Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বন্দরে উৎখাত, রিফাইনারি আবাসনে বহাল তবিয়তেই

সোমবার রাতে হলদিয়া বন্দর আবাসনের অফিসার পাড়ায় ক্লাস্টার ফোরে অন্তত ২০টি গাছের পাখির বাসা নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই আবাসনের পাশেই থাকা হলদিয়া রিফাইনারির আবাসনে দেখা গিয়েছে অন্য চিত্র। এই মুহূর্তে রিফাইনারি আবাসনের বিভিন্ন গাছে কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি রয়েছে। এদের বেশিরভাগরই বাচ্চাও রয়েছে।

 রিফাইনারি আবাসন চত্বরে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। নিজস্ব চিত্র

 রিফাইনারি আবাসন চত্বরে নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে। নিজস্ব চিত্র

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৮ ০১:৩৪
Share: Save:

মাঝে কয়েকশো মিটারের ব্যবধান। হলদি নদীর তীরে রয়েছে দুই সংস্থার আবাসন। এক আবাসন চত্বরের গাছ থেকে রাতের অন্ধকারে ভেঙে দেওয়া হয়েছে পরিযায়ী পাখিদের বাসা। অন্য আবাসনে বছরের পর বছর নির্বিঘ্নেই ‘ঘর সংসার’ করছে পাখিরা।

সোমবার রাতে হলদিয়া বন্দর আবাসনের অফিসার পাড়ায় ক্লাস্টার ফোরে অন্তত ২০টি গাছের পাখির বাসা নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই আবাসনের পাশেই থাকা হলদিয়া রিফাইনারির আবাসনে দেখা গিয়েছে অন্য চিত্র। এই মুহূর্তে রিফাইনারি আবাসনের বিভিন্ন গাছে কয়েক হাজার পরিযায়ী পাখি রয়েছে। এদের বেশিরভাগরই বাচ্চাও রয়েছে।

সেখানের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কোনও কোনও গাছে এত পাখি থাকে যে, গোটা গাছকে সাদা ফুলের মত মনে হয়। আবাসনের বাসিন্দা সঙ্গীতা দাস নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘গ্রীষ্মের শুরুতে ওরা আসে। বর্ষায় বাসা বানায়, ডিম পাড়ে। সন্তান বড় করে শীতের শুরুতেই চলে যায়। নাইট হেরন, কালো মাথা বক-সহ নানা জাতের বক আসে এখানে। জানলা বা ছাদে উঠলে হাতের নাগালের মধ্যে ওই পাখিদের ছানাদের বড় হয়ে ওঠা, খুনসুটি দেখার মত।’’

আর এক বাসিন্দা তথা হলদিয়া রিফাইনারির অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের আবাসনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে এই ভিন দেশি অতিথিরা। খুব কাছ থেকে ওদের এবং পাখির ছানাদের দেখতে আমাদের বাড়িতে এই সময় অনেকেই আসেন।’’ ওই ভিন দেশি ‘অতিথি’দের তাড়িয়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই বলে জানিয়েছেন আবাসনের বহু বাসিন্দা। বরং পাখিদের প্রজননকালে যাতে বিঘ্ন না হয়, সেদিকে তাঁরা নজর রাখেন। বর্তমানে হলদিয়া রিফাইনারি এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভের সামনে দু’টি কাঁঠাল গাছে পরিযায়ীরা বাসা করেছে।

হলদিয়ায় ওই পরিযায়ী পাখি আসার পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে জানাচ্ছেন পক্ষীবিশারদেরা। যেমন, নয়াচরের বিস্তীর্ণ এলাকায় মাছের ভেড়ি রয়েছে। সেখানে মাছ মিললেও চোরা শিকারিদের উৎপাত এবং ভেড়ি মালিকদের অত্যাচারে পাখির দল হলদিতেই বাসা করে। আবার হলদি নদীর তীরে বড় বড় জারুল, কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া গাছে রয়েছে। সেই সব গাছ পাখির বাসার জন্য আদর্শ। এক একটি গাছে কমপক্ষে ৩০টি বাসা থাকে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়েরা। এছাড়া, বালুঘাটা, হাতিবেড়্যা রেল স্টেশন সংলগ্ন ঝিলেও পাখিরা বাসা করে।

রাতের অন্ধকারে পাখি তাড়ানোয় ক্ষুণ্ণ হলদিয়া বন্দরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রিফাইনারির আবাসনে পাখি রয়েছে দেখি। রিফাইনারির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টরের বাংলোয় একটি গাছেও শ’য়ে শ’য়ে পাখি বসে। সেখানে তো তাদের থাকা নিয়ে আপত্তি হয় না? আমাদের আবাসনের পাখিতেই যত আপত্তি!’’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আধিকারিকের বক্তব্য, ‘‘পাখি বা তাদের বিষ্ঠা থেকে যদি রোগের ভয় থাকে, তা নিয়ে আবাসনের সকলের সঙ্গে আলোচনা করতে পারতেন কর্তৃপক্ষ। দমকল পাঠিয়ে রাত ১১টার সময় এ ভাবে পাখি তাড়ানো একেবারেই উচিত হয়নি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Port Dock Bird Nest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE