প্রতীকী ছবি।
ব্যবস্থা আছে ক্ষতিপূরণের। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নির্যাতিতাদের কাছে তা পৌঁছচ্ছে না। কেন? যে-সব কারণ সামনে আসছে, তার মধ্যে ‘মেডিক্যাল ট্রমা’র কথা বলা হচ্ছে বারবার। এতে পুলিশও হতবাক! পাচার হয়ে যাওয়া কিশোরীকে উদ্ধারের পরে তার ‘ট্রমা’র মাত্রা কী ও কতটা, তার উপরে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি কী ভাবে নির্ভর করতে পারে, সেটা বোধগম্য হচ্ছে না তাদেরও।
সুন্দরবনের এক কিশোরী ভিন্ রাজ্যের যৌনপল্লি থেকে পালিয়ে আসার পরে ছয় পাচারকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই কিশোরীর ক্ষতিপূরণের জন্য তারা ফাইল পাঠায় জেলার লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি (ডালসা)-র কাছে। কিন্তু অভিযোগ, মেয়েটির ‘মেডিক্যাল ট্রমা’ কতটা, তার তথ্য চেয়ে ফাইলটি পুলিশের কাছে ফেরত পাঠায় ডালসা। যৌনপল্লিতে বিক্রি হয়ে যাওয়া থেকে মেয়েটির ফিরে আসা এবং তার অভিযোগের ভিত্তিতে পাচারকারী গ্রেফতারের সব তথ্যই ফাইলে ছিল। ছিল ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টও। তার পরেও ‘মেডিক্যাল ট্রমা’র মাত্রা জানতে ফাইল ফেরত পাঠানোয় হতবাক হয়ে যায় সুন্দরবন থানা।
পরিসংখ্যান বলছে, এ রাজ্যে হাতে গোনা কয়েক জন ছাড়া কোনও নির্যাতিতাই ক্ষতিপূরণ পাননি। সামান্য যে-ক’জন পাচ্ছেন, তাঁদের টাকা খরচ করে আদালতে লড়াই চালিয়ে তা আদায় করতে হচ্ছে। এর প্রমাণ মিলেছে রাজ্যের নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের বক্তব্যেও। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘আমাদের কাছে থাকা নির্যাতিতার পরিসংখ্যানের তুলনায় ক্ষতিপূরণ প্রাপকের সংখ্যা নগণ্য। কেন, তা নিয়ে ধোঁয়াশায় আছি আমরাও।’’ ক্ষতিপূরণ প্রাপকের সংখ্যা যে খুব কম, তার ছবি স্পষ্ট হয়েছে স্টেট লিগ্যাল সার্ভিস অথরিটি (সালসা)-র পাঠানো তথ্যেও। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৭-য় মাত্র ৪৬ জন এবং ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত মাত্র ৩১ জন নির্যাতিতা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন। মোট ক্ষতিপূরণের অঙ্ক এক কোটি ৯৮ লক্ষ ১৯০০ টাকা। ক্ষতিপূরণ যাঁরা পেতে পারেন, তাঁদের তালিকায় আছেন অ্যাসিড হানা, প্রোটেকশন অব চিলড্রেন্স ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্স (পকসো)–এর নির্যাতিতারা।
কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ প্রাপকের সংখ্যা অত্যন্ত কম হওয়ায় নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের আধিকারিকেরাও বিস্মিত। তাঁরা জানাচ্ছেন, ২০১৭ সালে রাজ্য সরকার ‘ভিকটিম কমপেনসেশন স্কিম’ তৈরির সঙ্গে সঙ্গে কোন ক্ষেত্রে নির্যাতিতা কত টাকা ক্ষতিপূরণ পাবেন, তারও একটি তালিকা করেছে। প্রতি বছর অর্থ বরাদ্দও করে সরকার। তার পরেও ক্ষতিপূরণ প্রাপকের সংখ্যা নগণ্য!
ওই অফিসার আরও জানাচ্ছেন, সিআইডি জানিয়েছে, এ রাজ্য থেকে ২০১৭-’১৮ সালে ৬৪৯টি মেয়ে পাচারের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। উদ্ধার করা হয়েছে ৮৮০টি মেয়েকে। আছেন অন্যান্য ক্ষেত্রের নির্যাতিতাও। তা হলে ক্ষতিপূরণ প্রাপকের সংখ্যা এত কম হয় কী করে, প্রশ্ন উঠেছে নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতরের অন্দরেই। যদিও সালসা-র সদস্য-সচিব অজয় গুপ্তের দাবি, ‘‘আইন মেনে যাঁরা আবেদন করেন, তাঁরা সকলেই এই ক্ষতিপূরণ পান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy