Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সব আলো জেলায়, কোণঠাসা কলকাতা

বুধবার ঘোষিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের মতো এ বারেও প্রথম এক ছাত্রী— কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমির সঞ্জীবনী দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ জুন ২০১৮ ০৫:৩১
Share: Save:

গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার স্বপ্ন এখনও স্বপ্নই। তবে মাধ্যমিকের মেধা-তালিকা দেখাচ্ছে, জেলার দাপটে কলকাতা প্রায় বিলীন। পাশের হার গত বছরের তুলনায় যদিও কিছুটা কম। ৮৫.৬৫ শতাংশ থেকে কমে এ বার সেটা হয়েছে ৮৫.৪৯ শতাংশ।

বুধবার ঘোষিত ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, গত বছরের মতো এ বারেও প্রথম এক ছাত্রী— কোচবিহারের সুনীতি অ্যাকাডেমির সঞ্জীবনী দেবনাথ। গত কয়েক বছরের মতো এ বারেও পরীক্ষার্থিনীর সংখ্যা বেশি। সংখ্যালঘু পরীক্ষার্থীদের মধ্যেও বেশি এ বার ছাত্রীই। যদিও পাশের হারে ছাত্রদের (৮৯.৮৭%) থেকে পিছিয়ে আছে ছাত্রীরা (৮১.৮৬%)।

কয়েক বছর ধরেই কলকাতার স্কুল থেকে শীর্ষে থাকার সংখ্যা হ্রাসের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ বছর মেধা-তালিকায় রয়েছে মোট ৫৬ জন। তাদের মধ্যে মাত্র দু’জন কলকাতার। মেধা-তালিকায় সব থেকে বেশি রয়েছে বাঁকুড়া জেলার পড়ুয়া (১০)। দ্বিতীয় হয়েছে বর্ধমানের সাতগাছিয়া হাইস্কুলের শীর্ষেন্দু সাহা। তৃতীয় তিন জন। সুনীতি অ্যাকাডেমির ময়ূরাক্ষী সরকার এবং জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের নীলাব্জ দাস ও মৃন্ময় মণ্ডল।

কলকাতা পিছু হটছে কেন? সুনীতি অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মণিদীপা বাচস্পতির মতে, কলকাতায় বেশির ভাগ অভিভাবকই সন্তানকে ইংরেজি স্কুলে পড়াতে আগ্রহী। কিন্তু জেলায় এখনও নামী বাংলা স্কুলে ভর্তির আগ্রহ প্রবল।

সুনীতি অ্যাকাডেমি-সহ সরকারি স্কুলের সাত জন এ বার মেধা-তালিকায় রয়েছে। কিন্তু কলকাতার সরকারি স্কুলের কেউ নেই। অথচ এক সময় বালিগঞ্জ, হিন্দু, হেয়ারের মতো মহানগরীর সরকারি স্কুল থেকে

আরও পড়ুন: পাশ করেছে, জানলই না বিয়েরোখা পারুল

মেধা-তালিকায় অনেকেই জায়গা পেয়েছে। ‘‘কলকাতায় সন্তানকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ানোর ঝোঁক খুব বেশি। সরকারি স্কুলে ভর্তি হয় লটারিতে। তাই বাছাই করে পড়ুয়া ভর্তির সুযোগ নেই,’’ বলছেন সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু।

এ বার মোট ১০ লক্ষ ৮৩ হাজার ৩৮৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রের সংখ্যা চার লক্ষ ৭৭ হাজার ১৫। ছাত্রীর সংখ্যা ছ’লক্ষ ছ’হাজার ৩৭৩। সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রেও ছাত্রী বেশি— এক লক্ষ ৭৪ হাজার ৬৭৮ জন। ছাত্র এক লক্ষ দু’হাজার ৬২০ জন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, সব স্তরের মানুষই সন্তানকে অন্তত মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়ানোর চেষ্টা করছেন। পাশের হারে ছাত্রীরা পিছিয়ে থাকলেও অচিরেই তারা ছাত্রদের ধরে ফেলবে বলে আশা প্রকাশ করেন পর্ষদ-সভাপতি। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র ও ছাত্রীদের মধ্যে ফারাক আগে অনেক বেশি ছিল। ধীরে ধীরে তা কমছে। কমে আসছে।’’

সুনীতি অ্যাকাডেমির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মণিদীপাদেবীর পর্যবেক্ষণ, মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে গ্রামাঞ্চলেও পারিবারিক স্তরে সচেতনতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী, সবুজ সাথীর মতো প্রকল্প ছাত্রীদের স্কুলে আসতে আরও উৎসাহ জোগাচ্ছে। এই দুইয়ে মিলিয়েই ছাত্রীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে মাধ্যমিক পরীক্ষায়।

ওই সব সরকারি প্রকল্প ছাত্রীদের স্কুলে যেতে খুবই উৎসাহ জোগাচ্ছে বলে মনে করেন প্রতীচী ট্রাস্টের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর এবং ফেলো সাবির আহমেদও। তিনি জানান, সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, ছাত্রদের মধ্যে পড়াশোনার আগ্রহ কমছে। মাঝপথে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে অনেকেই রোজগারের পথ বেছে নিচ্ছে। কেউ কেউ চলে যাচ্ছে ভিন্‌ রাজ্যে। কেউ কাজ করতে ছুটছে শহরাঞ্চলে। ছেলের রোজগারে সংসারে সচ্ছলতা আসায় মেয়েকে পড়ানোর আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেক পরিবার। কারণ পাশ করলে মেয়ের ভাল পাত্র মিলবে।

ছাত্রীদের স্কুলে পাঠানোর ব্যাপারে অভিভাবকদের আগ্রহ বেড়েছে বলে মনে করেন বালিগঞ্জ শিক্ষা সদনের অধ্যক্ষা সুনীতা সেনও। মেধা-তালিকায় থাকা পড়ুয়াদের অভিনন্দন জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামীণ বাংলার পড়ুয়ারা ভাল ফল করেছে। তবে শহরের পড়ুয়ারাও ভাল। মেয়েরা উল্লেখযোগ্য ভাল ফল করেছে,
এটা খুশির।’’

গত বার বিজ্ঞানে ‘এএ’ (৯০-১০০ নম্বর) পাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় কম ছিল। এ বার তা বেড়েছে। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় ভাষা, ইতিহাস, ভূগোলে ‘এএ’ পাওয়া পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। দ্বিতীয় ভাষায় গত বার ১১ হাজার ৪১৯ জন ‘এএ’ পেয়েছিল। এ বার তা কমে হয়েছে ৫৩০৫। এ বছর পাশের হার সব থেকে বেশি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। তার পরে আছে পশ্চিম মেদিনীপুর, কলকাতা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং কালিম্পং।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE