Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হাল্কা হচ্ছে প্রণামী বাক্সও

নোট বাতিলের প্রভাব পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন মন্দিরেও। পাঁচশো, হাজারের নোট যে প্রণামীর বাক্সে একেবারে পড়ছে না, তেমনটা নয়। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে দানের হার কমতির দিকেই। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।নোট বাতিলের প্রভাব পড়েছে রাজ্যের বিভিন্ন মন্দিরেও। পাঁচশো, হাজারের নোট যে প্রণামীর বাক্সে একেবারে পড়ছে না, তেমনটা নয়। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে দানের হার কমতির দিকেই। খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

ভিড় নেই প্রণামী দেওয়ার। তারকেশ্বর মন্দিরে বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

ভিড় নেই প্রণামী দেওয়ার। তারকেশ্বর মন্দিরে বৃহস্পতিবার ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে।

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share: Save:

বাজারে বাতিল, তবু..

৫০০ টাকার নোট এখনও কালীঘাটের প্রণামীর থালায় পড়ছে। নোট বাতিলের পরে প্রণামীতে অবশ্য তেমন হেরফের হয়নি। আগের মতোই দৈনিক গ়ড়ে প্রায় ১৫ হাজার। ২০১৩ সালের হাইকোর্টের নির্দেশে প্রতি রাতে সিসিটিভির নজরদারিতে প্রণামী গোনা হয়। থাকেন জেলাশাসকের প্রতিনিধি, স্থানীয় থানার অফিসার ও মন্দির কমিটির প্রতিনিধি। প্রণামীর টাকা দু’ভাগ হয়। এক ভাগ সেবায়েতরা পান। মন্দির কমিটির ভাগের টাকা রোজ ব্যাঙ্কে জমা পড়ে।

৮ নভেম্বরের পর লেক কালীবাড়ি মন্দির কর্তৃপক্ষ বাতিল নোট প্রণামীর বাক্সে ফেলতে বারণ করেছিলেন। তার পরেও পড়েছে বেশ কিছু। পাঁচশো টাকার সেই সব নোট ব্যাঙ্কে বদলানো হয়েছে। মন্দিরের সেবায়েত নিতাইচন্দ্র বসু জানান, আগে দৈনিক হাজার দুয়েক টাকা প্রণামী পড়ত। গত এক সপ্তাহ ধরে মাত্র শ’আটেক টাকা মিলছে। নতুন মন্দির নির্মাণের অনুদানেও পাঁচশো-হাজারের নোট দিতে নিষেধ করা হয়েছে।

বেশ কয়েকটি ৫০০ টাকার নোট তারকেশ্বর মন্দিরের প্রণামীর বাক্সেও। তারকেশ্বর এস্টেটের ম্যানেজার নেপাল ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘পাঁচশো এবং হাজারের নোট নেওয়া হচ্ছে না। কিন্তু প্রণামী বাক্সে কেউ দিয়ে গেলে আমাদের কিছু করার নেই।’’ উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের কানকির রামদেব মন্দির কর্তৃপক্ষও প্রণামীতে পাঁচশো-হাজারের নোট দিতে
বারণ করেছেন।

দানে ভাটা

গত ক’দিনে তারাপীঠের মন্দিরে প্রণামী কমেছে, ভক্তের সংখ্যাও। এক সেবায়েতের কথায়, ‘‘মন্দিরের চেয়ে তো এখন ব্যাঙ্কের লাইনে লোক বেশি!’’ সেবায়েত সমিতির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় জানান, ভক্ত সমাগমের উপরে সেবায়েত, পালাদার, ডালার দোকানিদের আয় নির্ভর করে। সবারই আয় কমেছে।

কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের সেবায়েত মিঠু মুখোপাধ্যায়ের দাবি, গত এক সপ্তাহে প্রণামী ৪০ শতাংশ কমে গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচশো-হাজারের নোট কখনওই বেশি মিলত না। এখন খুচরো টাকাও বাক্সে কম পড়ছে।’’ প্রধান সেবায়েত দিলীপ দেওঘরিয়া জানান, মঙ্গল, শনি, রবিবার ভিড় বেশি হয়। গত এক সপ্তাহে ওই দিনগুলিতেও ভক্তের সংখ্যা প্রায় অর্ধেক হয়েছে। নলহাটির নলাটেশ্বরী মন্দির কমিটির সভাপতি শুভব্রত সিংহ জানান, ভক্ত-প্রণামী দুই-ই কমেছে। নবদ্বীপ মহাপ্রভু মন্দিরে ৮ নভেম্বরের আগে দৈনিক গড়ে পড়ত বারোশো থেকে দেড় হাজার খুচরো প্রণামী। তা নেমেছে পাঁচশোয়। বিষ্ণুপ্রিয়া সেবা সমিতির সম্পাদক জয়ন্ত গোস্বামী বলেন, ‘‘প্রণামী কমায় বাজার ও মুদিখানায় ধার বাড়ছে।’’ চৈতন্য জন্মস্থান আশ্রমেও অর্ধেক হয়ে গিয়েছে খুচরো টাকা। একই হাল বলদেব জিউ মন্দিরেও। প্রণামীর টাকা দৈনন্দিন খরচে ব্যবহার করতে হচ্ছে। প্রণামী কমেছে দেবানন্দ গৌড়ীয় মঠেও।

বাক্স ভরেনি

কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরের গত বছর রাস উৎসবে ন’টি প্রণামীর বাক্স ছিল। প্রণামীর পরিমাণ দেখে এ বছর দশটি বাক্স রেখেছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। রাস উৎসব শুরুর পরে চার দিন কেটে গেলেও একটিও বাক্সও ভরেনি! বাণেশ্বর শিব মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরেও একই হাল। তুফানগঞ্জের রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সহ-সভাপতি স্বপন আইচ বলেন, “নোট বাতিল সমস্যার বড় নোট প্রণামীর বাক্সে পড়ছে না।”

দিতে পারি কিন্তু..

রায়গঞ্জের মহাত্মা গাঁধী রোডের একটি শনি মন্দিরে সপ্তাহে ৪০০ থেকে ৬০০ টাকার খুচরো জমা পড়ত। মন্দির কমিটির সভাপতি সৌমেন সরকার জানান, গত শুক্রবার মাত্র ২৭০ টাকা মিলেছে। ‘‘মন্দিরের প্রণামী ব্যাঙ্কে জমা দিলে সাপ্তাহিক পুজোটুকুও হবে না,’’ বলছেন তিনি। একান্ন পীঠের অন্যতম বোলপুর মহকুমার কঙ্কালীতলা মন্দিরের প্রণামী প্রতি ১৫ দিন অন্তর ব্যাঙ্কে জমা পড়ে। ‘শ্রী শ্রী কঙ্কালিমাতা ঠাকুরানী সেবাইত উন্নয়ন ট্রাস্ট’-এর সম্পাদক নারায়ণ চৌধুরী এবং সেবায়েত জয়ন্ত চৌধুরী জানান, প্রণামী নিঃসন্দেহে কমেছে।

রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় থেকে কসবা মোড় পর্যন্ত ৮০টি কালী, শিব, হনুমান, শনি, শীতলা ও দুর্গার মন্দির। এখনও কোনও মন্দির কর্তৃপক্ষ প্রণামীর টাকা ব্যাঙ্কে জমা করেননি। রায়গঞ্জের কলেজপাড়া কালীমন্দিরের সদস্য পার্থ দাস বলেন, মন্দিরের প্রণামী বাক্স মাসের ২ তারিখে খোলা হয়। মাসে ১২০০-১৫০০ টাকা জমা পড়ে। বেশির ভাগ ৫ ও ১০ টাকার কয়েন। ডিসেম্বরের প্রণামী ব্যাঙ্কে জমা দেওয়ার প্রশ্ন নেই। কারণ, খুচরোর অভাব। প্রণামীর টাকা দিয়েই পুজোর খরচ ও পুরোহিতের দক্ষিণা মেটাতে হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Demonetisation Temples Donation box
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE