সারদা কেলেঙ্কারির তদন্ত নিয়ে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির নড়াচড়া ফের নজর কাড়তে শুরু করেছে। তৃণমূলের তিন সাংসদের পরে এ বার তলব করা হল মুখ্যমন্ত্রীর বিশেষ ঘনিষ্ঠ চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যকে। ইডি সূত্রের খবর, সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরান, মিঠুন চক্রবর্তী, অর্পিতা ঘোষের পরে শুক্রবার শুভাপ্রসন্নকেও তলবি নোটিস পাঠিয়েছে তারা। এর আগে এই শিল্পীকে একাধিক বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ইডি এবং সিবিআই। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাঁর স্ত্রী শিপ্রা ভট্টাচার্যকেও।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অতি ঘনিষ্ঠ হিসেবেই শিল্পী শুভাপ্রসন্ন পরিচিতি ছিলেন। মমতা রেলমন্ত্রী হয়ে তাঁকে রেলের নানা কমিটির মাথায় জায়গা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সারদা তদন্তে জেরার সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর আঁকা ছবির দাম নিয়ে তদন্তকারীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল শুভাপ্রসন্নকে। তার উত্তরে তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের যা বলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর, তা জেনে রুষ্ট হন মমতা। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে শুভাপ্রসন্নের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মুখ্যমন্ত্রীর কোনও অনুষ্ঠানে তাঁকে আর দেখা যায়নি। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য একটি অনুষ্ঠানে শুভাপ্রসন্নর খোঁজখবর নিয়েছিলেন।
কিন্তু শুভাপ্রসন্নকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ কেন? ইডি-র অফিসারেরা বলছেন, সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনকে তিনি যে বৈদ্যুতিন চ্যানেলটি বিক্রি করেছিলেন, তার হিসাবে প্রচুর অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। অনেক কিছুর ব্যাখ্যা চাওয়া হলেও শিল্পী তা এড়িয়ে গিয়েছেন। এই কারণেই শুভাপ্রসন্নকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করতে চান তদন্তকারীরা। শুভাপ্রসন্ন অবশ্য এই জিজ্ঞাসাবাদের নোটিস সম্পর্কে মুখ খোলেননি। ফোন এবং এসএমএস করেও তাঁর কোনও সাড়া মেলেনি।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, সুদীপ্ত সেন জেরায় জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের চাপে শুভাপ্রসন্নর কাছ থেকে ‘দেবকৃপা ব্যাপার’ নামে একটি সংস্থা কিনতে সারদার বহু টাকা ঢালতে হয়েছে তাঁকে। এই সংস্থাটির অধীনেই ছিল একটি চালু না-হওয়া বৈদ্যুতিন সংবাদ চ্যানেল, যার দায়িত্বে ছিলেন তৃণমূল নেতা অর্পিতা ঘোষ ও শঙ্কুদেব পণ্ডা। তদন্তকারীদের কাছে সারদা কর্তা দাবি করেছেন, ওই সংস্থাটি কেনার জন্য তিনি চুক্তিমতো ১৪ কোটি টাকা এবং চুক্তির বাইরে আরও ১০ কোটি টাকা দিয়েছিলেন শুভাপ্রসন্নকে। রাজ্য পুলিশের ‘সিট’-ও তাদের হলফনামায় জানিয়েছিল, ১৪ কোটি টাকাতেই দেবকৃপা হস্তান্তর হয়েছে। কিন্তু শুভাপ্রসন্ন জেরায় বারবার বলেছেন, দেবকৃপা সাড়ে ৬ কোটি টাকায় সুদীপ্তের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল। তদন্তকারীদের কাছে ওই শিল্পী আরও দাবি করেন, এই টাকার মাত্র ৫০ লক্ষ টাকা তিনি পেয়েছিলেন। বাকি টাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল অন্য অংশীদার ও পাওনাদারদের।
ইডি-র অভিযোগ, দু’জনের এই বক্তব্যের ফারাক থেকেই স্পষ্ট হিসাবে বড়সড় অসঙ্গতি রয়েছে। নিজের বক্তব্যের সপক্ষে তথ্যপ্রমাণ জমা দিতে বলা হয়েছিল শুভাকে। তদন্তকারীরা বলছেন, তিনি কিছু কাগজপত্র জমা দিলেও তাতে বিস্তর ফাঁক রয়েছে। শুভাপ্রসন্নর অন্তত ৬৪টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ও মুম্বইয়ে কিছু সম্পত্তির হদিসও মিলেছে। ইডি সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করা হয়েছে। মুম্বই ও রায়চকের দু’টি সম্পত্তিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তদন্তকারীরা বলছেন, ‘দেবকৃপা ব্যাপার’ সংস্থাটি নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। ২০০৬-র ১৪ জুন যখন সংস্থাটি তৈরি হয় তখন তার ঠিকানা দেখানো হয়, সল্টলেকের বিএইচ ১৬৭, যা শুভাপ্রসন্নের বাড়ির ঠিকানা। অথচ তখনও তিনি ওই সংস্থায় যোগই দেননি। তখন যাঁরা ডিরেক্টর ছিলেন, ক’মাসের মধ্যেই সরে যান তাঁরা। ডিরেক্টর হন শুভাপ্রসন্ন ও তাঁর স্ত্রী শিপ্রা। পরে তাঁদের কন্যা জোনাকিও ডিরেক্টর পদে যোগ দেন। ২০১২-র জুলাই-এ সুদীপ্ত দেবকৃপা কিনে নেন। তখন দেবকৃপার অন্য একটি ঠিকানা দেখানো হয়, যেটি আদতে কাবুলিওয়ালাদের ডেরা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy