নবদম্পতির সঙ্গে অজয় শাসমল। দুর্গাপুরে। ছবি: বিকাশ মশান
ছেলের মৃত্যুর পরে, অল্পবয়সি পুত্রবধূ আর নাতির ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় ঘুরত প্রৌঢ়ের। সম্বন্ধ করে সেই পুত্রবধূর বিয়ে দিলেন দুর্গাপুরের ডিপিএল কলোনির অজয় শাসমল। বলছেন, ‘‘এটা আমার কর্তব্য ছিল।’’
ডিপিএল কলোনির বণিক মোড়ের অজয়বাবু মুদির দোকান চালান। মিনিবাসও রয়েছে। বছর সাতেক আগে তাঁর ছোট ছেলে গৌতমের সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরের দোবাই গ্রামের দেবশ্রী মাইতির বিয়ে হয়। তাঁদের একটি ছেলেও হয়। বিয়ের বছর তিনেকের মাথায় গৌতমের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন দেবশ্রী।
বছর ছাপ্পানর অজয়বাবু বলেন, ‘‘আমার, আমার বৌয়ের বয়স হচ্ছে। তাই আমাদের পরে, দেবশ্রী আর নাতির কী হবে, সে চিন্তা হত। শেষে ঠিক করি, দেবশ্রীর বিয়ে দেব।’’ উপযুক্ত পাত্রের খোঁজ শুরু হয়। যোগাযোগ হয় দুর্গাপুরেরই করঙ্গপাড়ার বাসিন্দা ঘুরান লায়েকের সঙ্গে। তাঁর ছেলে সন্তোষ গাড়ি চালান। সন্তোষের সঙ্গে দেবশ্রীর বিয়ের
প্রস্তাব দেন অজয়বাবু। সন্তোষ বলেন, ‘‘গোটা ব্যাপারটা শুনে রাজি হয়ে যাই।’’ দু’পক্ষের যোগাযোগ বাড়ে। বিয়েতে রাজি হন দেবশ্রীও। তিনি বলেন, ‘‘বাবা (অজয়বাবু) যা করবেন, আমাদের ভালর জন্যই করবেন, এ বিশ্বাস ছিল।’’
বুধবার পিয়ালা কালীবাড়িতে চার হাত এক হয়। পুরোহিত উৎপল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন একটা বিয়ে দিয়ে গর্ববোধ করছি।’’ অজয়বাবুর প্রতিবেশী ঝুনু মাজি, মাধবী বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘এই বিয়েতে থাকতে পেরে খুশি হয়েছি।’’ এসেছিলেন দেবশ্রীর মা মিত্রাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘মেয়ের সব দায়িত্ব বেয়াইমশাইকে দিয়েছিলাম। উনিই মেয়েকে সম্প্রদান করেছেন।’’
বছর পাঁচেকের নাতিকে সব সময় কাছে পাবেন না, এ কথা ভেবে কিছুটা মন খারাপ অজয়বাবুর। তবে তিনি জানান, দেবশ্রীর নতুন শ্বশুরবাড়ি দূরে নয়। ইচ্ছে হলেই গিয়ে দেখে আসবেন, এটুকুই সান্ত্বনা। বিয়ে শেষে প্রৌঢ় বলেন, ‘‘হাল্কা লাগছে। ওরা এ বার সুখে সংসার করুক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy