Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
West bengal news

তোলাবাজি করেই কোটি টাকার সম্পত্তি পিএফ কর্তার

এরকম একদিন দু’দিন নয়। প্রায় তিনবছর ধরে এই তোলাবাজি চালাচ্ছিলেন কলকাতার সহকারি প্রভিডেন্ট কমিশনার রমেশ সিংহ। সেই তদন্তে নেমে, রমেশের সম্পত্তির পরিমান দেখে অবাক এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের(ইডি) গোয়েন্দারা।

বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের(ইডি) গোয়েন্দারা। নিজস্ব চিত্র।

বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশিতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের(ইডি) গোয়েন্দারা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কনকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৮ ১৪:১৫
Share: Save:

পদ্ধতিটা খুব সোজা। প্রথমে মাঝারি মানের কোম্পানিকে ‘টার্গেট’ বানানো। তারপর সেই কোম্পানির মালিককে প্রভিডেন্ট ফান্ড অফিস (ইপিএফও) থেকে চিঠি পাঠানো হবে। সেই চিঠিতে লেখা থাকবে প্রভিডেন্ট ফান্ড নিয়ে হাজারো বেনিয়মের অভিযোগ। চিঠি পেয়েই যখন সেই কোম্পানি প্রভিডেন্ট ফান্ড অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন, তখন সেই কোম্পানি মালিককে সব কিছু ঠিকঠাক করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। বিনিময়ে মোটা টাকা ‘নজরানা’।

এরকম একদিন দু’দিন নয়। প্রায় তিনবছর ধরে এই তোলাবাজি চালাচ্ছিলেন কলকাতার সহকারি প্রভিডেন্ট কমিশনার রমেশ সিংহ। সেই তদন্তে নেমে, রমেশের সম্পত্তির পরিমান দেখে অবাক এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের(ইডি) গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার কলকাতার ইপিএফও অফিস, সহকারি পিএফ কমিশনারের বাড়ি ফ্ল্যাট-সহ যে ছ’টি জায়গায় তল্লাশি শুরু হয়েছিল, সেই তল্লাশি চলে শুক্রবার সকালেও।

আর সেই তল্লাশিতেই সহকারি পিএফ কমিশনার রমেশ সিংহর বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে নগদ দশ লাখ টাকা, জমি ও গয়না মিলিয়ে প্রায় দু’কোটি টাকার সম্পত্তি। এতেই শেষ নয়। রমেশের বাড়ি থেকে পাওয়া গিয়েছে প্রায় এক কোটি টাকার বিভিন্ন কোম্পানির ডিভেঞ্চার ও বন্ডের কাগজ।

আরও পড়ুন: নিরাপত্তা নয়, ভিন‌্ ধর্মী যুগলকে পরিচয় লুকিয়ে রাজ্য ছাড়ার নিদান পুলিশের!

ইডির তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সাত বছর ধরে কলকাতায় কর্মরত রমেশ সিংহ। গোয়েন্দাদের দাবি, এই বিপুল পরিমান সম্পত্তি রমেশ এই তোলাবাজি করেই বানিয়েছে। এক গোয়েন্দা বলেন, “যার মাসে মাইনে এক লাখ টাকার সামান্য বেশি, সে এই বিপুল সম্পত্তি কী ভাবে পেল?”

বেহালার এসএ রায় রোডে বৃহস্পতিবার সকালে ইডির গোয়েন্দারা হানা দেওয়ার সময় সেই বাড়িতে রমেশের মা ছাড়া কেউ ছিলেন না। তাঁকে জেরা করেই জানা যায়, রমেশের স্ত্রীর আরও একটি বাড়ি আছে চারু মার্কেট থানা এলাকায়। সেখানে হানা দিয়েই হদিশ মেলে রমেশের। এক ইডি কর্তার দাবি, মানুষের চোখে ধুলো দিতে নিজের এই সম্পত্তির একটা বড় অংশই নিজের স্ত্রী এবং শ্বশুরবাড়ির লোক জনের নামে কিনে রেখেছেন রমেশ। জেরায় ইডি আধিকারিকদের সামনে রমেশের দাবি, স্ত্রীর সঙ্গে ১০ বছর ধরে বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে তাঁর। গোয়েন্দাদের দাবি, গোটাটাই লোক দেখানো।

আরও পড়ুন: অনার্সে ভর্তির টোপে টাকা আদায়, ধৃত ছাত্র

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, ঘুষ নিতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েন ইপিএফও অফিসের এনফোর্সমেন্ট অফিসারকে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। ধৃত সমীরণ মণ্ডল বাঁশদ্রোণীর একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির কাছ থেকে মোটা টাকা ঘুষ চেয়েছিল অনিয়মের অভিযোগ তুলে। তাঁকে জেরা করেই ইডি গোয়েন্দারা জানতে পেরেছিলেন, সমীরণের মত অধস্তন কর্মীদের কাজে লাগিয়ে ‘তোলাবাজি’র কারবার চালাচ্ছেন এই ইপিএফও কর্তা। ইডির গোয়েন্দারা রমেশের আরও কোনও সম্পত্তি আছে কি না সেই খোঁজ চালাচ্ছে, সঙ্গে এই চক্রে আর কার যোগ আছে সেটাও তাঁরা তদন্ত করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE