Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

উৎকোচ দেবেন না, হোর্ডিং ঝোলাবে পুরসভা

আগামী বছরই কলকাতা পুরসভার ভোট। সে কথা ভেবেই এই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হচ্ছে বলে মত শাসক দলেরই একাধিক নেতার। 

ঘুষ না দেওয়ার জন্য হোর্ডিং ঝোলাবে পুরসভা।

ঘুষ না দেওয়ার জন্য হোর্ডিং ঝোলাবে পুরসভা।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৯ ০৩:১৫
Share: Save:

ঘুষ নিয়ে কাজ করা বন্ধ করতে এ বার রাস্তায় হোর্ডিং দেবে কলকাতা পুরসভা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই কাটমানি এবং তোলাবাজির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সম্প্রতি কাউন্সিলরদের বৈঠকে তিনি বলে দিয়েছেন— যে যেখানে পরিষেবার বিনিময়ে ঘুষ নিয়েছে, সেই টাকা জনতাকে ফেরত দিক। টাকা ফেরতের প্রক্রিয়া নিয়ে অবশ্য বিতর্ক বেধেছে। বহু জায়গায় দেওয়া টাকা ফেরত চেয়ে তৃণমূলের নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভও বাড়ছে।

এই অবস্থায় বৃহস্পতিবার জরুরি বৈঠকে কলকাতা পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাদের তরফে রাস্তায় রাস্তায় হোর্ডিং দিয়ে বলা হবে, ‘পুর-পরিষেবা পেতে উৎকোচ দেবেন না। কেউ উৎকোচ চাইলে প্রতিবাদ করুন। কলকাতা পুরসভার ভিজিল্যান্সে ফোন করুন।’ দিন কয়েকের মধ্যেই হোর্ডিং, ফ্লেক্স ছড়িয়ে পড়বে শহর জুড়ে। বিজ্ঞাপনে পুরসভার ভিজিল্যান্স দফতরের দু’টি ফোন নম্বরও থাকবে।

এ দিনের বৈঠকে মেয়র ছাড়াও ছিলেন পুর কমিশনার-সহ কয়েক জন পদস্থ কর্তা। সদ্য-সমাপ্ত লোকসভা ভোটের ফলাফলে কলকাতা পুরসভার ৪৭টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আগামী বছরই কলকাতা পুরসভার ভোট। সে কথা ভেবেই এই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হচ্ছে বলে মত শাসক দলেরই একাধিক নেতার।

রাজ্যের অন্য শহর বা গ্রামের মতো না হলেও কলকাতা শহরে পরিষেবার বিনিময়ে উৎকোচের অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যায়। তাতে কাউন্সিলর, পুর অফিসার থেকে স্থানীয় রাজনৈতিক দাদা-দিদিদের একাংশের নামও ওঠে। কিন্তু এত দিন এ নিয়ে পুরকর্তারা সে ভাবে মাথা ঘামাননি। মুখ্যমন্ত্রী কাটমানির কথা তোলায় নড়ে বসেছেন তাঁরা। যদিও এখানে কাটমানির চেয়ে সরাসরি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগই বেশি।

পুরসভার এক আধিকারিক জানান, সরকারি প্রকল্পের মধ্যে কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, রূপশ্রী, আমার বাড়ি, সমব্যথী, বিধবা ভাতা প্রকল্প রয়েছে। রূপশ্রী প্রকল্পের ক্ষেত্রে সরাসরি কাউন্সিলরদের দেওয়া তালিকা মতো কাজ হয়। ওই প্রকল্পে পাত্রীকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয় সরকার। সেই টাকা পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ নেওয়ার প্রবণতা থাকতে পারে বলে ওই আধিকারিকের মত। বিধবা ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে একাধিক কাউন্সিলরের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ পুর প্রশাসন। তবে ওয়াকিবহাল মহলের মত, ঘুষ নেওয়ার সব চেয়ে বড় ক্ষেত্রটি হল, জলের লাইন, নিকাশির লাইন, লাইসেন্স ও বাড়ির নকশা অনুমোদনের কাজ। এ সবই আবার বেআইনি ভাবেও পাইয়ে দেওয়ার কারবার চলে। যা থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা পকেটস্থ করে থাকেন এক শ্রেণির কাউন্সিলর, নেতা-নেত্রী, পুর অফিসার এবং পুলিশ। এ বার সেই ‘ধান্দা’-ই বন্ধ করতে চায় প্রশাসন।

বৈঠকে ঠিক হয়েছে, বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে একটাই বার্তা। মুখ্যমন্ত্রী স্বচ্ছ প্রশাসন চান। তাই উৎকোচের প্রতিবাদ করুন। পুর পরিষেবা পাওয়াটা আপনার অধিকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Cut Money Hoarding
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE