Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বন‌্ধে রুট বদল, তবু দুর্ঘটনায় মৃত্যু চিকিৎসকের

আদিবাসী সংগঠনের অবরোধ নিয়ে ফেসবুকে সরব হয়েছিলেন। নিজেও ফিরতে পারেননি।

শুভদীপ ভারতী। নিজস্ব চিত্র

শুভদীপ ভারতী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
  মেদিনীপুর ও তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:২৬
Share: Save:

আদিবাসী সংগঠনের অবরোধ নিয়ে ফেসবুকে সরব হয়েছিলেন। নিজেও ফিরতে পারেননি। মঙ্গলবার ঠিক সময়ে ট্রেন চলা নিয়ে আশঙ্কা ছিল। অথচ এ দিন তাঁকে ফিরতেই হত বাড়ি। তাই ভোরে গা়ড়ি ভাড়া নিয়ে বেরিয়েছিলেন নয়াগ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের চিকিৎসক শুভদীপ ভারতী (৩৯)। সোমবার রাতে শুনেছিলেন খড়্গপুরের কাছে ডিমৌলিতে অবরোধ হতে পারে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে বদলেছিলেন রুটও। তবে শেষপর্যন্ত বাড়ি ফেরা হয়নি ওই চিকিৎসকের। ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কে কুচলি মোড়ের কাছে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল তাঁর।
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই চিকিৎসকের গাড়ির চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আরেকটি গাড়ির পিছনে ধাক্কা মারে। খবর পেয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ শুভদীপকে উদ্ধার করে খড়্গপুর হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাথায় গুরুতর চোট পেয়েছিলেন শুভদীপ। যদিও গাড়ির চালক অক্ষত।
মৃতের সহকর্মীরা জানিয়েছেন, অ্যানাটমি বিশেষজ্ঞও ছিলেন শুভদীপ। কিন্তু নয়াগ্রাম হাসপাতালে কাজ করতেন ব্লাড ব্যাঙ্কের মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে। প্রতি শুক্র, শনি ও রবিবার হাসপাতালে ডিউটি থাকত তাঁর। পড়েছেন। নয়াগ্রাম সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার কৌশিক দাস জানালেন, এ দিন একটি পারিবারিক মামলার প্রয়োজনে বারাসত আদালতে যাচ্ছিলেন তিনি। ভসরাঘাট, কেশিয়াড়ি হয়ে সালুয়া হয়ে তাঁর যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অবরোধের জেরে ডিমৌলিতে আটকে পড়তে পারেন এই আশঙ্কায় বেলদা-মকরামপুরের রুটে গাড়ি ঘুরিয়ে দেন চালক। এ দিন সন্ধ্যায় মৃতের পরিবারের তরফে পুলিশে লিখিত আবেদন করা হয়, এটি দুর্ঘটনা না এর পিছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে তা যেন খতিয়ে দেখা হয়।
হুগলির তারকেশ্বরে মন্দির পাড়ায় থানার কাছেই বাড়ি শুভদীপের। পরিবারের অনেকেই শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান শুভদীপ বরাবরই কৃতী। জয়েন্টে ১৪২ র‌্যাঙ্ক করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করেন তিনি। এক সময় তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক ছিলেন। তারকেশ্বর মন্দির পাড়াতেই তাঁর বাবার একটি ওষুধের দোকান ছিল। সেখানেও তিনি এক সময় চিকিৎসা করতেন। ইদানীং স্ত্রীয়ের সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছিল। এক সন্তান রয়েছে শুভদীপের। মা দীপান্বিতা ভারতী অসুস্থ। তাঁকে জানানোই হয়নি ছেলের দুর্ঘটনার কথা। বাবা সমীর ভারতী ছেলের খারাপ খবর পেয়েই বাড়ি থেকে মেদিনীপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন। কাকা সুশান্ত ভারতী বলেন,‘‘শুভদীপ একটি ভাড়া করা গাড়িতে খড়্গপুর আসছিল। সেখান থেকে তারকেশ্বরে বাড়ি ফিরত। সব শেষ হয়ে গেল আমাদের।’’
সহকর্মীরা জানাচ্ছেন, নিজের ডিউটি ঠিক করতেন শুভদীপ। ফেসবুকে সাহসী কথা লিখতেন। গত ৯ অগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সময় তাঁর ফেসবুক পোস্ট ঘিরে আলোচনা শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর সভার জন্য বাস তুলে নেওয়ার প্রসঙ্গে তিনি কড়া সমালোচনা করেছিলেন।
সোমবার আদিবাসী সংগঠনের অবরোধ নিয়ে ফেসবুকে সরব হন শুভদীপ। ‘নৈরাজ্যের চরম রূপ’ কটাক্ষ করে তিনি লেখেন এমন অবরোধের ফলে সাধারণ মানুষ, চিকিত্সক, স্বাস্থ্যকর্মীরা
আটকে পড়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Accident Bandh Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE