এর আগে রাজ্য সরকারের নির্দেশে নজির গড়েছেন রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে ভি়ডিও কনফারেন্স। এ বারে নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করলেন রাজ্যের জেলাশাসকেরা। নবান্নের নির্দেশেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে একাধিক বারই অভিযোগ তুলেছেন, বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে চলছে। এটা রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ শুধু নয় যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও আঘাত। মোদী তাঁর স্বপ্নের ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রেও একই পথে হাঁটছেন বলে মনে করছে নবান্ন।
যেমন নোট-বাতিলের ঘোষণার পর থেকেই ডিজিটাল লেনদেনে দেশবাসীকে অভ্যস্ত করে তোলার কথা বলে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর মানুষের দুর্দশার প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগুন ঝরাচ্ছেন মোদীর ওই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। এই আবহে মানুষকে ডিজিটাল লেনদেনে অভ্যস্ত করে তোলার জন্য কেন্দ্র যে প্রচার অভিযান চালাচ্ছে, সে ক্ষেত্রেও নবান্নকে এড়িয়েই এগোতে চাইছে মোদী সরকার। ডিজিটাল লেনদেন নিয়ে এক মাসের এক প্রচার অভিযানে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সামিল করতে সপ্তাহ দুই আগে ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করেছিলেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। তাতে ডাকা হয়েছিল দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের। রাজ্য সরকারের নির্দেশে সেই বৈঠক বয়কট করেন রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা। এ বার নীতি আয়োগের ডাকা ভিডিও-বৈঠকেও অংশ নিলেন না রাজ্যের কোনও জেলাশাসক।
ডিজিটাল অর্থনীতি তৃণমূল স্তরে ছড়িয়ে দিতে সরাসরি জেলাশাসকদের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন দেশের সর্বোচ্চ পরিকল্পনা উপদেষ্টা সংস্থা নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্থ। কেন্দ্রীয় সরকার দেশের অর্থনীতিকে কেমন চেহারাটা দিতে চাইছে, তা জানানোই ছিল সিইও-র মুখ্য উদ্দেশ্য। কিন্তু রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে সরাসরি জেলাশাসকদের সঙ্গে কেন কথা বলা হচ্ছে— নবান্নের পক্ষ থেকে এই প্রশ্ন তুলে প্রতিটি জেলাশাসককে ভিডিও কনফারেন্সে না-থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই মতো সব জেলাশাসকই গরহাজির থাকেন। রাজ্যের মনোভাবে অবাক হয়ে যান নীতি আয়োগের কর্তারা। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, যত দিন যাচ্ছে, কেন্দ্র-রাজ্য বিরোধের নতুন নতুন দরজা খুলছে। তাই প্রশাসনিক স্তরে পুরোমাত্রায় ডিজিটাল অর্থনীতি চালুর প্রশ্নে কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধিতার লাইনই নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মানবসম্পদ মন্ত্রীর বৈঠক বয়কটের ঘটনা নিয়ে তেমন হইচই না হলেও নীতি আয়োগের উদ্যোগে জল ঢালার ঘটনাটি প্রশাসনিক মহলে চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নবান্নের একাংশের বক্তব্য, শুধু ভিডিও কনফারেন্স নয়, জেলাশাসকদের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের একগুচ্ছ কর্মসূচি নিয়েছে নীতি আয়োগ। সে জন্য জেলাশাসকদের উৎসাহ-ভাতা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রের দাবি, দেশের ৭০৭টি জেলার মধ্যে ৪৩৫টি জেলা এই সুযোগ নিতে তৈরি। কিন্তু এখনও ২৭২টি জেলা থেকে কোনও উত্তর পায়নি কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সংস্থা। পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলি তার অন্যতম। নীতি আয়োগ চায়, ডিজিটাল লেনদেন বাড়ুক জেলাশাসকদের মাধ্যমেই। প্রচারের টাকা সরাসরি জেলাশাসকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেবে কেন্দ্র। আয়োগ বলছে, কেউ পরপর দু’বার ডিজিটাল লেনদেন করলেই সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক ১০ টাকা উৎসাহ-ভাতা পাবেন। সেরা ১০টি জেলা ও ৫০টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে পুরস্কারও দেবে নীতি আয়োগ। উৎসাহভাতা হিসেবে প্রতি জেলাকে ৫ লক্ষ টাকা করে পাঠাতে জেলাশাসকদের ব্যাঙ্ক অ্যকাউন্টের বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে নীতি আয়োগ। কিন্তু এ রাজ্যের কোনও জেলাশাসক সাড়াশব্দ করছেন না। মুখও খুলছেন না এ নিয়ে। নবান্নের খবর, মুখ্যমন্ত্রী অফিসারদের জানিয়ে দিয়েছেন, বিভিন্ন রাজ্য ‘লেস ক্যাশ’ অর্থনীতির দিকে এগোলেও এ রাজ্যে মোদীর ডিজিটাল-নীতি বলবৎ করতে দেওয়া হবে না। যদিও মমতা সরকারই রাজ্যে ই-টেন্ডার, ডিজিটাল লেনদেন চালু করেছে।
নবান্নের কর্তাদের একাংশ তাই মনে করছেন, রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে চলার কারণেই ধাক্কা খাচ্ছে মোদীর ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর স্বপ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy