Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সমীক্ষা থেকে তথ্যপঞ্জি

লাল-হলুদ কার্ডে খোঁজ ডায়াবেটিসের

লাল মানে আক্রান্ত। হলুদ মানে ঝুঁকি। আর সবুজ মানে নিরাপদ। আর তিন কার্ডেই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গ্রামবাসীদের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। শুধু তাই নয়, ওই গ্রামে কত জনের লাল কার্ড, কত জনের হলুদ আর কত জনের সবুজ — সেই নিরিখেই তৈরি হচ্ছে ডায়াবেটিসের তথ্যপঞ্জি। রাজ্যে এই প্রথম বারের জন্য।

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৬ ০৪:২৯
Share: Save:

লাল মানে আক্রান্ত। হলুদ মানে ঝুঁকি। আর সবুজ মানে নিরাপদ। আর তিন কার্ডেই ভবিষ্যৎ সম্পর্কে গ্রামবাসীদের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। শুধু তাই নয়, ওই গ্রামে কত জনের লাল কার্ড, কত জনের হলুদ আর কত জনের সবুজ — সেই নিরিখেই তৈরি হচ্ছে ডায়াবেটিসের তথ্যপঞ্জি। রাজ্যে এই প্রথম বারের জন্য।

প্রকল্পের পোশাকি নাম ‘কম্প্রিহেনসিভ অ্যাকশন ফর মেটাবলিক হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিইং’। মূলত এসএসকেএম হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি এবং এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের কয়েক জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উদ্যোগে এই প্রকল্প শুরু হয়েছে বীরভূম জেলায়। উদ্দেশ্য, এক একটা গ্রাম ধরে তথ্যপঞ্জি তৈরি করা। তার পরে দেখা হবে ডায়াবেটিসের কারণ কী। রোগটা বংশানুক্রমিক নাকি পেশাগত। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক-গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ডায়াবেটিসের তথ্যপঞ্জি ও তার কারণ নির্দিষ্ট হলে এই রোগের ভবিষ্যৎ মহামারী ঠেকানো যাবে।

বীরভূমের ন’টি ব্লকে এক লক্ষ মানুষের উপরে প্রাথমিক সমীক্ষা শেষ হয়েছে। তাতে অন্তত ১৮ শতাংশ মানুষ লাল কার্ড পেয়েছেন। অর্থাৎ ওই সব মানুষ ইতিমধ্যেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর ১২ শতাংশ এমন মানুষ রয়েছেন যাঁরা যে কোনও সময়ে লালকার্ড পেতে পারেন। খেটে খাওয়া মানুষগুলির এত জনের শরীরে যে ওই রোগ লুকিয়ে রয়েছে, তা এত দিন অজানাই ছিল।

হঠাৎ করে এমন একটা সমীক্ষা শুরু করতে হল কেন?

সমীক্ষকদের দাবি, একটা সময় পর্যন্ত এ দেশে ৬৪ শতাংশ মৃত্যুর কারণই ছিল সংক্রামক অসুখ। কিন্তু এখন অসংক্রামক অসুখেই বেশি মৃত্যু হচ্ছে। ওই সব রোগের মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, এমনকী ক্যানসারও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডায়াবেটিসের সঙ্গে অনেকগুলি বড় অসুখেরই যোগ রয়েছে। তাই ডায়াবেটিসকে প্রতিহত করতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক ২০১৩ সাল থেকে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর পরেই বীরভূমের বিভিন্ন ব্লকে এক লক্ষ মানুষের উপরে ডায়াবেটিস সমীক্ষা শুরু হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন লিভার ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ওই জেলাতেই তখন লিভার সংক্রান্ত অসুখের তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছিল। যোগ হয় ডায়াবেটিসও।

লিভার ফাউন্ডেশনের প্রকল্প অধিকর্তা পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বহু ক্ষেত্রেই দেখা যায়, একই লোকের লিভারের অসুখ এবং ডায়াবেটিস রয়েছে। আমাদের রাজ্যে ডায়াবেটিসের উপরে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এখনও নির্দিষ্ট কোনও তথ্যই নেই। সেই অভাববোধ থেকেই কাজটা শুরু।’’ গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবক এবং গ্রামে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ কিছু তরুণকে প্রশিক্ষণ দিয়ে এই তথ্য সংগ্রহের কাজে নামানো হয়। তবে অনুদান ছাড়া এই কাজ যে বেশি দূর এগনো যাওয়া সম্ভব নয়, তাঁরা স্বীকার করেছেন সে কথাও।

এই সমীক্ষা চালিয়ে লাভটা কী হবে? এসএসকেএমের গ্যাসট্রোএন্টেরোলজি বিভাগের চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘গ্রামীণ জীবনেও এখন পরিশ্রম কমছে। মদ-সিগারেটের নেশা বাড়ছে। তাঁরাও লিভারের অসুখ বা ডায়াবেটিসের মতো বে ‘লাইফস্টাইল ডিজিজ’-এ আক্রান্ত হচ্ছেন। এ নিয়ে সামগ্রিক তথ্য না থাকলে রোগ প্রতিরোধের জন্য কোনও পদক্ষেপই করা সম্ভব নয়।’’

সুজয়বাবু বলেন, ‘‘টানা তিন বছর ধরে ডায়াবেটিস নিয়ে এই কাজ চলেছে। এর পরে আবার পরীক্ষা হবে। জানা যাবে, কত জন হলুদ থেকে লাল কার্ডের দিকে এগিয়েছেন। কত জনই বা সবুজে উত্তীর্ণ হয়েছেন। লাল কার্ডের ক্ষেত্রে জেলার স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ চলছে। ওঁরাই পরীক্ষা করবেন। তার পরে বোঝা যাবে কত জন ভাল আছেন, কত জনের অবস্থা খারাপ হয়েছে, কত জনই বা মারা গেছেন।’’

অর্থাৎ এ ভাবেই ডায়াবেটিসের মতো নিঃশব্দ ঘাতকের সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার তৈরি হবে রাজ্যে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বীরভূমের এই মডেল সফল হলে ভবিষ্যতে সরকারি কর্মসূচির অঙ্গ হিসেবেও একে ভাবা হতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Color card diabetes
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE