Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রায়ে বাতিল ই-মনোনয়ন

তবে মনোনয়নের সময়সীমা এক বার বাড়িয়ে ফের তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত এখনও কাঁটা হয়ে রয়েছে। ৯ এপ্রিল কমিশন মনোনয়ন জমার সময়সীমা বাড়িয়ে ১০ এপ্রিল করে। পরে তা প্রত্যাহার করলেও তার পিছনে শাসকের চাপ ছিল বলে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ ওঠে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, পঞ্চায়েতে হিংসা হচ্ছে বলেই কমিশন মনোনয়নের সময়সীমা বাড়িয়েছিল।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি  ও কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫৮
Share: Save:

জেলাশাসক বা মহকুমা শাসকের অফিসে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে, বিরোধীদের এই অভিযোগ শুনে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাঙড়ের কয়েক জন প্রার্থীকে হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়ন পত্র পাঠানোর অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের সেই রায়কে আজ খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। তবে ভাঙড়ের নির্বাচনী ফলাফলে তার প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বেঞ্চের রায়, সংবিধানের ২৪৩-কে অনুচ্ছেদে পঞ্চায়েত নির্বাচন আইনের ধারা ও বিধিতে ভোট পরিচালনার বিধি রয়েছে। তাতে মনোনয়ন জমার পদ্ধতিতে কোথাও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা নেই। এই আইনে কোনও সংস্কার করতে হলে, আগে আইন সংশোধন করতে হবে। যেখানে নির্বাচনী বিধি রয়েছে, সেখানে হাইকোর্টের এই নির্দেশ দেওয়া উচিত হয়নি।প্রবীণ আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেবের ব্যাখ্যা, ‘‘এই রায়ের ফলে কোনও প্রার্থী যদি ই-মনোনয়ন জমা দিয়ে ভোটে লড়ে জিতে থাকেন, তা-ও খারিজ হয়ে যাবে।’’

এর পরেই ভাঙড় জমি রক্ষা কমিটির ৯ জন প্রার্থীর হোয়াটসঅ্যাপে মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। এই ৯ জনের মধ্যে ৫ জন নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। তবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে বক্তব্য, জেলাশাসক ওই ৯ জনের মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে হোয়াটসঅ্যাপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি। ফলে সেগুলি ই-মনোনয়নের আওতায় পড়ছে না। ভাঙড় জমি রক্ষা কমিটির তরফে যাঁরা প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, তাঁরা মনোনয়ন জমা পড়া নিশ্চিত করতে কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে মান্যতা দিয়েছিল কমিশন। এটি ই-মনোনয়ন নয় বলে দাবি কমিশনের।

আরও পড়ুন: ‘জয় গণতন্ত্রে’র, স্বস্তি মমতার

তবে মনোনয়নের সময়সীমা এক বার বাড়িয়ে ফের তা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত এখনও কাঁটা হয়ে রয়েছে। ৯ এপ্রিল কমিশন মনোনয়ন জমার সময়সীমা বাড়িয়ে ১০ এপ্রিল করে। পরে তা প্রত্যাহার করলেও তার পিছনে শাসকের চাপ ছিল বলে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ ওঠে। সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, পঞ্চায়েতে হিংসা হচ্ছে বলেই কমিশন মনোনয়নের সময়সীমা বাড়িয়েছিল।

কিন্তু কমিশনকে ই-মনোনয়ন গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্ট ভুল করেছিল বলেই সুপ্রিম কোর্টের রায়। যুক্তি হল, ২০০০ সালের তথ্যপ্রযুক্তি আইন রাজ্য নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে খাটে না। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন করতেই যে হাইকোর্ট ই-মনোনয়নে ছাড়পত্র দিয়েছিল, তা মেনে নিয়েও সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের যুক্তি— হাইকোর্ট ধরে নিয়েছিল, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ধারা রাজ্য নির্বাচন আইনেও প্রযোজ্য। কিন্তু তত দিনে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল। মনোনয়নের শেষ দিনও পার হয়ে গিয়েছিল। নির্বাচনী প্রক্রিয়া শুরু করার পরে তাতে নাক না-গলিয়ে আদালতের সংযম বজায় রাখা উচিত ছিল। সংবিধানের ২৪৩-ও অনুচ্ছেদে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় আদালতের হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে যে বিধান রয়েছে, হাইকোর্টের রায় তারও বিরোধী। ফলে হাইকোর্টের রায়কে খারিজ করে দিতেই হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE