কুকুরের ছবি দেওয়া সেই অ্যাডমিট কার্ড। —নিজস্ব চিত্র।
গোঁফওয়ালা পুরুষের কার্ডে ঘোমটা টানা মহিলার ছবি, আধার কিংবা ভোটার পরিচয়পত্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ বার ছবি বিভ্রাট পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ডে। তা-ও আবার যে সে বিভ্রাট নয়, ছাত্রের জায়গায় একেবারে কুকুরের ছবি!
আইটিআই-এর প্রবেশিকা পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড শনিবার ডাউনলোড করেই চমকে উঠেছিলেন গোয়ালতোড়ের সৌম্যদীপ মাহাতো। আজ, রবিবার রাজ্য জুড়েই এই পরীক্ষা রয়েছে। পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৩ হাজার। অনলাইনে ফর্ম পূরণ করেছিলেন গোয়ালতোড়ের জিরাপাড়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা সৌম্যদীপ। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘স্থানীয় সাইবার কাফেতে গিয়ে অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতেই চমকে উঠি। আমার নাম ঠিক রয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রের জায়গায় লেখা, ঝাড়গ্রাম ননীবালা বয়েজ হাইস্কুল। কিন্তু ছবির জায়গায় আমার বদলে কুকুরের মুখ।’’
এমন অ্যাডমিট কার্ড পেয়ে গোড়ায় খানিকটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এ বছরই উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ সৌম্যদীপ। ভেবেছিলেন, পরীক্ষাটাই হয়তো আর দেওয়া হবে না। তবে আইটিআই-এর মেদিনীপুর জোনের নোডাল অফিসার তথা মেদিনীপুর আইটিআই কলেজের অধ্যক্ষ প্রশান্ত অধিকারী বলেন, “ওই পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা দিতে অসুবিধা হবে না। ওই অ্যাডমিট কার্ড নিয়েই তিনি পরীক্ষায় বসতে পারবেন।’’
সৌম্যদীপ মাহাতো
মাস দেড়েক আগে জম্মু-কাশ্মীরেও প্রায় একই রকম একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে পলিটেকনিক ডিপ্লোমার প্রবেশিকা পরীক্ষায় এক আবেদনকারীর ছবির জায়গায় আস্ত একটি গরুর ছবি দিয়ে অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছিল। নামের জায়গাতেও ছিল গরুর নাম। সেখানে অবশ্য কর্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছিলেন, কেউ ইচ্ছে করেই আবেদনের সময় গরুর ছবি দিয়েছিল।
সৌম্যদীপ কিন্তু নিজের ছবিই সই করে ফর্ম পূরণের সময় আপলোড করেছিলেন বলে জানিয়েছেন। তার পরেও কুকুরের ছবি এল কী করে?
আইটিআই-এর মেদিনীপুর জোনের নোডাল অফিসার প্রশান্তবাবুর জবাব, ‘‘কেন এমন হল বলতে পারব না।” ঘটনার কোনও ব্যাখ্যা খুঁজে পাচ্ছেন না রাজ্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ পর্ষদের কর্তারাও। পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে, আবেদনকারী ফর্ম পূরণের সময় যে ছবি দেন, সেটিই স্ক্যান করে অ্যাডমিট কার্ডে দেওয়া হয়। ফলে, ভুল হওয়ার কথা নয়। কিন্তু ভুল তো হয়েছেই এবং তা কী করে সকলের নজর এড়িয়ে গেল, সেটাই প্রশ্ন।
ঘটনাটির দায় এড়িয়েছেন রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের তরফে ত্রুটি হলে আরও অনেকের ক্ষেত্রেই হত। যে সংস্থা অ্যাডমিট কার্ড তৈরির কাজ করেছে, তারা জানিয়েছে কোনও ত্রুটি হয়নি।’’ মন্ত্রীর ব্যাখ্যা, অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোডের পরে কেউ সুপার ইমপোজ করে ওই কুকুরের ছবি বসাতে পারে। আসলে খবরের কাগজে নাম তুলতে অনেকেই তো অনেক কিছু করে। মন্ত্রীর এই ব্যাখ্যা জেনে হতবাক বিপিএল পরিবারের ছেলে সৌম্যদীপ। তিনি বলেন, ‘‘বাবা অন্যের জমিতে মজুরি খাটেন। আমিও সাইকেল গ্যারাজে কাজ করি। আইটিআইয়ের পড়া শেষে একটা কাজ পেলে আমাদের পরিবারটা বাঁচবে। আমি কেন এমন কিছু করতে যাব!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy