হয়তো গলির ভিতর ঢোকানো হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy