Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ঝুমুর-গানের চর্চা হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে

ছৌয়ের পরে লোকসঙ্গীতের আর এক ধারা ঝুমুরকে এ বার পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করছে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, চলতি শিক্ষাবর্ষেই ঝুমুরের উপরে ‘ডিপ্লোমা’ পাঠ্যক্রম চালু হচ্ছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

প্রশান্ত পাল
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৮ ০৩:২২
Share: Save:

ছৌয়ের পরে লোকসঙ্গীতের আর এক ধারা ঝুমুরকে এ বার পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করছে পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়েছে, চলতি শিক্ষাবর্ষেই ঝুমুরের উপরে ‘ডিপ্লোমা’ পাঠ্যক্রম চালু হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নচিকেতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ঝুমুর নিয়ে এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্স দু’টি সেমেস্টারে পড়ানো হবে। আসন ৫০টি।’’ তিনি জানান, বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভর্তি-প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

মার্চে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় লোকসংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দেন। তার পরেই লোকসঙ্গীতের প্রাচীন ধারা ঝুমুর নিয়ে পাঠ্যক্রমের ভাবনা-চিন্তা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়।

আপাতত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গড়া হয়েছে। হয়েছে ‘সিলেবাস কমিটি’। তারা ‘সিলেবাস’ তৈরির পরেই ক্লাস শুরু হবে। নচিকেতাবাবু বলেন, ‘‘ঝুমুর নিয়ে এই পাঠ্যক্রম লোকসংস্কৃতির পুনরুজ্জীবন বলতে পারেন।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য তথা জেলার লোক-গবেষক সুভাষ রায়ের দাবি, বিদ্যাপতির পদাবলি এবং দামোদর মিশ্রের ‘সঙ্গীত দামোদর’-এ ঝুমুরের উল্লেখ রয়েছে। পুরুলিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আদিরসাত্মক ‘টাঁড় ঝুমুর’-এর প্রচলন রয়েছে। তার বিভিন্ন ভাগ হল—‘পেটিয়ামাড়া’, ‘খেমটা’, ‘হাঁকা’, ‘চৈতালি’, ‘ভাদরিয়া’, ‘মলহারিয়া’, ‘রিঝা’, ‘মাঠা’ ইত্যাদি। রয়েছে ‘দরবারি ঝুমুর’ও। তা মূলত রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ এবং দেবদেবীর মাহাত্ম্যের উপরে লেখা।

সুভাষবাবু বলেন, ‘‘ষোড়শ শতাব্দীতে চৈতন্যের আবির্ভাবের ফলে যেমন বৈষ্ণব সাহিত্যে পরিবর্তন এসেছিল, তেমনই ষোড়শ শতাব্দীর পরে ঝুমুরেরও পরিবর্তন আসে।’’ তিনি জানান, ষোড়শ থেকে উনবিংশ শতকের মধ্যে একাধিক কবি ঝুমুর রচনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে বিনন্দ সিংহ, গৌরাঙ্গিয়া সিংহ, বরজুরাম, দ্বিজটিমা, রামকৃষ্ণ গঙ্গোপাধ্যায়, গদাধর চৌধুরী, ভবপ্রীতানন্দ ওঝার মতো প্রথম সারির ঝুমুর-কবিরা রয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এই ঝুমুর-কবিদের সৃষ্টির মধ্যেই শ্রোতারা বৈষ্ণব ভাবনা, রাধাকৃষ্ণের প্রেম ভাবনা, রামায়ণ ও মহাভারতের নানা বিষয় শুনতে পান।’’

আপাতত এই পাঠ্যক্রমে ভর্তির জন্য মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হলেই চলবে। সেমেস্টার পিছু খরচ কমবেশি ৩,১০০ টাকা। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, ঝুমুরের উৎস, সুর, তাল, নৃত্য, ঘরানা, সাহিত্যমূল্য প্রভৃতি পড়ানো হবে। পাঠ্যক্রম চূড়ান্ত করবে ‘সিলেবাস কমিটি’। প্রতিষ্ঠিত ঝুমুর গায়ক, পদকর্তা, গবেষকেরা থাকবেন পড়ানোর দায়িত্বে। বছর তিনেক আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছৌয়ের ‘ডিপ্লোমা’ পাঠ্যক্রম চালু হয়েছে। তার আগে ছিল ছ’মাসের ‘সার্টিফিকেট কোর্স’। রেজিস্ট্রার বলেন, ‘‘ছৌয়ের পাঠ্যক্রম শেষ করা শিক্ষার্থীরা অনেকে বিদেশে যাচ্ছেন। বিভিন্ন জায়গায় সুযোগ পাচ্ছেন। ছৌনাচে তাঁরা নতুন নতুন বিষয় তুলে ধরছেন। ঝুমুর নিয়েও আমরা ততটাই আশাবাদী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE